আমরা উৎপাদন করবো, যুদ্ধ এত তাড়াতাড়ি থামবে বলে মনে হয় না: প্রধানমন্ত্রী

১০০ শিল্পাঞ্চলে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণাগার তৈরির পরিকল্পনা সরকারের
pm_agri.jpg
ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার সকালে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬ বঙ্গাব্দের পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কখনো আমদানি নির্ভর হবো না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবো। কৃষিপণ্য উৎপাদন এবং আমরা যে রপ্তানি করতে পারি সেটা মাথায় রেখেই আরও কিছু পণ্য; অর্থাৎ আমরা একটা-দুইটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকব না। রপ্তানি পণ্য বৃদ্ধি করায় আমি মনে করি, কৃষিপণ্য সব থেকে বেশি অবদান রাখতে পারে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী কৃষি খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উদ্যোগ ও সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি—মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এগুলোতে আমরা যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে যাচ্ছি কিন্তু ভোজ্যতেলের ৯০ ভাগই আমাদের বাইরে থেকে আনতে হয়। বাংলাদেশে আগে কিন্তু অনেক তেল নিজেরাই তৈরি করতো। চিনি বাদাম লাগিয়ে, বাদাম ক্র্যাশ করে...এটা স্থানীয়ভাবে বহুল প্রচলিত ছিল কিন্তু সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, স্থানীয় পর্যায়ে যেমন আমরা তেল উৎপাদনের পাশাপাশি নিজেদের ভোজ্যতেলের জন্য পরের ওপর নির্ভরশীল না থেকে কীভাবে আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি সেই পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে। ইতোমধ্যে গবেষণার মাধ্যমে উন্নত মানের শস্য বীজ আমরা পেয়েছি। এ ছাড়া, অন্যান্য যেসব তেল আন্তর্জাতিকভাবে অনেকে ব্যবহার করে সূর্যমুখী, সয়াবিন, আমাদের মাটি এত উর্বর, ইচ্ছা করলে আমরা কিন্তু করতে পারি। পরনির্ভরতা কমিয়ে আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। আমার বিশ্বাস আমরা সেটা করতে পারবো। আমরা ১০০টি শিল্পাঞ্চল করে দিয়েছি আমার কৃষি জমি যেন নষ্ট না হয়। যত্রতত্র শিল্প যেন না গড়ে ওঠে। এই যত্রতত্র শিল্প গড়ে উঠে আমার কৃষি জমি নষ্ট করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা লক্ষ্য আছে যে, যে অঞ্চলে আমাদের কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়, উৎপাদন বাড়িয়ে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করা। আমরা কিন্তু এসব শিল্পাঞ্চলে কৃষিপণ্য বা খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইন্ডাস্ট্রি করতে পারি। সেগুলো আমরা নিজেদের দেশেও ব্যবহার করতে পারি, বিদেশেও আমরা রপ্তানি করতে পারি। সে ব্যবস্থাটাও নিতে হবে।

কৃষিপণ্য পচনশীল, একবার গাছ থেকে তুললে বেশি দিন থাকে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা অঞ্চলভিত্তিক কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করবো। শুধুমাত্র আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা কিছু এলাকায় আছে কিন্তু আমাদের টমেটো এখন ১২ মাস হচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে, যে অঞ্চলে যে জিনিসটা সব থেকে বেশি উৎপাদিত হচ্ছে; এটা কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে সিস্টেম আছে, কোন তরকারি কতটুকু টেম্পারেচারে ভালো থাকবে। সেইভাবে আমাদের সংরক্ষণাগার গড়ে তুলতে হবে। যাতে পণ্যটা যখনই কৃষক তুলবে সঙ্গে সঙ্গে যাতে বাজারজাত ও সংরক্ষণ করতে পারে। সংরক্ষণ করতে পারলে আমরা যেমন রপ্তানি করতে পারবো এবং নিজেরাও ব্যবহার করতে পারবো, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যে ১০০টি শিল্পাঞ্চল করছি, এই শিল্পাঞ্চলেই আলাদা প্লট নিয়ে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণাগার তৈরি করার সুযোগ আছে। এটা তৈরি করার জন্য যে ফান্ড লাগবে সেটা আমি দেবো। তার একটি টাকা আমি ইতোমধ্যে আলাদা করে রেখেছি। একটু উদ্যোগ নিলেই আমি এটা করতে পারবো।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে অর্থনীতির একটা অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ এবং স্যাংশান। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আমাদের ডিজেল, এলএনজি, সার কিনতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমি অনুরোধ করবো আমাদের নিজেদের পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে, তাতে আমরা এখন কিনে আনতে পারবো। তবু অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করে চুক্তি করেছি। যেমন- কানাডা থেকে আমরা গম আনতে পারি। রাশিয়া-ইউক্রেন থেকেও আমরা এখন পণ্য আনতে পারবো। কিন্তু পণ্যের দাম যেমন বেড়েছে, পরিবহন খরচও কিন্তু অতিরিক্ত বেড়েছে। তারপরও কৃষকদের ভর্তুকি আমরা অব্যাহত রেখেছি। কারণ আমার দেশের মানুষে খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা আমাদের পূরণ করতে হবে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন লন্ডনে গেলাম অনেক দেশের রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে। সেখানে সবার ভেতরে উদ্বেগ; ২০২৩ সালে খাদ্যমন্দা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে আমাদের মাটি-মানুষ আছে। আমাদের এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে যেন এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি না হয়। আমরা উৎপাদন করবো। এই যুদ্ধ এত তাড়াতাড়ি থামবে বলে মনে হয় না। করোনার সময় অস্ত্র বিক্রি করতে পারেনি। যেসব দেশ অস্ত্র ব্যবসা করে তারা লাভবান হয় আর এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারলে কিছু দেশ লাভবান হবে। সারা বিশ্বের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমি আহ্বান জানিয়েছি, যুদ্ধ বন্ধ করেন, শিশুদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করেন।

Comments

The Daily Star  | English
crimes against journalists

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

16h ago