মৌলভীবাজারে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০০ পরিবার

বুধবার সকালের ঝড়ের পর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও এলাকা। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে ও আজ বুধবার সকালে হঠাৎ বয়ে যাওয়া ঝড়ে ৬ শতাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ঝড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গাছ উপড়ে ও বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে ভেঙে পড়ায় উপজেলাগুলোর বেশ কয়েকটি এলাকা যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কুলাউড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শিমুল আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ করেই ঝড় শুরু হয়। উপজেলার কুলাউড়া, টিলাগাঁও, হাজীপুর, পৃথিমপাসা, জয়চণ্ডী ও রাউতগাঁও ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ঝড়ে বাঁশ ও টিনের তৈরি প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি উপড়ে গেছে।'

এতে দেড় শতাধিক নিম্ন আয়ের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেক বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। ঘর ভেঙে পড়ায় অনেককে এখন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে।

ঝড়ে জেলার ৩ উপজেলার প্রায় ৬ শতাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছবি: সংগৃহীত

টিলাগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ইউনিয়নের বালিয়া, নয়নপুর, শাহপুর ও আমানিপুর গ্রামের মানুষ ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে ১২টি পরিবারের টিন-বাঁশ-মাটির ঘর উপড়ে গেছে বলে খবর পেয়েছি। এছাড়া আরও কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

কুলাউড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান জানান, এই ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডে ঝড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে প্রায় ৫০টি বাড়ি উড়ে গেছে। এসব মানুষকে এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে।

জয়চন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব জানান, ঝড়ে তার এলাকার ১২টি ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে।

কর্মধা ইউনিয়নের ১০-১২টি ঘরের টিনের চালা ঝড়ে উড়ে গেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান।

কুলাউড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শিমুল আলী ডেইলি স্টারকে জানান, 'ঝড়ে যেসব এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে।'

ঝড়
ঘর ভেঙে পড়ায় খোলা আকাশের নিচেরাত কাটাতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে, কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও পতনঊষার ইউনিয়নে ২০টি ঘর সম্পূর্ণ ও অর্ধশতাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। শমশেরনগর বিমান বাহিনী ইউনিট এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। ২৪ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান জানান, এ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ও ১২টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। 

শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, 'আমার ইউনিয়নে ৮টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং আরও কিছু ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।'

ঝড়
ঝড়ে গাছ উপড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মীর গোলাম ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঝড়ে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ লাইনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে লাইন মেরামত কাজ শুরু হয়। এখনো কাজ চলছে।' 

জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে পরিপূর্ণ কিছু জানা যায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।'

মৌলভীবাজারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা শুধু শ্রীমঙ্গলের কালাপুর ইউনিয়নে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েছি। সেখানে সর্বোচ্চ ৭০টি পরিবারের ক্ষতি হয়েছে, ৯৬টি পরিবারের মাঝারি ক্ষতি হয়েছে এবং ৪১৬টি পরিবারের কম ক্ষতি হয়েছে।'

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago