সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ: দুদক
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার দুপুরে এসব অভিযোগ তদন্তে এসে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক।
দুদক তদন্ত দলের প্রধান এবং দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবর এসময় উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক বলেন, 'গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম তার প্রায় ৩ বছরের বেশি সময়কালে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।'
তিনি বলেন, 'বিশ্ব ইজতেমার খরচের ভাউচারে অনিয়ম, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া, অনেক সড়কে ইস্টিমেটের অতিরিক্ত সড়ক প্রশস্তকরণের নামে বাড়ি-ঘর ভাঙা, ভাঙা বাড়ি-ঘরের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না ইত্যাদি বিষয় অনুসন্ধান এবং তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে। এক কথায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সব ধরনের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। তদন্তকালে যেসব অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সেসব বিষয়ে মামলা হবে।'
তদন্তের অংশ হিসেবে দুদকের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন পরিদর্শন, কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসমূহ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং সত্যতা যাচাই করেছেন। প্রতিনিধি দল সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করেন।
আশিকুর রহমান আশিক আরও বলেন, 'সিটি করপোরেশনের কয়টি ব্যাংকে কয়টি হিসাব, কার নামে কীভাবে পরিচালিত হয়েছে বা হচ্ছে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া, গাজীপুরের কোণাবাড়ীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিটি করপোরেশনের নামে জাহাঙ্গীর আলমের একক স্বাক্ষরে অ্যাকাউন্ট খুলে আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্যও পাওয়া গেছে।'
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতিবছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে গাজীপুর সিটির প্যানেল মেয়র মো. আসাদুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেদিন তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় করা ৭টি মামলায় গত ২২ আগস্ট আগাম জামিন পেয়েছেন তিনি। অপরদিকে, গত ৩১ আগস্ট ফরিদপুর ৩ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটি'র পক্ষে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে, গত ২৩ আগস্ট মো. জাহাঙ্গীর আলমের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদেরকে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
Comments