২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রো নেটওয়ার্কের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম

প্রস্তুতির বিলম্বের কারণে ২০৩০ সালের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের নির্মাণ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

আংশিকভাবে মেট্রোরেল চালুর পর কর্তৃপক্ষ এখন চলতি বছরের মধ্যে মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট লাইনের (এমআরটি) লাইন ১ ও ৫ (নর্দার্ন রুট) এর ভৌত কাজ শুরুর পরিকল্পনা করছে।

৯৪ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ২০১৯ সালের অক্টোবরে এই ২ প্রকল্পের অনুমোদন হলেও প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়সীমা ২০২৬ ও ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ নাও হতে পারে।

গত বছরের শেষে এমআরটি লাইন-৫ (সাউদার্ন রুট) প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ প্রকল্পের জন্য কোনো অর্থায়নকারী দেশ বা সংস্থা খুঁজে পায়নি।

কর্তৃপক্ষ এখনো এমআরটি ৪ ও ২ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রক্রিয়া শুরু করেনি।

সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষের পর কর্তৃপক্ষের যে কাজগুলো করতে হয়, তা হলো— একজন অর্থায়নকারী দেশ বা সংস্থা খোঁজা, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি, অনুমোদন নেওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ, বিস্তারিত নকশা তৈরি এবং ঠিকাদার নিয়োগের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, তিনি সব প্রকল্প সময়মতো শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা দ্রুত প্রথম মেট্রোরেল লাইন চালু করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা আশাবাদী।'

'এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা-আগারগাঁও) একটি নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। এ কারণে সময় বেশি লেগেছে। যেহেতু এমআরটি লাইন-১ মাটির নিচ দিয়ে যাবে, এই প্রকল্পের কাজ অপেক্ষাকৃত কম ঝামেলার হবে', যোগ করেন তিনি।

৬টি লাইনের সমন্বয়ে ১৩০ কিলোমিটার মেট্রো নেটওয়ার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

এমআরটি-১

প্রকল্পের মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ রেললাইনের কাজ এ মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে।

মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবহন খাতের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের ভৌত কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার কথা ছিল। ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইন নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ দশমিক 
৪৩ কোটি টাকা। মূলত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে এই প্রকল্প বিলম্বিত হয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার রেললাইন মাটির নিচ দিয়ে যাবে। নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত বাকি ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এলিভেটেড থাকবে। ২ অংশ মিলিয়ে এই রুটে মোট ১৯টি স্টেশন থাকবে।

নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে একটি ডিপোর জন্য ভূমি প্রস্তুত করার মাধ্যমে এর নির্মাণকাজ শুরু হবে। এই ডিপো নির্মাণের জন্য জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত মোট ১২ প্যাকেজের মধ্যে ১টির জন্য চুক্তি সই হয়েছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, 'আমার মনে হয় না ২০২৬ সালের মধ্যে (এমআরটি লাইন-১) কাজ শেষ হবে। সাধারণত এমআরটি লাইন নির্মাণ করতে ৫ থেকে ৭ বছর সময় লাগে।'

'২০২৬ সালের সময়সীমা অনুযায়ী কাজ শেষ করতে হলে কর্তৃপক্ষ মাত্র ৪ বছর সময় পাবে', যোগ করেন তিনি।

এমআরটি-৫ (নর্দার্ন)

এই লাইন সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা যাবে। এটি নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক গত ২৮ ডিসেম্বর ঘোষণা দেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে এই লাইনের ভৌত কাজ শুরু হবে। তবে এখনো এর বিস্তারিত নকশার ড্রয়িং তৈরি করা হয়নি।

১৪ স্টেশনসহ মোট ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইন নির্মাণের সময়সীমা ২০২৮ সাল।

প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের ৭১ দশমিক ১৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

এ প্রকল্প বিষয়ে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম বলেন, 'এর কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হলে আমি খুশী হব।'

এমআরটি-৫ (সাউদার্ন রুট)

গাবতলী থেকে শ্যামলী, রাসেল স্কয়ার, কারওয়ানবাজার, হাতিরঝিল ও আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনটি মাটির নিচে ও উপরে নির্মাণ করা হবে।

এই রুট নির্মাণের খরচ ৫৩ হাজার কোটি এবং এতে ১৫টি স্টেশন থাকবে। প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০৩০ সাল।

২০২২ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করা হয়েছে। নথি অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ এখন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করছে। তবে এখনো এ প্রকল্পের অর্থায়নকারী দেশ বা সংস্থা পাওয়া যায়নি।

এমআরটি-২

গত বছর কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পের অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার পর এক ধরনের দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এই লাইন গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর, নীলক্ষেত, আজিমপুর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর, মুগদা ও ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম সড়ক পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই লাইন নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যাবে এবং এতে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যাওয়ার জন্য একটি বর্ধিত অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

২০২৪ সালে এর ভৌত কাজ শুরুর কথা থাকলেও পরিকল্পনা পরিবর্তনের কারণে এটি আরও বিলম্বিত হতে পারে।

কর্তৃপক্ষ এখন সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার জন্য অর্থায়নকারী দেশ বা সংস্থা খুঁজছে।

এমআরটি-৪

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এই লাইন মাটির নিচ দিয়ে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার কথা ছিল।

নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী এই লাইন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত যাবে। কর্তৃপক্ষ এখন সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার জন্য তহবিল খুঁজছে।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন Metro network unlikely by 2030

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Climate finance: $250b a year needed

COP29 draft deal says rich nations should pay the amount to fight climate change

7m ago