চলছে বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, জেনে নিন জেলাভিত্তিক খিত্তার তালিকা

চলছে বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, জেনে নিন জেলাভিত্তিক খিত্তার তালিকা
শীত উপেক্ষা করে তাবলীগ জামাতের সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। ছবি: স্টার

গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমাকে সফল করতে চলছে প্রস্তুতির কাজ। ইতোমধ্যে জেলাভিত্তিক খিত্তার তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে এবং ময়দানের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। 

কনকনে শীত উপেক্ষা করে তাবলীগ জামাতের সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। 

আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যেই দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা মাঠে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নেবেন। ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে এবং ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। 

ছবি: স্টার

মাওলানা যোবায়ের প্রথম পর্বে এবং মাওলানা সাদ কান্ধালভীর অনুসারীরা দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন।

আজ শুক্রবার সরেজমিন ইজতেমা মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর পূর্বপাড়ে নামাজের মিম্বর এবং উত্তর-পশ্চিম কোনায় বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। 

এ ছাড়া শামিয়ানা টানানো, বিদ্যুৎ ও মাইক সংযোগের জন্য তার টানানোসহ তাশকিল কামরা, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের বয়ান শোনার জন্য পৃথক কামরা তৈরি করা হচ্ছে। ১৬০ একর জায়গায় বিশাল সামিয়ানা টানানোর কাজ প্রায় শেষ। বিশাল ময়দানে খিত্তাভিত্তিক চলছে মাইক বাঁধা এবং বৈদ্যুতিক লাইট টানানোর কাজ।

আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে (জুবায়েরপন্থি) অনুষ্ঠিত ৩ দিনের ইজতেমাকে ঘিরে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় ধর্মীয় উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। প্রতি বছর ইজতেমায় ঢাকা জেলার সাথীরা সবার শেষে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তার কাজ করে থাকেন। এবারও শুধু ঢাকা জেলার মুসল্লিদের জন্য নির্ধারিত খিত্তার স্থান বাদে অন্য সব কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

ছবি: স্টার

ময়দানে প্রথম পর্বে খিত্তাভিত্তিক মুসল্লিদের অবস্থান

বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি ডা. খান মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন জানান, প্রথম পর্বের ইজতেমায় মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২, ৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫ থেকে ১৮ ও ২১, ২২, ২৫, ২৭, ২৮, ৩০), রাজশাহী (খিত্তা-১৯), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা-২০), নাটোর (খিত্তা-২৩), নওগাঁ (খিত্তা-২৪), নড়াইল (খিত্তা-২৬), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৯), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩২), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৩), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৪), মুন্সীগঞ্জ (খিত্তা-৩৫), যশোর (খিত্তা-৩৬), নীলফামারী (খিত্তা-৩৭), বগুড়া (খিত্তা-৩৮), জয়পুরহাট (খিত্তা-৩৯), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-৪০), ফরিদপুর (খিত্তা-৪১), ভোলা (খিত্তা-৪২), নরসিংদী (খিত্তা-৪৩), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৪), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৫), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৪৬), মেহেরপুর (খিত্তা-৪৭), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৪৮), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৪৯, ৫১), শেরপুর (খিত্তা-৫০), জামালপুর (খিত্তা-৫২), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৩), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৪), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৫), ঝালকাঠি (খিত্তা-৫৬), বান্দরবান (খিত্তা-৫৭), বরিশাল (খিত্তা-৫৮), পিরোজপুর (খিত্তা-৫৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৬০), কক্সবাজার (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৬৩), ফেনী (খিত্তা-৬৪), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৫), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৬), চাঁদপুর (খিত্তা-৬৭), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা-৬৮), খুলনা (খিত্তা-৬৯), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭০), বরগুনা (খিত্তা-৭১), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৪), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৫), তুরাগ নদের পশ্চিমপাড় কাঁচাবাজারে মৌলভীবাজার (খিত্তা-৭৬), রাজবাড়ী (খিত্তা-৭৭), মাদারীপুর (খিত্তা-৭৮), শরীয়তপুর (খিত্তা-৭৯), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-৮০, সাফা টাওয়ার), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৮১), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৮২), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৩), পাবনা (খিত্তা-৮৪), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৫), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৮৭, যমুনা প্লট), মাগুরা (খিত্তা-৮৮, যমুনা প্লট), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৮৯, কামারপাড়া বেড়িবাঁধ বঙ্গবন্ধু  মাঠ), পঞ্চগড়ের (খিত্তা-৯০) কামারপাড়া হাইস্কুল মাঠ-বধির স্কুল ভবন) জন্য নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। 

এ ছাড়া ময়দানের চারপাশে ১১ ও ১২ নং খিত্তার কিছু অংশ, ৩২ ও ৩৭ নম্বর খিত্তার মাঝামাঝি ১২ নম্বর, ৭২, ৭৩, ৮৬ ও ৯১ নম্বর খিত্তাগুলো সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে।

ছবি: স্টার

ইজতেমার প্রথম পর্বের তথ্য সমন্বয়ক জহির ইবনে মুসলিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইজতেমা মাঠের শামিয়ানা, আন্তর্জাতিক নিবাস ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্থানীয় ডেসকোর কয়েকটি টিম কাজ করছে। ২ মাস ধরে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি চলছে। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে যোগ দিচ্ছেন। হাজারও মুসল্লির স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে চলছে ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম।

মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুরো ময়দানে প্রায় ৩০০ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে  জানান, ইজতেমা ময়দানে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) পক্ষ থেকে প্রায় ৩ শতাধিক ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। সিসিটিভির মাধ্যমে কন্ট্রোল রুম থেকে ইজতেমা মাঠের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। পুলিশি নিরাপত্তায় প্রস্তুতির কাজ চলছে।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুরাগ নদীর তীরে তৈরি করছেন পন্টুন। যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রতি বছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তরজমা করা হবে।

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি'র) কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, 'ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। 

এ ছাড়া স্পেশালাইজড টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নি নির্বাপণের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌ টহলও থাকবে।

গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান বলেন, 'প্রায় সাড়ে ৮ হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ এবং ২৫টি ফগার মেশিনে মশক নিধনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত পানি ছিটানো, মশার ওষুধ দেওয়া, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে সার্বক্ষণিক একাধিক টিম কাজ করবে। মুসল্লিদের যে কোনো সমস্যায় তারা কাজ করে যাবে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ পর্বের ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে।'

১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের প্রথম পর্বের (জুবায়েরপন্থি) বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারী (মাওলানা সাদপন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন। 

২০২০ সালে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা মহামারির কারণে গত ২ বছর ২০২১ ও ২০২২ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English
CSA to be repealed

CSA to be repealed within a week: Nahid Islam

About the election, Nahid said an election based on national consensus will be held after completing all necessary reforms.

3h ago