নিবন্ধন পাবে না ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ প্রতিবেদন দেওয়া নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা

ইসি
প্রতীকী ছবি

বিগত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেসব দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিল, সেগুলো নিবন্ধন পাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫ প্রকাশ করেছে কমিশন।

নতুন এই নীতিমালায় ভোটের জন্য দেশীয় পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধনের বয়স কমিয়ে ২৫ থেকে ২১ বছর করা হয়েছে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে এসএসসি থেকে এইচএসসি নির্ধারণ করেছে কমিশন। পাশাপাশি নিবন্ধিত ৯৬টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক শরিফুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিগগির একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং কমিশন নতুন স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করবে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে নিবন্ধনের জন্য ১৫ দিন সময় দিয়ে দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবে কমিশন। এটি নতুন ধারা, যা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে উল্লেখ ছিল না।

পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই নীতিমালার চার এর ছয় ধারায় বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে যেসব পর্যবেক্ষক সংস্থা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তাদের নিবন্ধন দেওয়া যাবে না।

ভোটের সময় ইসি পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র দিয়ে থাকে। কমিশন নতুন এই নীতিমালায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভোটগ্রহণের তিন দিন আগে পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। পর্যবেক্ষকরা ভোটের নজরদারিতে তিন দিন পর্যন্ত মাঠে থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন—এমন ধারা রাখা হয়েছে নতুন এই নীতিমালায়।

অর্থাৎ, ভোটের আগের দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দিন মাঠ থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা।

এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫ এর মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৩ রহিত করেছে ইসি। পাশাপাশি ওই নীতিমালার অধীন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন অকার্যকর ও বাতিল করা হয়েছে।

কমিশন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক নিবন্ধন প্রথা শুরু করে। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন এক লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৪ সালে ৩৫টি সংস্থার আট হাজার ৮৭৪ জন পর্যবেক্ষক ভোট দেখেছেন। 
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১৮টি নিবন্ধিত সংস্থার মধ্যে ৮১টি দেশি সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৯৬টি নিবন্ধিত সংস্থার মধ্যে ৮০টির মতো সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।

এর আগে গত ২০ মার্চ নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছিলেন, অনেক স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।

বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ জারি হওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে; সেই হিসাবে এই ৯৬টি সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ ২০২৮ সালের শেষ দিকে পর্যন্ত থাকার কথা ছিল।

এদিকে গত ৮ জুলাই বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে 'বিশ্বাসযোগ্য' হিসেবে অভিহিত করেছেন, তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবেন না।

তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইতোমধ্যে পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য চিঠি দিয়েছে কমিশন।

Comments

The Daily Star  | English

Political alignment is key to a desirable future

This is the final instalment in a three-part series based on a foresight analysis centred on Bangladesh’s transition.

3h ago