বঙ্গবন্ধুর ৫ পলাতক খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার অগ্রগতি নেই

দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ পলাতক খুনি। ছবি: সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার শেষ হয়েছে ১৩ বছর আগে। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিদেশে আত্মগোপনে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ পলাতক খুনিকে এখনো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

পলাতক এই ৫ আসামি হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরীফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহউদ্দিন খান।

তাদের মধ্যে নূর চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরী কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে জানা গেছে।

তবে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায়, গোয়েন্দা ও ইন্টারপোলের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েও বাকি ৩ জনের খোঁজ এখনো বের করতে পারেনি সরকার। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে সরকার কয়েক বছর আগে একটি কমিশন গঠনের পরিকল্পনা করলেও, তা এখনো আলোর মুখ দেখতে পায়নি।

তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করতে পেরেছে।

আবদুল মাজেদ দীর্ঘদিন দেশের বাইরে পালিয়ে ছিলেন। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

অপর ৫ আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি।

আরেক আসামি আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।

এরমধ্যেই আজ জাতীয় শোক দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে।'

'আশা করি মার্কিন সরকার যেভাবে ২০০৭ সালে জাতির পিতা হত্যার আসামি মেজর (অব.) মহিউদ্দিনকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেভাবে রাশেদ চৌধুরীকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কানাডা সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যদিও কানাডা সরকার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফিরিয়ে দেওয়ার অনুমোদন দেয় না।'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন আনিসুল হক।

৩ পলাতক দণ্ডপ্রাপ্তকে খুঁজে বের করার অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এ বিষয়ে জানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

আইনমন্ত্রী বলেন, 'বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের এখতিয়ার ও শর্তাবলীসহ মন্ত্রণালয় একটি খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে।'

'আমরা এ বিষয়ে মতামতের জন্য খসড়াটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব', যোগ করেন তিনি।

২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার অভিযোগে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডের হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, 'খুনিরা শুধু দেশের রাষ্ট্রপতিকে (বঙ্গবন্ধু) হত্যা করেনি, তার পুরো পরিবারকেও হত্যা করেছে। আসামিরা বর্বর আচরণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, এ ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য শুধু রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করাই ছিল না, বরং তার পুরো পরিবারকে সমূলে বিনাশ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।'

'দেশে এমন জঘন্য ঘৃণ্য ঘটনা আর ঘটেনি', পর্যবেক্ষণে বলেন আপিল বিভাগ।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, 'আসামিরা এমন এক নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে যিনি জাতির পিতা। এমনকি তারা রাষ্ট্রপতির ১০ বছর বয়সী শিশু সন্তানকেও রেহাই দেয়নি। পুরো জাতিকে হতবাক করে তারা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।'

'তারা কেন ৩ জন নারীকে হত্যা করেছে, তা ব্যাখ্যাতীত। একজন শিশু ও ৩ জন নিরীহ-নিরস্ত্র নারীকে হত্যা করে তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে... বাড়িতে উপস্থিত প্রায় পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে। কেন নিরীহদের হত্যা করা হয়েছে, আসামিরা তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি', পর্যবেক্ষণে বলা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Leading univs withdrawing from cluster system

Session delays, irregularities, and lack of central planning cited as reasons

10h ago