হরিজন শিশুরাও বসতে পারে না হোটেলে, কাগজে খাবার নিয়ে খেতে হয় বাইরে
প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বীরার বয়স ৭ বছর। তার খুব ইচ্ছা হোটেলে বসে বান্ধবীদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার।
দ্য ডেইলি স্টারকে বীরা জানায়, তাকে কখনোই হোটেলে বসতে দেওয়া হয় না। কাগজের ওপর খাবার নিয়ে বীরাকে হোটেলের বাইরে বসতে হয়। কারণ সে হরিজন সম্প্রদায়ের একজন।
কথাগুলো বলতে বলতে বীরার চোখ পানিতে ভরে উঠে। অতটুকু শিশু চেষ্টা করে চোখের পানি লুকাতে।
অবশ্য বীরা একা নয়। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা শহরের রেলওয়ে কলোনির রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিশাল (১২), রেলওয়ে জুনিয়র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর সঞ্জয় (১৪), রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর রনবীর (১১), রেলওয়ে জুনিয়র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর নীরব (৭), বিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর বিরাট (১১) একই আচরণ পায়। তাদের সবার 'অপরাধ', তারা হরিজন সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেছে।
তারা জানান, স্কুলের টিফিনের সময় বা ছুটির সময় হোটেলে বসে তারা খেতে পারে না। তাদের বাকি বন্ধুরা হোটেলে বসে খাবার খেলেও তাদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। এমনকি হোটেলের কোনো পাত্রে তাদেরকে খাবার দেওয়া হয় না।
তাদের সঙ্গে এমন বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ গেছে উপজেলা প্রশাসন পর্যন্ত। কিন্তু অভিযোগ জানিয়েও তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের কুলাউড়া শাখার সভাপতি মৎলা বাসপর বলেন, 'আমরা সামাজিক বা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। শহর পরিষ্কার রাখতে আমরাই কাজ করি। অথচ, সেই পরিষ্কার শহরে আমাদের সঙ্গেই বৈষম্য করা হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করে। টিফিনের সময় বাকি সব শিশু হোটেলে বসে খেতে পারলেও আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঢুকতে পারে না। তারা স্কুল ড্রেস পরা থাকলেও কাগজে নাস্তা দেয়, ময়লা পাত্রে পানি দেয়, আর বসতে হয় হোটেলের বাইরে।'
তিনি আরও বলেন, 'হোটেলগুলোতে আমাদেরকে খেতে দেয় না। আমাদের শিশুদের সঙ্গেও একই আচরণ করা হচ্ছে। তাই আমরা প্রতিবাদ করছি। এই বৈষম্যগুলো ইদানীং অনেক বেশি করা হচ্ছে।'
তিনি জানান, ইস্টার্ন হোটেল, নাজমা হোটেল, পাকসী হোটেল ও গোল্ডেনভিউ হোটেলে তাদের শিশুদের সঙ্গে এই আচরণ করা হয় সবচেয়ে বেশি।
কুলাউড়া হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান মিয়া বলেন, 'তারা হোটেলে বসে খেলে আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু অন্যান্য গ্রাহকরা আপত্তি জানান। বাচ্চাদেরকেও এভাবে বাইরে বসিয়ে খাওয়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা দ্রুত বসে আলোচনা করে এর একটি সুন্দর সমাধান করবো।'
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান বলেন, 'আমি একটি হোটেল পরিদর্শনও করেছি। হোটেল মালিকদের বলেছি যে আইনের কোনো জায়গায় এমন আচরণ করার সুযোগ আছে কি না, তা আমাকের জানাতে। সবাইকে বলেছি, কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না। আজকের মধ্যে সমাধানের একটা ব্যবস্থা করা হবে।'
Comments