ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ছে জাপান

ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ফাইল ছবি: রয়টার্স

 

বিভিন্ন মহলের সমালোচনা সত্ত্বেও সুনামিতে বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়তে শুরু করেছে জাপান।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রায় ২ বছর আগে জাপান সরকার এবং গত মাসে জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ এই উদ্যোগের অনুমোদন দেয়।

এর মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পুরোপুরি অকার্যকর করার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শুরু হল। পরবর্তীতে এখান থেকে গলিত জ্বালানিও সরানো হবে।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার (টেপকো) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১টা বেজে ৩ মিনিট থেকে (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা বেজে ৩ মিনিট থেকে) সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়নি।

এই উদ্যোগের সবচেয়ে বড় সমালোচক চীন। চীনের পারমাণবিক নিরাপত্তা প্রশাসনের মুখপাত্র বৃহস্পতিবার বলেন, জাপান সরকার 'অত্যন্ত স্বার্থপর ও কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছে। জোর করে সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পানি ছেড়ে দিয়ে তারা সমগ্র মানবজাতির মঙ্গল উপেক্ষা করে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে পড়ে আছে।'

জবাবে টোকিও জানিয়েছে, চীন 'অবৈজ্ঞানিক ও অসমর্থিত দাবি' জানাচ্ছে। তাদের দাবি, সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া পানি নিরাপদ এবং এতে মানুষ ও পরিবেশের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

চীন ছাড়াও এ অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রও এই উদ্যোগে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

দ্বীপ রাষ্ট্র কুক আইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক ব্রাউন জানান, জাপানের সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সমর্থনযোগ্য হলেও এ অঞ্চলের বাসিন্দারা এই 'জটিল' বিষয়টিতে একমত নাও হতে পারে।

জাপানের মৎস্য খাত সংশ্লিষ্টরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। সুনামিতে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হলে এ অঞ্চলে মাছ ধরার কার্যক্রমের ওপর বড় আকারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে—তেজস্ক্রিয়তার আশঙ্কায় এ এলাকার মাছ কিনতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। এই খাতের নেতারা ধারণা করেন, এই উদ্যোগে তাদের বিক্রি কমে যেতে পারে এবং বিভিন্ন বাজারে তাদের পণ্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

হংকং ও ম্যাকাউ আজ বৃহস্পতিবার থেকে ফুকুশিমা ও টোকিওসহ জাপানের কিছু এলাকা থেকে আসা সামুদ্রিক মাছ ও মাছ থেকে তৈরি খাবারের (সিফুড) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে।

শুরুতে অল্প পরিমাণে পানি ছাড়া হচ্ছে। প্রথম ১৭ দিনে ৭ হাজার ৮০০ ঘনমিটার আয়তনের পানি সমুদ্রে ছাড়া হবে। এ পরিমাণ পানি দিয়ে ৩টি অলিম্পিক মানদণ্ডের সুইমিং পুল সম্পূর্ণ ভরে ফেলা যাবে।

টেপকোর প্রত্যাশা, ১৩ লাখ মেট্রিক টন তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলতে মোট ৩০ বছর সময় লাগতে পারে।

ইতোমধ্যে নাগরিক সংগঠনগুলো জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এ বিষয়টির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার জানিয়েছে, তাদের নিরীক্ষা অনুযায়ী ফুকুশিমার পানি সাগরে ছাড়ার বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

ফুকুশিমার পানি সাগরে ছাড়ার উদ্যোগের প্রতি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন জাপানীরা। ছবি: রয়টার্স
ফুকুশিমার পানি সাগরে ছাড়ার উদ্যোগের প্রতি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন জাপানীরা। ছবি: রয়টার্স

২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সুনামি আঘাত হানে জাপানে। এতে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩টি চুল্লি প্লাবিত হয়। চেরনোবিলের পর এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত।

এই ঘটনার পরে কেন্দ্রের আশেপাশের অঞ্চল থেকে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ওই অঞ্চল এখনো ফাঁকা রাখা হয়েছে।

এরপর থেকে পারমাণবিক চুল্লির ধ্বংসস্তূপে পাম্পের মাধ্যমে ঠাণ্ডা পানি প্রবাহিত করা হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে, চুল্লিতে মাটি থেকে ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে, যার ফলে তেজস্ক্রিয় পানির পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে গেছে—যার সংরক্ষণ ও পরিশোধন প্রয়োজন।

এ মুহূর্তে টেপকো ১ হাজার বড় ট্যাংকে ১৩ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন তেজস্ক্রিয় পানি সংরক্ষণ করছে, যা দিয়ে ৫০০টিরও বেশি অলিম্পিক গেমসের সুইমিং পুল ভরে ফেলা সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago