পাইলট তথ্য গোপন করায় মৃত্যুঝুঁকিতে ছিলেন বিমানের ৭ ফ্লাইটের ৫০০ যাত্রী

বিমান

গত বছরের ১ ও ২ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বিমানের ৭ অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের কোনোটিতে কি আপনি ছিলেন? ফ্লাইটগুলো ছিল, বিজি৬০২ সিলেট-ঢাকা, বিজি৬০৫ ও বিজি ৬০৬ ঢাকা-সিলেট-ঢাকা, বিজি৪৬৭ ও বিজি৪৬৮ ঢাকা-যশোর-ঢাকা এবং বিজি৪৭১ ও বিজি৪৭২ ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা।

যদি এর কোনো একটি ফ্লাইটে আপনিও ভ্রমণ করে থাকেন, তবে আপনার এবং আরও ৫০০ যাত্রীর জীবন ভয়ানক ঝুঁকিতে ফেলেছিলেন ২ পাইলট। 

এগুলোর ঠিক আগের ফ্লাইটেই আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেনের ভুলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল উড়োজাহাজটি। তবে নিয়ম অনুযায়ী কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরিবর্তে পাইলট বিষয়টি পুরোপুরিভাবে ঠাণ্ডা মাথায় ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করেছিলেন। 

বিমানের তদন্ত অনুযায়ী, এই ৭টি ফ্লাইটের যে কোনোটিতে বিপর্যয়কর 'ইনফ্লাইট ইঞ্জিন ফেইলিউর' হতে পারত, অর্থাৎ উড়োজাহাজ আকাশে থাকা অবস্থায় ইঞ্জিন অকেজো হয়ে যেতে পারত। 

মহাকাশ প্রযুক্তি কোম্পানি ডি হ্যাভিল্যান্ড কানাডার তৈরি ড্যাশ ৮ নামের এই উড়োজাহাজটি ৭৪ যাত্রী বহন করতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৫০০ জনের বেশি যাত্রী উড়েছিলেন বিপজ্জনক এই ৭ ফ্লাইটে। 

বেসামরিক বিমান চলাচল আইনে বলা হয়েছে, বিপজ্জনকভাবে উড়োজাহাজ পরিচালনার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শাস্তি না দিয়ে বরং দূরপাল্লার ফ্লাইট ওড়াতে এই ২ পাইলটের একজনকে পদোন্নতি দেয়।

তবে দ্য ডেইলি স্টার বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই ঘটনার তদন্ত ও পাইলটদের বিষয়ে জানতে চাওয়ার একদিন পর পদোন্নতি স্থগিত করা হয়।

ফ্লাইট চলাকালে ইঞ্জিনে অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার পর 'এয়ার সেফটি' প্রতিবেদন জমা দেওয়া তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। প্রতিবেদনটি দেওয়া হলে দ্রুত উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডিং করে ইঞ্জিন পরিদর্শন করা হতো এবং প্রয়োজনে ইঞ্জিন সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করতে হতো।

প্রতিবেদন দেওয়া বিমানের ফ্লাইটের অন্যতম নিরাপত্তা প্রোটোকল। কিন্তু পাইলটরা তা করেননি।

অভিযোগ আছে, পাইলটরা 'রক্ষণাবেক্ষণ বার্তা ও ফল্ট কোড' মুছে দিয়েছেন, যা উড়োজাহাজের প্যানেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখানোর কথা ছিল। বিমানসহ বিভিন্ন সংস্থার একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ড্যাশ-৮ এর ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর নির্মাতা প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনিকে ক্ষতির তথ্য জানানোর কারণে পাইলটরা যেসব তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেছেন তার সবই প্রকাশ হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানটিও এসব তথ্য লুকিয়ে রাখেনি।

এ বিষয়ে বিমান একটি তদন্ত করেছিল। কিন্তু ২০২২ সালের মার্চে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনটির ফলাফল কখনোই প্রকাশ্যে আসেনি। 

