২২ বছর আগের হত্যা মামলা: নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকিরসহ সবাই খালাস

আদালত প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ব্যবসায়ী নেতা ছাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় বিএনপির এক সময়ের 'ক্যাডার' ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত।

আজ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জাকির দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আসামিদের উপস্থিতিতে আদালত আজ রায় ঘোষণা করেন।

খালাসপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন—জাকির খানের দুই ভাই জিকু খান ও মামুন খান, তার সহযোগী জঙ্গল ওরফে লিটন, মোক্তার হোসেন, মনিরুজ্জামান শাহীন, নাজির আহমেদ ও আব্দুল আজিজ। তাদের মধ্যে মনিরুজ্জামান শাহীন মারা গেছেন।

২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে ছাব্বির আলম খন্দকারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি ছাব্বির ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা (বহিষ্কৃত) ও বর্তমানে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের ছোটভাই।

আজ ২২ বছর পর এ মামলার রায় ঘোষণার পর জেলা আদালতের পিপি আবুল কালাম বলেন, 'যিনি খুন হয়েছিলেন তার ভাই তৈমুর আলম খন্দকার সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের একজন আইনজীবী, নিহতের মেয়েও আইনজীবী। তারা নিজেরাই এই মামলাটি তদারকি করেছেন। এখন এই রায়ের বিপরীতে মামলার বিষয়ে পরবর্তী কী হতে পারে তা বাদীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

তিনি জানান, মামলায় ৫২ সাক্ষীকে তালিকাভুক্ত করা হলেও সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়েছে ২১ জনের। দীর্ঘ সময়ে এ মামলাটি তদন্ত করেছেন অন্তত ৯ জন কর্মকর্তা।

এ মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় উত্তেজনা ছিল। মামলার অভিযুক্ত জাকির খানের কয়েকশ অনুসারী আদালত এলাকায় জড়ো হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।

মামলার নথি অনুযায়ী, ছাব্বির আলম খন্দকার নগরীর মাসদাইর এলাকার শেরে বাংলা সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর বাসার কাছেই সড়কে স্থানীয় দুজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেসময় তাকে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় তার বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকার ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন বিএনপির সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানসহ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে জাকির খান ও তার দুই ভাইসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

অভিযোগপত্রে গিয়াসউদ্দিনকে অব্যাহতি দেওয়ায় নারাজি দিলে আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। যদিও ২০১১ সালে মামলার বাদী তৈমুর তার নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের আবেদন করলে সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্র অনুযায়ী মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। 

এ মামলার অভিযোগপত্রে অভিযুক্তের তালিকায় তিন নম্বরে ছিলেন জাকির খান। ছাব্বির আলম হত্যা মামলা ছাড়াও জাকির খান আরও অন্তত ৩টি হত্যা এবং অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ২৯টি মামলায় অভিযুক্ত। বেশ কয়েকটি মামলায় ইতোমধ্যে তিনি বেকসুর খালাস ও জামিন পেয়েছেন।

দীর্ঘ সময় পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১১ এর অভিযানে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন জাকির খান।

জাকির খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজীব মন্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাকির খানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা ছিল। ৩০টি মামলায় ইতোমধ্যে তিনি খালাস পেয়েছেন। আজ আরও একটি হত্যা মামলায় তিনি খালাস পেলেন। দুটি চাঁদাবাজি ও অস্ত্র মামলা এখনও তার বিরুদ্ধে চলমান। কিন্তু ওই দুই মামলাতেও তিনি জামিনে আছেন। মামলার কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর তার মুক্তির আর কোনো বাধা থাকবে না।'

গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নারায়ণগঞ্জ শহরের পরিবহন, ঝুটসহ বিভিন্ন সেক্টরে জাকির খানের অনুসারীদের দখল ও আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ ওঠে। গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি পরিবহন দখলকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জাকির খানের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির আরেকটি পক্ষের সংঘর্ষও হয়।

Comments