পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় আরও ২,৬৮২ কোটি টাকা বাড়তে পারে

পদ্মা সেতু। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে

পদ্মা সেতু প্রকল্প শেষ করার জন্য আরও অর্থ ও সময় চেয়েছে সেতু বিভাগ। ফলে গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা এই সেতুর ব্যয় আরও বাড়ছে।

যদিও সর্বসাধারণের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, তবে, এর কাজ এখনো পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সেতু বিভাগ প্রকল্পের জন্য আরও ২ হাজার ৬৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও ১ বছর সময়ে চেয়ে সংশোধিত প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে।

প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে রাজধানী ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনকারী সেতুর প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হবে ৩২ হাজার ৮৭৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা প্রকল্পটির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত ব্যয়ের ৩ গুণেরও বেশি।

এই ব্যয়বৃদ্ধির পেছনে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার নির্মাণে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন এবং আইন পরিবর্তনের কারণে মূল্য সংযোজন কর ও আয়করের হার বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করেন প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

যদিও প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা প্রয়োজন, কিন্তু, পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ ৩৬৮ কোটি ৯ লাখ টাকাসহ পূর্বের বরাদ্দ থেকে ৭৬২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কম খরচ হয়েছে।

অতিরিক্ত এই অর্থের মধ্যে মূল সেতুর জন্য ১ হাজার ৬৬৫কোটি ৬০ লাখ কোটি টাকা, রিভার ট্রেনিংয়ের জন্য ৮৭৭ কোটি ৫৩ লাখ কোটি টাকা এবং পরামর্শ সেবার জন্য ৪৫০ কোটি ২৯ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।

শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে মার্কিন ডলার ৭৮ টাকা ৩০ পয়সায় টাকায় লেনদেন হয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে এই হার বেড়েছে। শুধুমাত্র এই কারণেই আমাদেরকে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে।'

সরকার অনেক সময় ভ্যাট ও আয়করের হার পরিবর্তন করেছে।

তিনি বলেন, 'বিদেশি ঠিকাদারদের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়কর ১০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাই প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে চুক্তি অনুযায়ী অতিরিক্ত ৪ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ দিতে হবে।'

এতে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত ৬৮৭ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া, পদ্মায় ৭টি ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন টাওয়ারের বিস্তারিত নকশা ও ভিত্তি নির্মাণে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে আরও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

সেতুটি পরিচালনার জন্য তাদের কিছু সরঞ্জামও সংগ্রহ করতে হবে, যার জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লাগবে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক।

২০০৭ সালের আগস্টে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা এবং সময়সীমা ছিল ২০১৫ সালের জুন। ২০১১ সালে প্রকল্পে বৃহৎ সংশোধন আনা হয়, যার ফলে ব্যয় বেড়ে হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

পরবর্তীতে আরও ২ বার ব্যয় সংশোধনের পর তা বেড়ে গিয়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। আর ডিফেক্টস লায়াবিলিটি পিরিয়ডসহ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।

সময়সীমা বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, 'রিভার ট্রেনিংয়ের কাজ শেষ করতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। তারপর ডিফেক্টস লায়াবিলিটি পিরিয়ডের জন্য আরও ১ বছর লাগবে।'

ডিফেক্টস লায়াবিলিটি পিরিয়ড সময়কাল হলো কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে পরবর্তী ১ বছর, যেই সময়ে প্রকল্পে কোনো ধরনের ত্রুটি ধরা পড়লে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা মেরামত করবে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সবমিলিয়ে আমরা প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করার আবেদন করেছি।'

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি ৯৫ দশমিক ৮ শতাংশ। মূল সেতু ও রিভার ট্রেনিংয়ের অগ্রগতি যথাক্রমে ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৯৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।

আর প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

21m ago