পতেঙ্গা সৈকতের ইজারা বাতিলের দাবি
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম।
আজ শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য সংগঠনের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, 'পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন ৭ কিলোমিটার পরিসরের দেড় কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে বাকি পরিসরকে পর্যটন জোন-১ এবং পর্যটন জোন-২ হিসেবে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে ২৫ বছরের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা দিতে চাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কিন্তু সিডিএ কোনো স্থান আইনগতভাবে ইজারা দেওয়ার অধিকার রাখে না।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া আইনগত যে কোনো জটিলতা এড়ানোর স্বার্থে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিপর্যায়ে ইজারা দেওয়ার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।'
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, 'যে কোনো উন্নত নগরীতে সর শ্রেণির মানুষের অবকাশ ও বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত পরিসরের নেটওয়ার্ক থাকে। চট্টগ্রাম নগরীতে তার সিকিভাগও নেই। নানা উপায়ে তাতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত বা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে উন্নত বিশ্বের পরিশীলিত নগরগুলোতে উন্মুক্ত পরিসর বৃদ্ধির জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দিয়ে বিস্তৃত সৈকত বা নদীতীরে প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে কোথাও প্রবেশের অধিকার হরণ করা হয়েছে এমন তথ্য আমাদের জানা নেই।'
'চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নগরের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা এবং বিস্তৃত অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) পতেঙ্গা সৈকতকে পাবলিক ওপেন স্পেস বা সর্বজনের উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ঢাকায় তুরাগ নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে করা রিটের প্রেক্ষিতে সংবিধানের ১৮ক, ২১, ৩১ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে 'পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সকল উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, সমুদ্র সৈকত, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, বিল, নদীর পাড়,পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন এবং বাতাস ইত্যাদি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া চলবে না' মর্মে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। কার্যত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কোনো স্থান আইনগতভাবে ইজারা দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে না,' বলেন তিনি।
ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, 'পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন উন্মুক্ত রেখেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। সৈকতে আগতদের বিনোদন ও অবসরের প্রেক্ষিতে জলযান ভ্রমণ, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, হরেক রকমের দোকান, খেলার ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করে চউকের নিয়ন্ত্রণাধীনে রেখে এসব পরিচালনার সুযোগ ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যাতে বিনিয়োগকারী কর্তৃক নিরাপত্তাসহ ভ্রমণকারীদের সব সুবিধা নিশ্চিত করে সহজেই মুনাফা উঠিয়ে আনা যায়। আমরা সিডিএকে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।'
সংবাদ সম্মেলনের বক্তারা বলেন, কোনো স্থাপনা বা এলাকার সংরক্ষণ ব্যয় সংস্থানের জন্য কেবলমাত্র সেই স্থপনা বা এলাকাকে বেসরকারি পর্যায়ে লিজ দেওয়াই একমাত্র সমাধান নয়- এই কথাটি নীতি-নির্ধারকদের বিবেচনায় আসতে হবে। যেকোনো শর্তেই লিজ দেওয়া হোক না কেন চূড়ান্ত বিচারে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।
Comments