ঈশ্বরদী-রূপপুর রেললাইন উদ্বোধন আগামীকাল
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর রেল স্টেশন ও নবনির্মিত ২৬ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধন করা হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই রেললাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গনভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রেললাইন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছে রেলওয়ে সূত্র।
তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এ রেললাইনটি নির্মাণ করা হলেও এ মুহূর্তে প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে সৃত্রে জানা গেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল পরিবহন করা না হলেও রেলওয়ের পশ্চিম জোনের অধীন মালামাল পরিবহনের বিশেষ সুবিধা নিয়ে নির্মিত এ রেল স্টেশন দিয়ে শুরু থেকেই অন্য প্রতিষ্ঠানের মালামাল পরিবহন করা হবে। ফলে রেলের আয় বৃদ্ধি পাবে।
রেলওয়ের পশ্চিম জোনের প্রধান প্রকৌশলী ও নবনির্মিত রেল প্রকল্পের পরিচালক মো. আসাদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ''রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পণ্য পরিবহনের জন্য 'রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেললাইন সংস্কার ও নির্মাণ' প্রকল্পের এটি নির্মাণ করা হয়েছে।'
২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে এক বছর অতিরিক্ত সময় লেগেছে। তবে সময় বাড়লেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়েনি বলে জানান তিনি।
এ প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে ঈশ্বরদী রেল স্টেশন হয়ে পাকশি ইউনিয়নের রূপপুর এলাকা পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ (ব্রড গেজ ও মিটার গেজ) রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। রূপপুরে নব নির্মিত রেল স্টেশন, ১৩টি লেবেল ক্রসিং গেট, একটি প্লাটফর্ম, ৭টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ প্রকল্পের মধ্যেই ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের ২ পাশজুড়ে লুপ লাইন সংস্কার, প্লাটফর্ম উঁচু করা এবং ঈশ্বরদীর রিলে ইন্টারলকিং বাদ দিয়ে কম্পিউটারাইজ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ফলে রেল চলাচলে ব্যপক উন্নতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাইট অফিসের ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনই রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য নতুন এ রেললাইনটি ব্যবহার করার কোনো পরিকল্পনার কথা জানা নেই।'
রেলের পশ্চিম জোনের পাকশি বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নবনির্মিত এ রেল স্টেশনে পশ্চিম রেলের পণ্য খালাসের জন্য বিশাল ইয়ার্ড করা হয়েছে। ফলে পণ্য পরিবহনকারী রেলের মালামাল এখানে খালাস করা হবে।'
রেলের পশ্চিম জোনের অধীন বিশেষায়িত মাল পরিবহনের স্টেশন না থাকায় মালবাহী ট্রেনগুলোকে উল্লাপাড়া স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম স্টেশনে আনলোড করা হয়।
১৯১৫ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালু হওয়ার পর সারাঘাটের রেল স্টেশনের কাছে একটি বরফ কল স্থাপিত হওয়ায় তৎকালীন ব্রিটিশ কতৃপক্ষ সে সময় ঈশ্বরদী থেকে পাকশি পর্যন্ত একটি রেললাইন নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে রেল কর্মকর্তাদের জন্য এ রুটে পাইলট ট্রেন চালু থাকলেও ৯০ দশকের পর থেকে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন পর রেলের পুরনো এ রুট দিয়েই রূপপুরের রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে ফলে এ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করতে হয়নি। ফলে প্রকল্পের ব্যয় অনেক কম হয়েছে বলে দাবি করেছেন রেল কর্মকর্তারা।
Comments