সবার সামনে দরপত্র বদলে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনও অফিসের মামলা
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার হাটবাজারের দরপত্র সরিয়ে অন্য আরেকজনের দরপত্র জমা দেওয়ার অভিযোগে উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিস।
গত বৃহস্পতিবার শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের হল রুমে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত নুরুজ্জামান উপজেলা দরপত্র মূল্যায়নের একজন সদস্য হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, টেন্ডার বা দরপত্র চুরির অভিযোগে মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. মোজাহিদুল ইসলাম (৪৮)। নূরুজ্জামান পলাতক আছেন। তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের অধীনে থাকা ২২টি হাটবাজারের ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের হল রুমে বিকেল সাড়ে ৩টায় দরপত্র উন্মুক্ত করার অনুষ্ঠান ছিল।
সব মিলিয়ে ৩১টি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে জামাদার পুকুর হাটের জন্য জমা পরে ২টি দরপত্র। তার মধ্যে একটি দরপত্রের খামের ওপরে কোনো নাম ঠিকানা ছিল না। অভিযোগ আছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবার অলক্ষে খামটি সরিয়ে হল রুমের বাইরে পাঠান। কিছুক্ষণ পরই ইউএনও সাইদা খানম দরপত্রটির বিষয়টি জানতে পারেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে ফেরত দিতে বলেন। নুরুজ্জামান সেই সময় খামটি বাইরে পাঠিয়েছেন বলে স্বীকার করেন কিন্তু ৩০ মিনিট পরে তিনি খামটি ফেরত দেন এবং জানান দরপত্রটি বগুড়ার কাহালু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাসিবুল হাসান সুরুজের।
চেয়ারম্যান হাসিবুল হাসানের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি নিলামে অংশগ্রহণ করেননি এবং তিনি কোনো দরপত্রও জমা দেননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে জানা যায়, জামাদারপুকুর হাটের জন্য ২ জন দরপত্র জমা দেন। তাদের একজন হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান শাহীন, অন্যজন আলহাজ্ব শেখ।
সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা অভিযুক্ত নূরুজ্জামান এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি এ কে এম জিয়াউল হক জুয়েলে দুজনই জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহীনের অনুসারী। এই কারণে তারা আলহাজ্ব শেখের দরপত্রটি সরিয়ে কম দামের অন্য একটি দরপত্র জমা দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলহাজ্ব শেখ জানান জামাদারপুকুর হাটের জন্য তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজের নামে দরপত্র জমা দেওয়া হয়।
'আমি ২২ লাখ টাকার পে-অর্ডারও জমা দিয়েছি। আমি ছাড়াও জামাদারপুকুর হাটের জন্য আরেকজনও দরপত্র জমা দেন। তবে দরপত্রের বাক্স খোলার পর আমারটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরপত্র জমা দিয়েছিলাম আমি কিন্তু একজন ইউএনওর সামনে থেকে একটি দরপত্র প্রকাশ্যে সরিয়ে ফেলা হলো, এটা কত বড় দুঃসাহস,' বলেন আলহাজ্ব শেখ।
দরপত্র চুরির বিষয়ে আমি শাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি যোগ করেন তিনি।
অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও মাঝিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি হাটবাজার করিও না। এগুলো সম্পর্কে জানিও না। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির একজন সদস্য হিসেবে ইউএনও আমাকে ডেকেছিলেন। দরপত্র বাক্সগুলো খোলার পরে একটি খামের উপরে নাম ঠিকানা ছিল না। আমি জানতে পারি দরপত্রটি আমাদের উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি এ কে এম জিয়াউল হক জুয়েলের। তাই সবার সামনে থেকে খামটি নিয়ে আমি জুয়েলকে দিই। পরে জানতে পারি সে সেটা বাইরে নিয়ে গেছে এবং ১০-১৫ মিনিট পরে আবার ফেরত দিয়েছে। এখন অভিযোগ আসছে যে জুয়েল দরপত্রটি পরিবর্তন করে দিয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।'
দরপত্র বাইরে নিয়ে গিয়ে পরিবর্তন কেন করে দিয়েছেন? ফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জুয়েল বলেন, এক মিনিট পর ফোন করছি বলে পরে আর ফোন করেননি। আবার তার ফোন নম্বরে ফোন করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সবাই উপস্থিত থাকলেও খামটি তিনি (অভিযুক্ত) চুরি করেছেন। যখন সরিয়েছেন তখন আমরা কেউ খেয়াল করিনি। বিষয়টি নজরে আসার পরেই এই হাটের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। এই হাটের টেন্ডার পুনরায় দেওয়া হবে।
Comments