মিয়ামির মশা নিধন পদ্ধতি দেখে ঢাকার ভুল বুঝতে পারলেন মেয়র আতিক

মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা হাতে কলমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, 'মশা নিধনে আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই অতি দ্রুত ডিএনসিসি মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চায়।'

মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার পর দেশটির ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামি শহরে সফররত মেয়র আতিক গতকাল শুক্রবার এ কথা বলেন।

আজ শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডা সফর করছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। সফরকালে মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা হাতে কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ামি শহরের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ডিএনসিসিতে কাজে লাগাতে চান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, 'মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশা মুক্ত রাখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তাদের সিডিসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের দেশের কীটত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভা আয়োজন করব। তারা আসলে কীভাবে সফল, সেটি কীভাবে ঢাকাতে প্রয়োগ করা যায় তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।'

ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, 'প্রয়োজনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাবেই মশার জীবন প্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা যেতে পারে। আর ফগিংয়ে অর্থ অপচয় না করে লার্বিসাইডিংয়ে মনোযোগী হতে হবে। আমরা দেখেছি মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরন একই। তাই তারা সফল হলে অবশ্যই আমরা সফল হব।'

'এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ, তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব', যোগ করেন তিনি।

কর্মশালায় তুলে ধরা হয়, মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় শহরটিতে। ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। ডেঙ্গুসহ সব ধরনের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারত মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

মিয়ামি মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়ে। কারণ মশার ধরন বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

মিয়ামি ডেড কাউন্টি যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করে

প্রথমে তারা মশার প্রজননস্থল খুঁজে বের করতে একটি টিমকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তারা প্রজননস্থল থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা ও মশার ডিম সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রজাতি পৃথক করে দেন। প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারলেই মশা নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ শেষ হয়। মশার ধরন বুঝে পরিমিত ওষুধ স্প্রে করার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির মশা ধ্বংস করা হয়। তারা ফগিংকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে লার্বিসাইডিংকে। তাদের দাবি, ফগিং পুরনো পদ্ধতি। এটি দিয়ে মশা কখনও মরে না। তাই তারা মশার প্রজনন স্থান চিহ্নিত করে সেখানে লার্বিসাইডিং কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আর কীটনাশকেও পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

দেশে সাধারণত টেমিফস্ট ও নোভারিয়ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন এই ওষুধ ব্যবহার করার ফলে সেখানে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রে বেশি ব্যবহৃত হয় বিআইটি।

মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু  ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি।

Comments

The Daily Star  | English

A floating mosaic of guavas, baskets and people

During the monsoon, Jhalakathi transforms into a floating paradise. Bhimruli guava market comes alive with boats carrying farmers, buyers, and tourists.

11h ago