অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ড. ইউনূসের অব্যাহতির আবেদন

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ অভিযুক্ত।

আজ রোববার সকালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ মামলার শুনানিতে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অব্যাহতির আবেদন করেন।

আদালতের বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন আবেদনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

প্রসিকিউশন দাখিলের পর বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন ড. ইউনূসসহ অপর অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতে আসেন। 

গত ২ মে আদালত শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। সেদিন আদালত এ মামলায় ড. ইউনূসসহ বাকি অভিযুক্তদের জামিন দেন। 

গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

চলতি বছরের ২ এপ্রিল ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত অধ্যাপক ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।

মামলায় অভিযুক্ত বাকি ১৩ জন হলেন—গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান।

দুদক গত ২৯ জানুয়ারি অভিযোগপত্র অনুমোদনের পর ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

যা আছে চার্জশিটে

অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখা একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। 

এর আগে ২৭ এপ্রিল কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি সই হয়।

দুদক বলছে, গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভায় ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্তের একদিন আগেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট এপ্রিলে হলেও, অ্যাগ্রিমেন্টে ৮ মে খোলা ব্যাংক হিসাব দেখানো হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব। 

ওই বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক মিরপুর শাখা থেকে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ১০ মে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। 

পরে ২২ জুন গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা দেওয়ার অনুমোদন হয়। 

ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখার অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ডাচ-বাংলা ব্যাংক লোকাল শাখার অ্যাকাউন্টে ১৭ মে ১০ কোটি টাকা, ২৫ মে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা এবং ৩০ মে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকাসহ মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। 

কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই সিবিএ নেতা কামরুজ্জামানের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৫ মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। 

গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের ডাচ-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৬ মে ২ কোটি টাকা এবং ২ জুন ১ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। 

গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৬ মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা এবং সিটি ব্যাংক গুলশান শাখার অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।

আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ অ্যাকাউন্টে ২৯ মে ৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না বলে অভিযোগে জানায় দুদক। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের নেতা কামরুল ইসলামের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ২৯ মে চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নেন। আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তরিত বাকি ৭২ হাজার টাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ফ্রিজ করা আছে। 

দুদক বলছে, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা অসৎ উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে অর্থ স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন।

এ অবস্থায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চেয়ারম্যান, গ্রামীণ টেলিকমসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুদক চার্জশিট দেওয়ার অনুমোদন দেয়।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina’s extradition: Dhaka to remind Delhi after certain time

Bangladesh is expecting a reply from India regarding its request for former Prime Minister Sheikh Hasina's extradition and will send a reminder after a certain period if no reply is received from New Delhi, said a spokesperson today

29m ago