২ দিন ধরে বাস বন্ধ, শ্রমিকদের পরিবারেও চলছে না পেট!

২ দিন ধরে বাস বন্ধ, শ্রমিকদের পরিবারেও চলছে না পেট!
সিরাজগঞ্জ থেকে ধান কাটতে বগুড়ায় এসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। ধর্মঘটের কারণে গাড়ি না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকের ওপর চড়ে নিজ জেলায় ফিরছেন তারা। ছবিটি বগুড়ার কাহালু উপজেলায় একটি সড়কে তোলা। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

গত ২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে রাজশাহী বিভাগের বাস চলাচল। মালিকপক্ষ বলছেন, তারা সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি করেছিলেন কিন্তু সরকার দাবি পূরণ না করায় ১ ডিসেম্বর থেকে সড়ক-মহাসড়কে ধর্মঘট করছেন।

রাজশাহীতে ধর্মঘট হলেও রংপুর-রাজাশাহী থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় বাস চলছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। একইসঙ্গে সমস্যায় পড়েছেন বাস-মিনিবাস শ্রমিকরা। আয়-রোজগার বন্ধ হওয়ার কারণে পরিবারে খাবার যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক শ্রমিক।

গত ২ দিনে একাধিক পরিবহন শ্রমিক দ্য ডেইলি স্টারকে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।

বগুড়া জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতি এবং জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে বগুড়া জেলায় সব মিলিয়ে ২৩ হাজারের বেশি মোটর শ্রমিক আছেন।

আজ শুক্রবার সকালে বগুড়া জেলা বাস টার্মিনালে সারি সারি কয়েকশ বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরিবহন শ্রমিকরা বাস চলবেনা বলে আসেননি। গতকাল বাস টার্মিনালে অনেকে আসলেও শুয়ে-বসে, গল্প করে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন তারা।

বগুড়া-গাইবান্ধা রুটে হেল্পার হিসেবে কাজ করেন মোটরশ্রমিক রফিকুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবাসহ ৬ জন সদস্য। একদিন সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করলে যায় হয় ৬০০-৭০০ টাকা। এই দিয়ে মানুষের পেট চলে! বাস বন্ধ হলে ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হয়।'

আরেক বাসচালক মো. মঞ্জু বলেন, 'একদিন বাস চালিয়ে আয় হয় ১০০০-১২০০ টাকা। টানা ২-৩ দিন বাস বন্ধ থাকলে সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। বাজারে সব কিছুর দাম দ্বিগুণ হয়েছে কত কয়েক মাসে। আমার তো অন্য কোনো পেশার কাজ জানা নেই।'

একই কথা জানা বগুড়া-নওগাঁ রুটের বাস শ্রমিক আনোয়ার আলী। তিনি বলেন, 'পরিবহন ধর্মঘট হলে তো আমরা সুখে থাকি না। আমরা চাই না কোনো কারণে বাস বন্ধ হোক। বাস বন্ধ হলে পরিবারের সদস্যদের মাঝে খাবার দেবো কী করে?'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী-রংপুর রুটের এক বাস শ্রমিক বলেন, 'আমার পরিবারের সদস্য ৫ জন। তার মধ্যে দুই ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে। স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, অ্যাজমা-বাতের ব্যথায় ভুগছে। একদিন যদি কাজ না করতে পারি তাহলে বৌয়ের জন্য অসুধ, বাচ্চাদের জন্য খাবার কিনতে সমস্যা হয়ে যায়। প্রায়ই ধার করে সংসার চালাতে হয় আমার।'

বাস মালিকরা বলছেন, যে কয়দিন বাস বন্ধ থাকে সে কয়দিন শ্রমিকদের মজুরি তারা নিজেদের পকেট থেকে দেন।

জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'একদিন বাস বন্ধ থাকলে বগুড়ায় বাস মালিকদের  প্রায় কোটি টাকা ক্ষতি হয় কিন্তু পরিবহন মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্মঘট ডাকা  হয়। এটা মালিক-শ্রমিক সবার স্বার্থে করা হয়। যে কয়দিন বাস বন্ধ থাকে সে কয়দিন শ্রমিকদের বাস মালিকরা মজুরি দেন।'

তবে শ্রমিকরা বলছেন, তারা কিছুই পাননি। বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিকের শীর্ষ এক নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাস বন্ধ থাকলে মালিকরা শ্রমিকদের শুধুই স্বান্ত্বনা দেন। আর কিছুই দেন না।'

Comments

The Daily Star  | English
July Warriors Shahbagh road blockade

Shahbagh gridlocked as protesters demand July Charter finalisation

Although their numbers declined as rain began, the demonstrators continued to block the intersection

1h ago