পটুয়াখালী

পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ৩ বছরে বেড়েছে ৩ গুণ

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
প্রতীকী ছবি। স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তামিমের বয়স ১০ বছর। বাবা হেলাল মাতব্বর কৃষক। মা মাহিনুর গৃহিণী হলেও তাকে গরু চড়াতে মাঠে যেতে হয়। তখন তামিমকে রেখে যেতে হয় শিকলে বেঁধে।

গত ৫ জুন ব্যস্ততার কারণে তারা তামিমকে শিকলে না বেঁধেই বাড়ির বাইরে চলে যান।

তামিম বাড়ির পাশে খালপাড়ে গেলে সেখানে পানিতে পড়ে যায়। গরু চড়ানো শেষে মাহিনুর বাড়ি ফিরে ছেলেকে খালের পানিতে ভাসতে দেখেন।

তার আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা তামিমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একই দিনে একই উপজেলার হরিদেবপুর গ্রামের জলিল মৃধার ৪ বছরের ছেলে জুবায়ের বাড়ির উঠানে অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলা করছিল। বাবা-মা গেরস্থালির কাজে ব্যস্ত থাকায় এক পর্যায়ে সবার অগোচরে ঘরের পাশের পুকুরে পড়ে যায় জোবায়ের।

কিছুক্ষণ পর জুবায়েরের বাবা-মা চারদিকে খোঁজাখুঁজির পর তাকে পুকুরে ভাসতে দেখেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুধু তামিম বা জোবায়ের নয় নদীবহুল পটুয়াখালীতে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে।

একদিনেই গলাচিপা উপজেলায় ৪, কলাপাড়া ও মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ১ জন করে পটুয়াখালীতে পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে ১২ মে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ইটবাড়িয়া গ্রামে ৩ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তারা হচ্ছে সোহেল ফকিরের মেয়ে শারমিন (৫) ও ছেলে রুমান (৭) এবং তার ভাই রুবেল ফকিরের একমাত্র সন্তান মরিয়ম (৮)।

সেদিন দুপুরের দিকে সবার অগোচরে ওই ৩ শিশু বাড়ির পাশে ডোবায় গোসল করতে গিয়ে ডুবে যায়। স্বজনরা তাদেরকে উদ্ধার করে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে পটুয়াখালীতে ১০৬ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।

২০২১ সালে ৫৬ ও ২০২০ সালে ২৯ শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। আর চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ৭ জন পর্যন্ত ৪৪ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডাক্তার এসএম কবির হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদী-খাল-বিল জলাশয়বহুল পটুয়াখালীতে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা বেশি। শিশুদের ছোটবেলায় সাঁতার শেখানো ও বাড়িতে পুকুর, ডোবাসহ জলাশয়গুলোর চারপাশে বেড়া দেওয়াসহ অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন করা গেলে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমানো যেতে পারে।'

তিনি জানান, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পটুয়াখালীতে আছে অসংখ্য নদ-নদী, খাল, বিল, পুকুর, ডোবা ও জলাশয়। দিনে অভিভাবকদের কর্মব্যস্ততার সময় বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টার মধ্য পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে।

পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুহার কমাতে মিডিয়া এডভোকেসির কাজ করা বেসরকারি সংস্থা 'সমষ্টি'র পরিচালক মীর মাসরুর জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু কমানোকে গুরুত্ব দিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অধীনে "ইন্ট্রিগ্রেটেড কমিউনিটি বেইসড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম সেফ ফ্যাসিলিটিজ" প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কিছুটা দেরি হলেও আমরা চাই প্রকল্পের কাজটি সুষ্ঠুভাবে হোক।'

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্ষায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে বলে এখনই বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো উচিত।

এ ছাড়াও, অভিভাবকদের তত্ত্বাবধান ছাড়া দল বেঁধে বা শিশুদের একা একা জলাশয়ে গোসল করতে দেওয়া থেকে বিরত রেখে এই হার কমানো যেতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

Comments

The Daily Star  | English

Pilots faked flying records

CAAB inquiry finds, regulator yet to take action

11h ago