যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনের নিন্দা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির

Nirmul_Commity.jpg
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের কঠোর সমালোচনা ও নিন্দা করেছে 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'। 

আজ বৃহস্পতিবার সংগঠনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সই করা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''সম্প্রতিকালে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছে তা আমাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এই প্রতিবেদনে ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলা হয়েছে; 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তম মুসলিম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ তাদের সংবিধানপ্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন না।' এবং 'সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের কারণে জামায়াত প্রার্থীরা দলের নামে নির্বাচন করতে পারছেন না' ইত্যাদি।' 

'জামায়াত সম্পর্কে অত্যন্ত নিন্দনীয় মার্কিন প্রতিবেদন শুধু অসত্য নয়, বাংলাদেশসহ গোটা উপমহাদেশে জামায়াত পরিচালিত জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসকে ইন্ধন জোগাবে বলে আমরা মনে করি।'

জামায়াত একটি গণতন্ত্রবিরোধী ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছে, 'যারা বাংলাদেশের সংবিধান মান্য করে না। এ কারণে বাংলাদেশের উচ্চতর আদালত ২০১৩ সালে এ দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে দলীয় পরিচয়ে জামায়াতের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। সরকার কখনো জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেনি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিভিন্ন রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে ৭১-এর গণহত্যার জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করা হয়েছে। জামায়াত মানবরচিত সংবিধানে বিশ্বাস করে না। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদি আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণে ঘোষিত গণতন্ত্রের সংজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করে ৮০ বছর আগে লিখেছিলেন- 'গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি কুফরি মতবাদ। যারা এসব মতবাদ প্রচার করবে তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে ইত্যাদি।' 

'এ ধরনের গণতন্ত্রবিদ্বেষী ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার জন্য যে ওকালতি করছে তাতে উপমহাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে ইসলামের নামে যাবতীয় সন্ত্রাসের গুরু জামায়াত শুধু অধিকতর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উৎসাহিত হবে না, ভবিষ্যতে আমেরিকার মতো দেশে ৯/১১-এর মতো অসংখ্য সন্ত্রাসী ঘটনায় ইন্ধন জোগাবে।'

২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংক জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়েছে, 'যেখানে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইউএসএইডকে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে- জামায়াত-শিবিরসহ সমমনা দলগুলোকে যেন কোনো রকম প্রশ্রয় দেওয়া না হয়। এতে আরও বলা হয়েছে- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বাধীনতার মূল্য দিতে গিয়ে ৩০ লাখ মৃত্যু, ২ লাখ নারী ধর্ষণ এবং ১ কোটি মানুষের দেশান্তরিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যার অধিকাংশের সঙ্গে জামায়াতের জঙ্গিরা জড়িত।'

'মার্কিন আইনপ্রণেতার এই বিলে আরও বলা হয়েছে- 'বিগত নির্বাচনগুলোতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের হামলার শিকার হয়েছে, যার ফলে নভেম্বর ২০১৩ থেকে জানুয়ারি ২০১৪-এর ভেতর ৪৯৫টি হিন্দু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৫৮৫টি দোকান আক্রান্ত ও লুণ্ঠিত হয়েছে এবং ১৬৯টি মন্দির ধ্বংস হয়েছে।'

'জিম ব্যাংকের এই বিলকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম থিঙ্ক ট্যাঙ্ক 'মিডলইস্ট ফোরাম' বলেছে, জামায়াতে ইসলামী একটি ভয়ঙ্কর প্রভাবশালী গোষ্ঠী, যাদের সন্ত্রাসের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'বিএনপির জোটে থেকে এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রশ্রয় পেয়ে জামায়াত এখনো তাদের আশ্রিত জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।'

এ ছাড়া বলা হয়েছে, 'আমরা গত ৩১ বছর ধরে ৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংবিধানবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার জন্য আন্দোলন করছি। স্টেট ডিপার্টমেন্ট যদি বাংলাদেশসহ মার্কিন জনমত উপেক্ষা করে জামায়াততোষণ নীতিতে অবিচল থাকে তা শুধু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে বিপন্ন করবে না, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ পশ্চিমা দেশসমূহের জাতীয় নিরাপত্তার জনেও সমূহ বিপদ ডেকে আনবে।'

বিবৃতিতে সই করেছেন, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সমাজকর্মী মালেকা খান, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপক পান্না কায়সার, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ঊষাতন তালুকদার, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব.), অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক শিল্পী আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডা. ইকবাল কবীর, সমাজকর্মী সুব্রত চক্রবর্ত্তী, ভূতত্ত্ববিদ মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, সমাজকর্মী শফিকুর রহমান শহীদ, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গাফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, সমাজকর্মী কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক জাতীয় ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, অ্যাডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক, লেখক কলামিস্ট মিথুশিলাক মুর্মু, কলামিস্ট অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লীনা পারভীন, মানবাধিকারকর্মী রহমান খলিলুর, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সাংবাদিক দিলীপ মজুমদার, সমাজকর্মী রাশেদুল ইসলাম, সমাজকর্মী ইস্রাফিল খান বাপ্পি, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল, লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, সমাজকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর প্রমুখ।
 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

3h ago