মাত্র ১ বছরের পুরোনো উড়োজাহাজটি মেরামত করতে বিমানকেও খরচ করতে হয়েছে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। এ ঘটনার ফলে বিমানের বহরের সব উড়োজাহাজের বিমার মাসিক কিস্তির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

এমন কাজ কেন করলেন ওই ২ পাইলট, দ্য ডেইলি স্টার জানতে চাইলেও, এ প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তারা।

ভুল ও আড়ালের চেষ্টা

২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সিলেট যাওয়ার জন্য দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছাড়ে বিজি৬০১ ফ্লাইটটি। আকাশে থাকা অবস্থায় উড়োজাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফ্লাইটটিতে যাত্রী ছিলেন ৭১ জন।

ফ্লাইটের দায়িত্বে ছিলেন ৪২ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন আলী রুবাইয়াত চৌধুরী এবং তার ফার্স্ট অফিসার ছিলেন ২৭ বছর বয়সী রাফি উজ জামান। ওই ফ্লাইট পরিচালনার সময় রাফি উজ জামানের চেয়ে ৮ গুণ বেশি উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ছিল আলী রুবাইয়াত চৌধুরীর।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, উড়োজাহাজটি দুপুর ২টা ৩৩ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং ২ হাজার ফুট উচ্চতায় যাওয়ার পর পাইলট এর গতিবেগ ১৬৫ নট (নটিক্যাল মাইল প্রতি ঘণ্টা) সেট করেন, যা উড়োজাহাজটির স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির চেয়ে ২০ নট কম ছিল।

বিমানের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ এর অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি অনুযায়ী এর স্বাভাবিক গতি হবে ১৮৫ নট।

পরবর্তী ৯ হাজার ৭৯০ ফুট উচ্চতায় ওঠার সময় গতিবেগ ১৭০ নট সেট করার আগে পাইলট ৪ মিনিটের মধ্যে ৩ বার এয়ারস্পিড পরিবর্তন করেন।

প্রতিবেদন বলছে, ক্যাপ্টেন বলেছিলেন যে তারা মেঘ এড়াতে দ্রুত ওই উচ্চতায় যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে ওই দিনের আবহাওয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'কোনো উল্লেখযোগ্য মেঘ ছিল না।' একইসঙ্গে এই কৌশলটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ না।

পাইলট বলেছিলেন, তিনি ১৭০ নট এয়ারস্পিড সেট করার কয়েক সেকেন্ড পরেই ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় টার্বুল্যান্স আঘাত করে।

তিনি বলেন, টার্বুল্যান্সের ১২ সেকেন্ডের মধ্যে 'আইস ডিটেক্ট' বাতি জ্বলে ওঠে, যার অর্থ উড়োজাহাজের ডানায় বরফ জমতে শুরু করেছে।

তবে, তার এ বক্তব্য ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারের সঙ্গে মেলেনি। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত, যা এক ধরনের ইলেকট্রনিক রেকর্ডিং ডিভাইস। সব বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে ঘটে যাওয়া ঘটনা তদন্তে এই ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।

পাইলটদের দাবি, উড়োজাহাজের গতি যখন ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড ১৮৫ নটের চেয়ে ১৫ নট কম ছিল, তখন আইসিং অবস্থার কারণে উড়োজাহাজের গতি আরও কমে যাওয়া শুরু করে। 

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, উড়োজাহাজের গতি ১৭০ নটে সেট করা হলেও, তা কমে হয়ে যায় ১৬২ নট। তারা (পাইলটরা) আইসিং অবস্থায় প্রয়োজনীয় গতি কত হওয়া উচিত, তা বুঝতে পারেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড়োজাহাজের ম্যানুয়াল অনুযায়ী ১০ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় গতি ২১০ নট বজায় রাখা উচিত ছিল। ১৭০ নট গতি সেট করা স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতির লঙ্ঘন।

