যেখানেই যাচ্ছি প্রতারণার শিকার হচ্ছি: জল্লাদ শাহজাহান

সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

৪৪ বছর কারাভোগ করা এবং প্রধান জল্লাদ হিসেবে ৩ দশকে ২৬ অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা শাহজাহান ভূঁইয়া বলেছেন, তিনি যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জল্লাদ শাহজাহান বলেন, 'কারাগারের বাইরে জীবন এত জটিল কেন? জীবন এত কঠিন হবে জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম।' 

'চরম অর্থনৈতিক সংকটে আছি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমার কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই, আয়-রোজগার নেই, অর্থের যোগানদাতা নেই, নিজের থাকার জায়গা নেই। ৪৪ বছর কারাভোগ শেষ করে এসে আমি এখন বাইরের মানুষদের বুঝতে পারছি না। যেখানেই যাচ্ছি প্রতারণার খপ্পরে পড়ছি।'

'গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিয়ে করে সেখানেও সর্বস্বান্ত হয়েছি। বিয়ের কাবিন ৫ লাখ টাকা হলেও আমার কাছে থাকা ১০ লাখ টাকা স্ট্যাম্পে লিখিত নিয়ে আমার স্ত্রী সাথী আক্তার ফাতেমা ৫৩ দিনের মাথায় পালিয়ে গেছে। পালিয়ে গিয়ে আমার নামে যৌতুকের মামলা দিল। আমি থানায় মামলা দিতে গেলেও বউয়ের নামে মামলা করা যায় না বলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। পরে আইনজীবীর সহযোগিতায় গতকাল রোববার আদালতে স্ত্রী, শাশুড়িসহ ৬ জনের নামে মামলা দিয়েছি,' বলেন তিনি।

জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনের সময় শাহজাহানের আইনজীবী ওসমান গনি ও টাইমস পিআরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সোহেল উপস্থিত ছিলেন। 

শাহজাহান বলেন, 'মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা-এগুলোর কোনোটিই আমি পাচ্ছি না। আমি আমার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আমার মা-বাবা নেই, দায়িত্ব নেয়ার মতো ভাই-বোন নেই।'

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিনি বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

জল্লাদ শাহজাহান আক্ষেপ করে বলেন, '৪৪ বছর কারাবন্দী থেকে বাইরে এসে নানান প্রতারণায় পড়ে মনে হচ্ছে কারাগারেই ভাল ছিলাম। কারাগারের বাইরের জীবন এত জটিল কেন? জীবন এত কঠিন হবে জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম। আমি কারাগার থেকে বের হলে আমার ভাগিনা নজরুল আমাকে অটোরিকশা কিনে দেবে বলে আমার টাকা মেরে দেয়। এরপর অনেক কষ্টে একটা চায়ের দোকান দেই। আমার সঙ্গে যে ছেলেটি দোকানে সময় দিত, সে ৪ মাস আমার সঙ্গে থাকার পর দোকানে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায়।'

'আমি এখন উভয় সংকটে জীবনযাপন করছি। একে তো আমার অচল অর্থনৈতিক অবস্থা, অন্যদিকে একজন নারী আমার জীবনের শেষ জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে এবং আমাকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। অথচ আমার থেকে ১০ লাখ টাকা নেয়ার সময় ষ্ট্যাম্পে লিখিত দিয়েছে, যার সকল প্রমাণ আমার হাতে আছে,' বলেন তিনি।

শাহজাহান বলেন, 'কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে আশীর্বাদ হিসেবে পাওয়া টাকাসহ মোট ১৮ লাখ টাকা আমি সাহায্য হিসেবে পাই। সেই টাকা দিয়েই মূলত আমি বিয়ে করে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমি এখন কীভাবে বাঁচব, আমার জীবন কীভাবে চলবে, কোথায় থাকব-কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন খেয়ে, না খেয়ে অনাহারে জীবন চলছে।'

তিনি বলেন, 'আমি এখন দুই-তিন দিন পর ভাত খাই। কেউ আমাকে খাবার দিলে খাই, না দিলে না খেয়ে থাকি। আমার থাকার জায়গা নেই। তাই ফুটপাতে, গ্যারেজে বা কেউ সাময়িক আশ্রয় দিলে সেখানে থেকে খুব কষ্টে সময় পার করছি। আমি আমার উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপির কাছে গিয়েছি কিন্তু কেউ আমাকে এক মুঠো ভাত দেয়নি, কাজ দেয়নি, সাহায্য সহযোগিতা করেনি। আমি এভাবে চলতে থাকলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।'
 
সবশেষে জল্লাদ শাহজাহান বলেন, 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুন করে এদেশ থেকে তার নাম যারা মুছে দিতে চেয়েছিল, তাদের ফাঁসি আমার নিজ হাতে কার্যকর করেছি। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে আমার চাওয়া, এই ঘৃণ্য অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়ার পুরষ্কার হিসেবে আমাকে একটি আবাসন ও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যেন চলতে পারি সে জন্য সহজ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন।'

সমাজের বিত্তবানদের কাছেও একই দাবি করে তিনি বলেন, 'আমার এই অসহায়ত্বের অবসান চাই। প্লিজ আমাকে বাঁচান।'

১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহজাহান ভূঁইয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

নথি অনুসারে, ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। এ ছাড়া, উভয় রায়ে তাকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড হয় তার।

শাহজাহান দাবি করেন তিনি আরও বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন। তবে, জেলের রেকর্ডে এই সংখ্যা ২৬।

গত বছরের ১৮ জুন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

 

Comments

The Daily Star  | English

Khagrachhari violence: 3 dead, 4 sent to CMCH 'with bullet wounds'

Three indigenous people died of their injuries at a hospital in Khagrachhari yesterday and early today, hours after arson attacks and violence in the district

2h ago