ওডিশার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হত্যাকারী এএসআই গোপাল সম্পর্কে যা জানা গেল

ওডিশা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নব কিশোর দাসের হত্যাকারী এসআই গোপালের বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল এবং তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিত্সাধীন ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
ওডিশা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নব কিশোর দাসের হত্যাকারী এসআই গোপালের বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল এবং তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিত্সাধীন ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) গুলিতে রোববার নিহত হন ওডিশা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নব কিশোর দাস (৫৭)।

হত্যাকারী এএসআই গোপালকৃষ্ণ দাসের মানসিক রোগ ছিল বলে জানা গেছে। তা স্বত্বেও, তার কাছে একটি সার্ভিস রিভলভার ছিল এবং সেটি দিয়ে তিনি ঝাড়সুগুড়া জেলার ব্রজরাজনগর শহরে জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় মন্ত্রী কিশোর দাসকে গুলি করেন।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গোপাল দাস ওডিশার গঞ্জাম জেলার জলেশ্বরখণ্ডি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি কনস্টেবল হিসেবে বেরহামপুরে তার কর্মজীবন শুরু করেন/ প্রায় ১২ বছর আগে তিনি ঝাড়সুগুড়া জেলায় বদলি হন।

এএসআই গোপালের বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল এবং তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিত্সাধীন ছিলেন। সর্বশেষ এক বছর আগে তিনি তার চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

বেরহামপুরের এমকেসিজি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান ডা. চন্দ্র শেখর ত্রিপাঠি তার চিকিৎসা করেছিলেন।

ডা. ত্রিপাঠি গণমাধ্যমকে বলেন, 'গোপাল দাস প্রায় ৮-১০ বছর আগে আমার ক্লিনিকে এসেছিলেন। তিনি খুব সহজেই রেগে যেতেন এবং এর জন্য তার চিকিৎসা চলছিল।'

'তবে তিনি নিয়মিত ওষুধ খেতেন কি না, আমি নিশ্চিত নই। নিয়মিত ওষুধ না খেলে এ রোগ আবার দেখা দেয়। গত প্রায় ১ বছর আগে তিনি আমার সঙ্গে শেষবার দেখা করেছিলেন,' বলেন ডাক্তার।

গোপালের স্ত্রী জয়ন্তীও নিশ্চিত করেছেন যে তার স্বামী মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ খেতেন। তিনি বলেন, 'তিনি আমাদের থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকেন। তাই তিনি নিয়মিত ওষুধ খেতেন কি না, আমি বলতে পারব না।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইপোলার ডিসঅর্ডার হলো মানসিক স্বাস্থ্যগত অবস্থার বিপরীতমুখী পরিবর্তন। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কখনো ভালো আবার কখনো বিষণ্ণতা বা মন খারাপের মধ্যে থাকেন। তবে কাউন্সেলিং ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এদিকে, ঝাড়সুগুড়া পুলিশের এসডিপিও গুপ্তেশ্বর ভোই বলেন, এএসআইকে গোপাল ব্রজরাজনগরের গান্ধী চকের একটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ করার পরে তাকে একটি লাইসেন্স করা পিস্তল দেওয়া হয়।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, রোববার ব্রজরাজনগরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নব কিশোরের সফরের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার জন্য এএসআই গোপাল দাসকে নিয়োজিত করা হয়। মন্ত্রীর ওপর গুলি চালানোর আগে তিনি তার মোটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে রাখেন।

হত্যাকারী এএসআই গোপালকৃষ্ণ দাসের মানসিক রোগ ছিল বলে জানা গেছে। ছবি: সংগৃহীত
হত্যাকারী এএসআই গোপালকৃষ্ণ দাসের মানসিক রোগ ছিল বলে জানা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

সেখানে মন্ত্রী গাড়ি থেকে নামার পর সমর্থকরা যখন তাকে মালা পরাচ্ছিলেন, তখন গোপাল তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান বলে জানা গেছে।

ঘটনার পরপর গোপাল ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করলেও তাকে আটক করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এসডিপিও গুপ্তেশ্বর বলেন, 'তাকে দ্রুত আটক করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।'

তবে মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হত্যার মামলার তদন্তভার নিয়েছে ওডিশা পুলিশের অপরাধ শাখা (ক্রাইম ব্রাঞ্চ)। সাইবার বিশেষজ্ঞ, ব্যালিস্টিক বিশেষজ্ঞ এবং ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসারদের সমন্বয়ে ৭ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত দলের প্রধান পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা রমেশ ডোরা ইতোমধ্যে একজন ব্যালাস্টিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ঝাড়সুগুড়া পৌঁছেছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

4h ago