ফ্লাইটটি ওই উচ্চতা থেকে ক্রমশ নেমে যাচ্ছিল বলে পাইলটরা দাবি করলেও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারে এর উল্লেখ নেই।

যখন উড়োজাহাজের গতি ১৫২ নটে নেমে যায়, তখন পাইলট উড়োজাহাজ পরিচালনার অটোপাইলট অবস্থা থেকে বের হয়ে যান এবং উভয় ইঞ্জিনে 'জরুরি' পাওয়ার চালু করে দেন।

এতে টারবাইনের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রির বেশি হয়ে যায়। তাপমাত্রা ৮৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা থাকলেও তা ১ হাজার ৪ থেকে ১ হাজার ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যার ফলে ইঞ্জিনের ভেতরের ধাতব যন্ত্রাংশ গলে যেতে থাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড়োজাহাজকে 'জরুরি' পাওয়ারে নেওয়া ম্যানুয়ালের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। পাহাড় এড়ানোর চেষ্টার মতো জরুরি অবস্থায় এই পাওয়ার ব্যবহার করতে হয়। একবার এই পাওয়ার ব্যবহার করা হলে ইঞ্জিন অবশ্যই চেক করতে হবে এবং কোনো সমস্যা থাকলে প্রয়োজনে তা ঠিক করতে হবে।

ইঞ্জিনকে 'জরুরি' পাওয়ারে নেওয়ার ব্যাখ্যায় পাইলটরা তদন্ত কমিটিকে বলেন, সে সময় অল্প দূরত্বে তীব্র টার্বুল্যান্স ও 'উইন্ড শিয়ার' বা এলোমেলো বাতাস ছিল।

তদন্তকারীরা বলছেন, 'তাদের (পাইলটদের) ভাষ্য অনুযায়ী তখন পরিস্থিতি ছিল জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ। তবুও তারা কোনো সুরক্ষা প্রতিবেদন জমা দেননি।' এটি নিরাপত্তা নির্দেশনার লঙ্ঘন।

অপারেশন ম্যানুয়াল বলছে, যদি উড়োজাহাজকে 'জরুরি' পাওয়ারে নিতে হয়, তাহলে তা রক্ষণাবেক্ষণ লগে লিখতে হবে। 

এ ক্ষেত্রে সেটিও করা হয়নি।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাপ্টেন ও ফার্স্ট অফিসার উভয়ই বলেছেন যে (সিলেটে) অবতরণের পরে ক্যাপ্টেন গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের অডিও ও রেডিও কন্ট্রোল ডিসপ্লে ইউনিট এবং এয়ারফ্রেমে কোনো ত্রুটি আছে কি না, তা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। এর অর্থ কোনো ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা ছিল। 

অথচ তারা উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ লগ বইয়ে কিছুই লেখেননি।

অন্যদিকে তদন্ত কমিটি দেখেছে যে, অডিও ও রেডিও কন্ট্রোল ডিসপ্লে ইউনিটের কাছে ইঞ্জিনের প্যারামিটারগুলো দেখার বিষয়ে কোনো বার্তা ছিল না এবং ধারণা করা হচ্ছে পাইলটরা সেগুলো মুছে ফেলেছেন।

তদন্তকারীরা বলছেন,  উড়োজাহাজের সিস্টেমের ত্রুটির কারণে বা বার্তাটি মুছে ফেলার কারণে হয়ত কোনো রক্ষণাবেক্ষণ বার্তা দেখাচ্ছিল না।

আরেকটি সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাইলট অডিও ও রেডিও কন্ট্রোল ডিসপ্লে ইউনিটে রক্ষণাবেক্ষণের বার্তাটি মুছে দিয়ে পুরো ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন।

