৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ

জাতীয় নির্বাচন ২০২৪

বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বর্জনের মুখে আজকের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ এবং দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জোট-মিত্ররা। ফলে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে কেন্দ্রে ভোটার আনাই মূল লক্ষ্য আওয়ামী লীগের।

ক্ষমতাসীন দলটির বিশ্বাস, বিপুল সংখ্যক ভোটার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে সাহায্য করবে। বিএনপি ও তাদের সমমনা দল, যারা নির্বাচন বর্জন করছে এবং ভোটারদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিপুল সংখ্যক ভোটারই তাদের জন্য উপযুক্ত জবাব বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।

শুরু থেকেই এ বিষয়ে তৎপর ছিল আওয়ামী লীগ। ভোটার সংখ্যা বাড়াতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নেতাদেরও স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে দাঁড়ানোর অনুমতি দিয়েছে।

এ নির্বাচনে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে বলে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। দলটির বিশ্বাস, সংখ্যাটি নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে যথেষ্ট হবে।

তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন, ৫০ শতাংশ ভোটারকে কেন্দ্রে আনা কঠিন হবে।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে ৮৭ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে, যা অনেক দল বয়কট করেছিল, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

গত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যোগ দিয়েছিল, সেখানে ৮০ শতাংশের বেশি ভোটার ছিল।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ ভোটার বিদেশে রয়েছেন, যা মোট ভোটারের ১০ শতাংশ। আরও ১৫ শতাংশ ভোটার দেশের ভেতরেই নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসবাস করছেন। যদি নির্বাচনী এলাকায় বসবাসকারী সব ভোটার ভোট দেন, তাহলে ৭৫ শতাংশ ভোট পড়বে।'

'সুতরাং প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার নিশ্চিত করা খুব কঠিন হবে,' বলেন তিনি।

তবে যেসব নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে 'আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র' প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে সেখানে ভোটার সংখ্যা বেশি হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন নেতারা। তাদের বিশ্বাস, যেসব আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের লড়াই সহজ হবে, সেখানে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম হবে।

দলটি প্রায় ১৫০টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করছে।

আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বেশি সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছে। তাদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে ক্ষমতাবিরোধী মনোভাবের লোকজন ও আওয়ামী লীগের বঞ্চিতরা ভোট দিয়েছে বলে বোঝা যাবে। এই দুই শ্রেণির লোকজন দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের ভোট দেবেন না বলেই মনে করেন তারা।

দলীয় উচ্চপদস্থরা অবশ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভোটকেন্দ্রে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা ভোটারদের ঘরে থাকতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটার তাদের রয়েছে এবং আজ তৃণমূল পর্যায়ে এই ভোটটুকু নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের প্রতিটি কেন্দ্রে অন্তত ৫০ জনের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগী হতে বলা হয়েছে।

দলটির সূত্রগুলো বলছে, কমিটির সদস্যরা প্রথমে তাদের ভোট দেবেন, তারপর তাদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন এমনটাই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  

এছাড়া প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি ভোটার যারা সরকারি বিভিন্ন সুবিধা সুবিধা ভোগ করেন তাদের ভোটকেন্দ্রে আনার বিষয়টি এই কমিটিকে দেখতে বলা হয়েছে।

এর বাইরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ভোটার যারা প্রথমবারের ভোট দেবেন এবং ১০ মিলিয়ন তরুণ ভোটারদেরও লক্ষ্য আওয়ামী লীগ। তরুণ ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের বলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রভিত্তিক কমিটির সদস্যরাও ভোটকেন্দ্রে থাকবেন বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

49m ago