বলতে পারবেন না যে একেবারে শূন্য হাতে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী

ভারত সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'ভারত থেকে কী পেলাম এই প্রশ্নটি আপেক্ষিক। এটা আপনার নিজের ওপর নির্ভর করছে আপনি কীভাবে দেখছেন। ভাগ্যিস প্রশ্ন করেননি কী দিলাম।'

সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার ৪ দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরে আসেন।

ভারত সফর থেকে প্রাপ্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের চারদিকে ভারত, একদিকে একটুখানি মিয়ানমার। সেই বন্ধুপ্রতিম দেশ থেকে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষি, যোগাযোগ, সব বিষয়ে আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি। আমরা ভারতের নুমালিগড় থেকে পাইপলাইনে করে তেল আনছি। সেই পাইপলাইন ভারত তৈরি করে দিচ্ছে। এর ফলে উত্তরবঙ্গে আর চট্টগ্রাম থেকে তেল আনতে হবে না। পরিশোধিত তেল ওখানেই পাওয়া যাবে এবং উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আরও বৃদ্ধি পাবে।

বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এলএনজি আমদানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সংকট দূর করা যাবে বলে জানান তিনি।

'এভাবে হিসাব করলে বলতে পারবেন না যে একেবারে শূন্য হাতে এসেছি। তবে কী পেলাম না পেলাম এটা সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। মন যদি বলে কিছুই পাইনি, তাহলে আমার কিছু বলার নেই।'

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে এত কাজ করার পরও যখন বিএনপি বলে কিছুই করিনাই, তখন আমার কিছু বলার থাকে না। এটা মানুষের বিশ্বাসের ব্যাপার, আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় ১১টা ৪০ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।

সফরের প্রথম দিন বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর দিল্লীতে তার অবস্থান স্থল আইটিসি মৌর্য হোটেলের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন, ৬ সেপ্টেম্বর, শেখ হাসিনা হায়দরাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং একান্ত বৈঠক করেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান এবং তার সম্মানে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেয়া হয়।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর প্রতিবেশী দু'দেশের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ কর্তৃক কুশিয়ারা নদীর ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সমঝোতা স্মারকও রয়েছে।

দু'দেশের প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের গৃহীত বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে খুলনার রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা ভিত্তিক মৈত্রী পাওয়ার প্লান্ট ইউনিট-১ও রয়েছে।

পরে যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারে দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। যৌথ বিবৃতিতে ভারত বাংলাদেশি যে কোন পণ্য তৃতীয় কোন দেশে রপ্তানি করতে বিনা মাশুলে ট্রানজিট ব্যবহারে সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করে।

একই দিন প্রধানমন্ত্রীর তার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা যোগ দেন।

শেখ হাসিনা পৃথকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মূ এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ সেপ্টেম্বর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং নোবেল জয়ী কৈলাশ সত্যার্থীরও সাক্ষাৎ করেন।

একই দিন আইসিটি মৌর্য হোটেল কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। একই দিনে পরে তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এবং যুদ্ধাহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সেনা ও অফিসারদের উত্তরসূরিদের 'মুজিব বৃত্তি' প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন এবং বৃত্তি প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাজস্থানের আজমির শরীফে খাজা গরীবে নেওয়াজ হযরত মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.)-এর দরগা শরীফ জিয়ারত ও প্রার্থনার মাধ্যমে তার ৪ দিনব্যাপী সফর সমাপ্ত করেন।

Comments

The Daily Star  | English

US to make history either way

Kamala Harris and Donald Trump launched a final frenzied campaign blitz yesterday, hitting must-win Pennsylvania on the last day of a volatile US presidential race that polls say is hurtling towards a photo finish.

8h ago