মূল অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার স্বতন্ত্র প্রার্থীর
গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত মূল অপরাধীদের শনাক্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ।
আজ রোববার দুপুর ১২টার সময় বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
নাহিদুজ্জামান নিশাদ বলেন, 'একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য উপনির্বাচনের আগে থেকেই নির্বাচন কমিশনের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তাতে আশ্বস্ত হয়ে আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু, প্রহসনের নির্বাচনে কমিশনের আশ্বাস যে শুধুই কথার কথা বা লোক দেখানো হুঙ্কার ছিল আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি গত ১২ অক্টোবর নির্বাচনের দিন।'
তিনি বলেন, 'ইভিএম নিয়ে বারবার আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তাই আমার মতো অন্য প্রার্থীরা ভেবেছিলেন, ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণে গাইবান্ধা-৫ আসনে একটি সুষ্ঠু ভোট উপহার দেবে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু, আমাদের ভাবনা এখন দেশসহ বিশ্ববাসীর কাছে উপহাসে পরিণত হয়েছে।'
'বিশেষ একজন প্রার্থীর কর্মী ও বহিরাগতরা জোর-জবরদস্তি, হুমকি-ধামকি ও মারপিট করেছে। তারা সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজেরাই ভোট দিয়েছে। আমার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের ওপর আক্রমণসহ নানা অপকর্মের সাক্ষী হয়েছে সাঘাটা-ফুলছড়ি বাসী। যা সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনকে পুরোপুরি নস্যাৎ করেছে। নির্বাচন কমিশন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের পর নির্বাচন স্থগিত করায় আমরা আবারও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করেছিলাম,' বলেন তিনি।
'বিশ্বাস ছিল এবার হয়তো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। গাইবান্ধাবাসী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ পাবে। কিন্তু, আমিসহ পুরো গাইবান্ধা বাসী আশাহত। সব ধরনের অপকর্মের প্রমাণ থাকা স্বত্বেও যে বা যারা অপকর্ম করেছে তাদের চিহ্নিত করা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।'
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন- শিক্ষক, অন্যান্য কর্মকর্তা- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অথচ মূল পরিকল্পনাকারী যারা শিক্ষক/কর্মকর্তাদের ওপর (প্রিজাইডিং কর্মকর্তা) চাপ প্রয়োগ করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোট দিতে দিলো না, তাদের কেন কোনো শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হলো না? এই প্রশ্ন আমি রেখে গেলাম।'
'নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের যেসব কর্মকর্তারা ভোটে অনিয়ম দেখেও না দেখার ভান করেছিলেন এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ পর্যন্ত অমান্য করেছিলেন (নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য মতে); প্রধান নির্বাচন কমিশনার যাদের ভোট ডাকাত বলে আখ্যা দিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'
'আমি ভোট ডাকাতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। শুধুমাত্র আমার এলাকার, আমার নিরীহ ভাইদের (ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা) বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে যা আমাকে ব্যথিত করেছে। কারণ তাদের না আছে প্রশাসনিক ক্ষমতা, না আছে দলীয় ক্ষমতা, না তারা অস্ত্রধারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তাদের কী-ই বা করার ছিল। বাইরে থেকে আসা ভোট ডাকাতদের (প্রধান নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী) বিচার না করে শুধুমাত্র এই নিরীহ ব্যক্তিদের (দু'একজন ব্যতীত) বিচারের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের নামে আবারও একটি প্রহসন দেখল দেশবাসী,' যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আসন্ন ৪ জানুয়ারির উপনির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করলে আমার এলাকার অন্য কোনো নিরীহ ব্যক্তিদের অপরাধী বানিয়ে তাদের সাজা দেওয়া হবে; এই মুহূর্তে এমন আশঙ্কায় আমি আতঙ্কিত। আমি ভোটে অংশ নিলে আবারও নতুন করে কাউকে অবৈধভাবে অপরাধী সাজিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে, আমি তা চাই না। গত ভোটের সময় একাধিক মিথ্যা মামলায় সহজ-সরল কিছু মানুষকে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে দেখেছি। যার প্রতিকার চেয়েও আমি পাইনি। যেমন, নির্বাচনকালীন একটি মিথ্যা মামলা ছিল জাতীর পিতার ছবি ভাঙচুরের ঘটনায়। যেখানে এ রকম হীন কাজ আমার বা আমার সমর্থকদের দিয়ে কখনোই সম্ভব নয়। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটুক এমনটাই আমার প্রত্যাশা।'
'বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো নির্বাচন কারচুপি, ডাকাতির দায়ে বন্ধ হয়েছে। যা নির্বাচন কমিশনের অত্যন্ত সাহসী এবং নিরপেক্ষ উদ্যোগ ছিল। তাই আসল দোষীদের বিচারের আওতায় এনে পুনঃতফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের নীরব ভূমিকা আসন্ন নির্বাচনকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নানা অনিয়মের ধারাবাহিকতায় নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পাশাপাশি আমিসহ অন্যান্য প্রার্থীরা নতুন তফসিলের দাবি জানিয়েছিলাম। একইসঙ্গে প্রত্যাশা করেছিলাম, নির্বাচন কমিশন আমাদের মতামত জানতে চাইবেন, এমন সাজানো ভোটে আমরা প্রার্থী হব কিনা? নির্বাচন কমিশন চাইলেই পুনঃতফসিল ঘোষণার মাধ্যমে অন্যান্য প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে আসার সুযোগ করে দিতে পারত অথবা দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে জনগণের আস্থা অর্জনে নতুন প্রার্থীদের সুযোগ করে দিতে পারত। এর কোনোটাই আমরা দেখতে পাইনি। তাই লোক দেখানো এই নির্বাচন থেকে আপনাদের সবার( সাঘাটা- ফুলছড়ি বাসীর) পরামর্শে আমি আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,' বলেন তিনি।
এর আগে, গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনে ব্যাপক অনিয়ম দেখা দিলে ভোট বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। একাধিক তদন্তের পরে আগামী ৪ জানুয়ারি আবারও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে কমিশন।
১২ অক্টোবরের নির্বাসনে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন— আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবার রহমান। ভোট গ্রহণের দিন ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে শুধু আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেন।
চলতি বছরের ২৩ জুলাই জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়।
Comments