পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই দুদকের গণশুনানিতে

পুলিশ ও পুলিশি সেবা নিয়ে জনসাধারণের সমালোচনা ও অভিযোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষের মাঝে। পুলিশি সেবা পেতে হয়রানি ও অভিযোগ বিষয়ে পুলিশ সংবাদের শিরোনামও হচ্ছে অহরহ। এ ছাড়াও পুলিশের দুর্নীতি ও সেবায় হয়রানি নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পড়েছে অনেক।
চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত গণশুনানি। ছবি: এফ এম মিজানুর রহমান/স্টার

পুলিশ ও পুলিশি সেবা নিয়ে জনসাধারণের সমালোচনা ও অভিযোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষের মাঝে। পুলিশি সেবা পেতে হয়রানি ও অভিযোগ বিষয়ে পুলিশ সংবাদের শিরোনামও হচ্ছে অহরহ। এ ছাড়াও পুলিশের দুর্নীতি ও সেবায় হয়রানি নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পড়েছে অনেক।

কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত গণশুনানিতে সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে নগর পুলিশ কিংবা পুলিশি সেবা নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।

গত বছরগুলোতে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও এবার অভিযোগ না আসায় বিস্মিত দুদক কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, শুনানির বিষয়ে আগে থেকেই প্রচারণা চালালেও এবার কেউ পুলিশের কোনো সদস্য কিংবা সেবার বিষয়ে কোনো অভিযোগই তাদের কাছে জমা দেননি।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা না পড়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে নগর পুলিশেও।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হয়তো দুটি কারণে মানুষ অভিযোগ করেননি। একটি হতে পারে, পুলিশের সেবা এখন উন্নত, যার ফলে মানুষ 'সন্তুষ্ট'।  অপরটি হতে পারে, মানুষ সরাসরি পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে অভিযোগ দিতে পারছেন বলে দুদকে অভিযোগ দেননি।

তবে চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটি-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (সনাক-টিআইবি) বলছে, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কেউ পুলিশি হয়রানির শিকার হতে চান না এবং সহজে প্রতিকার পাওয়া যায় না বলেই কেউ অভিযোগ করতে সাহস করেননি।

গত ৩ আগস্ট দুদক ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত গণশুনানিতে সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিয়ে।

গণশুনানিতে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গণশুনানি অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ৮৩টি সরকারি দপ্তর অংশগ্রহণ করে।

দুদকের তথ্য মতে, শুনানির আগে মানুষকে জানাতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগানো হয়, করা হয়েছে মাইকিংও। এ ছাড়া, চট্টগ্রামের পরীর পাহাড়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সামনে বসানো হয়েছিল অভিযোগ জমা দেওয়ার বুথ।

চট্টগ্রাম দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর তথ্য মতে, দুদকে শুনানির জন্য ২০০টির মতো অভিযোগ জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ৪৭টির শুনানি হয়, ৩০টির অভিযোগ তাৎক্ষনিক সমাধান দেওয়া হয় এবং ৩টি অভিযোগ তাৎক্ষনিক অনুসন্ধানের জন্য রাখা হয়। বাকি অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্য কমিশনে প্রেরণের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এর মধ্যে একটিও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে (সিএমপি) নিয়েছিল না।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে মানুষ ভয় পায় কি না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ উপপরিচালক নাজমুস সাদাত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভয় নাকি অন্য কিছু সেটা তো আমরা বলতে পারছি না। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধান করি।'

সিএমপি উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নগর পুলিশের সেবায় গুনগত পরিবর্তন আসায় এবং তাৎক্ষনিক সেবা পাওয়ার কারণেই এবার গণশুনানিতে পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। সিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের সময়কালে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন, অভিযোগ-অনিয়ম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং সিএমপিতে সেবার মান বৃদ্ধি করেছেন। যার ফলে সিএমপির পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একটি পজিটিভ পরিবর্তন হয়েছে।'

তিনি দাবি করেন, 'চাইলেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ এখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি জানানো যায়। তাই দুদকে এবার অভিযোগ জমা পরেনি।'

তবে নগর পুলিশের সেবায় গুণগত পরিবর্তন এসেছে বলে মানতে নারাজ চট্টগ্রামের সনাক-টিআইবির সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, 'অতীতে যারা পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ দিয়েছেন তারা অনেকেই পরবর্তীতে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পর দুদকও পরবর্তীতে তাদের নিরাপত্তা দেয়নি। আবার অভিযোগ জমা দিলেও এর প্রতিকার পেতে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়তে হয়। এই কারণে পুলিশ নিয়ে কেউ এখন সরাসরি বলতে চায় না।'

'পানিতে থেকে কেউ তো কুমিরের সঙ্গে মারামারি করতে চাইবেন না,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Gaza still bleeding

Death toll nears 42,000; rallies worldwide calls for ceasefire

1h ago