লুকানোর চেষ্টা যেভাবে ব্যর্থ

ফ্লাইটটি সিলেটে অবতরণের প্রায় ১ ঘণ্টা পর উড়োজাহাজটির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি একটি বার্তা পায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মনোনীত প্রতিষ্ঠান ক্যাম্প সিস্টেমস কানাডা ড্যাশ-৮ এর ইঞ্জিন পর্যবেক্ষণ সেবা দিয়ে থাকে।

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে ক্যাম্পের পাঠানো নোটিফিকেশনের একটি অনুলিপি আছে।

বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস এ বিষয়ে তদন্ত করতে বলে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রকে। কিন্তু তারা উড়োজাহাজটির সিস্টেমে এমন ঘটনা বা রক্ষণাবেক্ষণ বার্তা খুঁজে পাননি।

পরদিন ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস যোগাযোগ করে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি এবং এয়ারফ্রেম নির্মাতা ডি-হ্যাভিল্যান্ড কানাডার সঙ্গে।

তারা ডেটা বিশ্লেষণ করে উড়োজাহাজটিকে গ্রাউন্ড করে ইঞ্জিনগুলো বের করে পরীক্ষা করার সুপারিশ করে।

কিন্তু ততক্ষণে ওই উড়োজাহাজটি দিয়ে আরও ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, এর মধ্যে যে কোনোটিতে ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারত।

ইঞ্জিনগুলো মেরামত করতে বিমানের সাড়ে ১৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, 'কারণ এখানে ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়েছে শুধু পাইলটদের দোষে'। 

আর এ কারণেই বিমা কোম্পানি এর খরচ বহন করেনি বলে গত ২০ ডিসেম্বর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিমের সই করা একটি কারণ দর্শানো আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া, উড়োজাহাজটিকে ৩ মাস গ্রাউন্ডেড রাখতে হয়েছে, যার ফলে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সংখ্যা কমে যায় এবং বিমানকে বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে হয়। অথচ,

বিমান এখনো উড়োজাহাজটির জন্য মাসিক কিস্তি ও বিমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করছে।

নথি অনুযায়ী, এই উড়োজাহাজের বিমার প্রিমিয়ামও বড় অঙ্কে বাড়ানো হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, এই ঘটনার ফলে বিমানের সব উড়োজাহাজের বিমার প্রিমিয়ামও একইভাবে বেড়েছে।

এর ব্যাখ্যা চাওয়া হলে, পাইলট টার্বুল্যান্স ও উত্তাল বাতাসকে দায়ী করেন।

২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ডেপুটি চিফ অব সেফটিকে পাঠানো একটি ইমেইলে ক্যাপ্টেন আলী রুবাইয়াত চৌধুরী দাবি করেন, তারা হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাসের মুখোমুখি হন এবং দুই পাইলট উড়োজাহাজের ডানার স্তর ঠিক রাখতে ও উড়োজাহাজের উচ্চতা কমে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন।

কিন্তু একাধিক তদন্ত দল তার এই দাবিকে খারিজ করে দিয়েছে।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সামগ্রিক পর্যালোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে হয়ত পাইলটের এ বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা নেই, আর না হয় তিনি জেনেশুনে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন।

বিমানের তদন্তে বলা হয়, তারা উইন্ড শিয়ার এনকাউন্টারের কথা উল্লেখ করেছে, তবে কমিটি এটিকে উইন্ড শিয়ার হিসেবে বিবেচনা করে না।

বিমানের তদন্ত দল এই ভুলের কারণ হিসেবে তাদের অসুস্থতার কথাও বাতিল করে দিয়ে বলেছে, পাইলটরা সুস্থ ছিলেন।

তদন্তকারীদের কাছে পাইলটরা বারবার বলেছেন যে তারা ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেননি। কারণ তারা উড়োজাহাজটিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন।

বিমানের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, ককপিটের ভেতরে সবসময় ২ জন পাইলট থাকেন। তাদের একজন 'পাইলট ফ্লাইং' এবং অপরজন 'পাইলট মনিটরিং'। দ্বিতীয় জনের ককপিটের সব যন্ত্রের ওপর নজরদারি করার কথা।

