মাদক কারবারে এক বছরেই কাঠমিস্ত্রি থেকে কোটিপতি!

মো. রুবেল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সীমান্তবর্তী সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের চাউরা গ্রামের বাসিন্দা মো. রুবেল মিয়া। পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। ভারত থেকে ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবা এনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি এখন কোটিপতি। কিনেছেন জমি ও গাড়ি-বাড়ি। গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন অট্টালিকা। দুই মামাতো ভাইকে নিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেন মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য।

গত ৩০ জুলাই রাতে বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকা থেকে রুবেলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে মাদক বিরোধী টাস্কফোর্স। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

গত বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রেপ্তারকৃত ৩ নম্বর আসামি মো. আইয়ূব খান মাদক পাচারের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপপরিদর্শক মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে বিজয়নগর থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় রুবেল ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত আরও ৪ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- রুবেলের ব্যবসায়িক অংশীদার, বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জালাল মিয়া (৫২), একই গ্রামের মো. আরাফাত আলীর ছেলে মো. আইয়ূব খান (৩২), একই গ্রামের মৃত ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে মো. ফিরোজ মিয়া (৪৫) ও বিষ্ণুপুর গ্রামের মো. পিন্টু মিয়ার ছেলে মো. সাদ্দাম ভূঁইয়া (২৫) ।

তাদের কাছ থেকে ১০০ কেজি গাঁজা, ৩০০ বোতল ফেনসিডিল, ৪১০ বোতল এসকাফ ও ১৬৯৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।

জানা যায়, বিজয়নগর থানায় রুবেলের বিরুদ্ধে ৪টি মাদকের মামলা চলমান রয়েছে। তবে এবারই প্রথম মাদক বিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানে তাকে আটক হয়। 

কে এই রুবেল

বছর খানেক আগেও বিজয়নগরের মিরাসানী বাজারে জহির মিয়ার ফার্ণিচার কারখানায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন চাউড়া গ্রামের মো. রুবেল মিয়া। রুবেল কাঠমিস্ত্রি পেশা ছেড়ে তার দুই মামাতো ভাই জসীম ও এমরানের মাধ্যমে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ৩২ বছর বয়সী রুবেলকে। বর্তমানে তিনি মাদকের একটি বিশাল বাহিনী তৈরি করেছেন। এই বাহিনীর অধীনে রয়েছে ৩০ জন সদস্য, ১০টি মোটরসাইকেল ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। তাছাড়া মাদক পাচারের জন্য বেশ কয়েকজন নারীকে ব্যবহার করে এই রুবেল। নারীদেরকে দিয়ে ইয়াবার আড্ডা এবং দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ব্যবসায় টিকে থাকতে নিজের এলাকা ও জেলা শহরে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটকে টিকিয়ে রাখতে নিজের এলাকা এবং জেলা শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ড খ্যাত কতিপয় প্রভাবশালীদেরকে প্রতিদিন মাদকের 'সৌজন্য' কপি সরবরাহ করে রুবেল ও তার লোকজন।

গ্রেপ্তারের পর রুবেল জানান, মামাতো ভাইদের মাধ্যমে প্রথমদিকে রাতের বেলা সীমান্তের চোরাই পথ দিয়ে মাদক বহনের কাজ করতেন। এরপর সিঙ্গারবিল বাজার কমিটির সেক্রেটারি, স্থানীয়ভাবে 'জুয়াড়ি মানিক' হিসেবে পরিচিত মানিক মিয়া, তার ভাই হানিফ, মনির ও মাদক ডিলার জলফু সর্দারের ছেলে হারুন মিয়ার সঙ্গে মিলে পুরোপুরি মাদক ব্যবসা শুরু করেন। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি খাঁটিহাতা বিশ্বরোড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গেও নিয়মিত মাদক পাচার করেন তিনি।

রুবেল আরও জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাইরে মাদক পাঠাতে স্থানীয় প্রশাসন, একাধিক জনপ্রতিনিধি ও আশুগঞ্জ সেতুর টোলপ্লাজা ফাঁড়ি পুলিশসহ একাধিক সংস্থাকে নিয়মিত ম্যানেজ করতে হয়। 

চাউড়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রুবেল বাহিনীর বিরুদ্ধে এলাকার কোনো সাধারণ মানুষ কথা বলার সাহস পায় না। ইতোপূর্বে গ্রামের কয়েকজন প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সংস্থার লোকদের মাধ্যমে‌ মাদকের মামলায় তাদেরকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান বলেন, 'রুবেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস পূর্বাঞ্চলের একজন শীর্ষ মাদক কারবারি এবং নিয়মিত মাদক সেবী। তিনি মাদক ব্যবসা করে এক বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। এই প্রথম তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাকে দ্রুত আদালত থেকে জামিনে বের করতে তারই সিন্ডিকেটের লোকজন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।'

রুবেল ছাড়াও অন্যান্য শীর্ষ মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে মাদক বিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযান নিয়মিত চলবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

18h ago