ব্যয় বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা, রেলের কোনো প্রকল্পই সময় মেনে চলছে না
আরও উন্নত পরিষেবা দিতে বাংলাদেশে রেলওয়ের ৩৫টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। কিন্তু, এগুলোর কোনোটিই যথাসময়ে শেষ হবে না। ফলে একসঙ্গে এতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাংলাদেশ রেলওয়ের আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইতোমধ্যে ২৫টি প্রকল্পের সময়সীমা ১ থেকে ১১ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যার মধ্যে ১১টির ব্যয়ও বেড়েছে এবং একটি প্রকল্পের ব্যয় ৮৭৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
৩৫টি প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ২০ কোটি টাকা। কিন্তু, সংশোধনের পর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ২৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ রেলওয়েকে আরও ৩২ হাজার ৮ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করতে হবে, যা পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয়ের চেয়েও বেশি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
তবে যদিও বাকি ১০টি প্রকল্পের সময়সীমা এখনো শেষ হয়নি, তবে, সেগুলোর একটিরও কাজই এখনো শুরু হয়নি। ফলে সেগুলোর সময়সীমাও বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে প্রকল্পলোতে ব্যয়ও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, সময়সীমা বাড়লে সাধারণত প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ বিলম্ব হলে জনসাধারণের অর্থও বেশি ব্যয় হয়। প্রকল্পগুলোতে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই বিদেশি ঋণ। অন্যদিকে, উন্নত রেল পরিষেবার জন্য মানুষের অপেক্ষাও আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
সর্বোপরি কয়েক দশক ধরে অবহেলিত রেলপথকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকারের যে পরিকল্পনা, তা হোঁচট খেয়েছে। যদিও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য ৭১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা এই খাতে ব্যয় করেছে।
দ্য ডেইলি স্টার গত ৬ বছরের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ১ ডজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বর্তমান এ চিত্র খুঁজে পেয়েছে।
চলমান ৩৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১৮টিই রেললাইন, সেতু ও সিগনালিং ব্যবস্থা নির্মাণ, সম্প্রসারণ বা পুনর্বাসনের জন্য।
প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে ৬টি নতুন জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত ব্যবসায়িক জেলাগুলোতে বিদ্যমান ট্র্যাক ও সেবা উন্নত হবে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে।
লোকোমোটিভ, ক্যারেজ ও ওয়াগন কেনার জন্য আরও ৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ প্রায় ৬৭ শতাংশ লোকোমোটিভ এবং ৪৭ শতাংশ গাড়ির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। যার ফলে যথাযথভাবে পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
বাকি ১১টি প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাই ও নতুন বা চলমান প্রকল্পের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য।
এর মধ্যে ১৮টি প্রকল্প হয় ঋণ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বা বাস্তবায়ন করার কথা। ঋণের বেশিরভাগই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, চীন, জাপান ও ভারত থেকে নেওয়া হবে।
তবে, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য সময় বাড়ানো ও ব্যয় বৃদ্ধি নতুন কিছু নয়।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্পন্ন হওয়া ১৩টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবগুলোতেই সময় বাড়ানো হয়েছে এবং ৪টি প্রকল্পে ব্যয়ও বেড়েছে।
চলতি বছরের জুনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে উপাদান সরবরাহে বিলম্ব, প্রকল্পের নকশায় ঘন ঘন পরিবর্তন, কাজের ধরনে পরিবর্তন, পরামর্শদাতা নিয়োগ নিয়ে জটিলতা এবং প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন এই বিলম্ব ও ব্যয়বৃদ্ধির মূল কারণ।
২০০৮-০৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়েকে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
কিন্তু, বাংলাদেশ রেলওয়ে গত অক্টোবর পর্যন্ত ৭১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে, যা মোট বরাদ্দের ৬৬ দশমিক ০৬ শতাংশ।
প্রকল্পে সময়সীমা ও ব্যয়বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিটি প্রকল্প আলাদা, তাই বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণগুলোও ভিন্ন।'
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রকল্পের ২ ঠিকাদারের মধ্যে একজন আর্থিক সংকটে রয়েছেন, অপরজন জমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সুষ্ঠুভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন না।'
'এ ছাড়া, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হই, যার ফলে প্রকল্প বিলম্বিত হয়', গত ১১ নভেম্বর তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, 'প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতি আমাদের রয়েছে। আমরা সমস্যা সমাধানে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে নিয়মিত বৈঠক করছি।'
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন All behind schedule
Comments