ডিসেম্বরের কারণ দর্শানো আদেশে শফিউল আজিম বলেছেন, এ ঘটনাকে পাইলটের 'অপেশাদারিত্ব ও দায়িত্বের অভাবকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।'

বিমানের অভ্যন্তরীণরা জানিয়েছেন, ক্যাপ্টেন আলী রুবাইয়াত চৌধুরী বেসামরিক বিমান চলাচল আইনের ২৯ ও ৩৩ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এসব ধারায় উড়োজাহাজের অনিরাপদ উড্ডয়নকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে।

সেইসঙ্গে ২৭ ধারায় 'এই আইনের অধীনে জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হলে বা জমা দিতে অস্বীকৃতি জানালে' বা ভুয়া প্রতিবেদন জমা দিলে পাইলটকে শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে।

কিন্তু এই আইন ক্যাপ্টেন আলী রুবাইয়াত চৌধুরীর পদোন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। গত ২২ জানুয়ারির আদেশ অনুসারে তিনি পদোন্নতি পান।

মাত্র ১ মাস আগে ক্যাপ্টেন আলী রুবাইয়াত চৌধুরীকে কারণ দর্শানো হয়। ৭৪ সিটের ড্যাশ-৮ এর এই পাইলটকে বোয়িং ৭৮৭-৮ ও ৯ এবং বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ইআর এর ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত করা হয়। ৭৮৭ এ ২৯৮ জন এবং ৭৭৭ এ ৪১৯ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তার বিদেশ সফরে এই উড়োজাহাজগুলো ব্যবহার করেন।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম ডেইলি স্টারকে জানান, বিমানের কমান্ড বোর্ড পাইলট রুবাইয়াতকে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করেছে।

ফ্লাইট অপারেশন ডিরেক্টর, ট্রেনিংয়ের প্রধান, কারিগরি প্রধান এবং অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানদের সমন্বয়ে গঠিত হয় বিমানের কমান্ড বোর্ড এবং বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে থাকেন।

শফিউল আজিম বলেন, বিমানের কমান্ড বোর্ড আলী রুবাইয়াত চৌধুরীর পদোন্নতির সুপারিশ করলেও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত তিনি পদ পাবেন না।

গত বুধবার তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্যাপ্টেন (আলী রুবাইয়াত) চৌধুরীর শুনানি করেছি। বিমানের শৃঙ্খলা বোর্ডের প্রটোকল অনুসারে আমরা ১ সপ্তাহ আগে অধিকতর তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি, যা প্রযুক্তিগত দিক থেকে প্রমাণ সরবরাহ করবে এবং ঘটনার সব বিষয় নিরপেক্ষভাবে ও ন্যায্যভাবে তুলে ধরবে, যেন কাউকে বেআইনিভাবে শাস্তি দেওয়া না হয়।'

দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে বিমানের সঙ্গে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করার ১ দিন পর গত ২২ জানুয়ারিতে প্রকাশিত পদোন্নতির আদেশটি নতুন করে দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে আলী রুবাইয়াত চৌধুরীর নাম বাদ দেওয়া হয়।

আলী রুবাইয়াত চৌধুরীর পদোন্নতি বাতিল করার বিষয়ে জানতে আবারও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'বিমান কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ওই ২ পাইলটের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো পদোন্নতি পাবেন না।'

তাহলে আগে কেন পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদোন্নতি না দিলে তারা পিছিয়ে পড়তেন।

ক্যাপ্টেন আলী রুবাইয়াত চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনো তদন্ত চলছে। কাজেই এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।'

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে আরেক পাইলট রাফি উজ জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Constitution should be updated

Dr Kamal Hossain, emeritus president of Gono Forum, yesterday recommended updating the constitution.

11m ago