জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অগ্নিদগ্ধরা, উদ্বিগ্ন অপেক্ষা স্বজনদের

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অপেক্ষমাণ অগ্নিদগ্ধদের স্বজনরা। ছবি: স্টার

রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এক ওয়ার্ডের দিকে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে ছিলেন নূরজাহান। তার মা কমলা খাতুন এই হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।

নূরজাহান বলেন, 'আম্মার অবস্থা ভালো নয়। ডাক্তাররা তার চিকিৎসা করছেন। জানি না আমাদের ভাগ্যে কী আছে!'

তার এসব কথা শুনে পাশে থাকা ছোট বোন সুনেকা নিজের কান্না আর সংবরণ করে রাখতে পারেননি।    

সুনেকা বলেন, 'গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আম্মা দগ্ধ হয়েছেন। এখানে আমাদের কোনো দোষ ছিল না।'

ছবি: স্টার

নূরজাহান ও সুনেকার মতো আরও অনেকেই বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউ, এইচডিইউ এবং অরেঞ্জ ইউনিটের সামনে উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন।

তাদের একজন নাজিমা বেগম। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তার স্বামী আব্দুল কুদ্দুসের শরীরের বেশিরভাগই পুড়ে গেছে।

নাজিমা বলেন, 'ইফতারের কিছুক্ষণ আগে আচমকা একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। সিলিন্ডারটি লিক হয়ে গিয়েছিল এবং কেউ তা বাইরে ফেলে দেন। সেসময় রাস্তায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। কাছেই কেউ চুলায় রান্না করছিল। তাকে রান্না থামাতে বলা হলেও তিনি তা করেননি। তখনই রাস্তায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।'

'আমার স্বামী ঘটনা দেখতে গিয়ে পুড়ে গেছেন। তার সারা শরীরে আগুন ধরে যায়। হন্তদন্ত হয়ে তিনি ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে তার শরীরে মাখতে বলেন। আমি তার কথামতো কাজ করি। কিন্তু পরক্ষণেই ঘটনার আকস্মিকতায় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি', যোগ করেন তিনি।

আব্দুল রহিমের ছেলে লাদেনের শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। রহিম বলেন, 'সেসময় আমার ছেলে ঘটনাস্থলে থাকায় পুড়ে যায়। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, তার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন। ছেলের কিছু হয়ে গেলে আমার কী হবে!'  

এদিকে, গাজীপুরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের কেউই আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

ছবি: স্টার

তিনি বলেন, দগ্ধদের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সামন্ত লাল সেন বলেন, ছয়জন ইতোমধ্যে এখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। পোড়া রোগী যতক্ষণ না সুস্থ হয়ে বাসায় যায়, ততক্ষণ আশঙ্কামুক্ত বলা যায় না। অধিকাংশ রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের আগুনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৩২ জন আমাদের এখানে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি পুড়েছে ১৬ জনের।

সামন্ত লাল সেন বলেন, দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আছে ১৩ শিশু। তাদের মধ্যে ৩ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশু আছে সাতজন এবং ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছয়জন।

তিনি আরও জানান, অন্তত ১৩ জনের শরীরের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এটা এতই মর্মান্তিক ঘটনা যে রোগীদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় প্রত্যেকেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।

এ ঘটনায় রোগীদের চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোগীদের চিকিৎসায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকিটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

 

Comments

The Daily Star  | English
British Bangladeshi Labour Party lawmaker and  minister Tulip Siddiq

Tulip seeks meeting with Yunus over corruption allegations, Guardian reports

Tulip, in a letter to the chief adviser, asked for a chance to discuss the ongoing controversy during his trip to London

2h ago