সোনার মানুষটিকে আমরা কোথায় রাখলাম
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2024/03/29/ibraahiim_khaan.jpg?itok=Ly660xh7×tamp=1711711510)
'নিজের ঘরেই উপেক্ষিত প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ' ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ডেইলি স্টারের বাংলা ভার্সনের একটি সংবাদ। ইমরান মাহফুজের লেখাটি পড়ে থমকে গেলাম। মনের মধ্যে এক ধরনের বিষাদ ঝড় বইলো। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চোখ এড়ানো যায় না। পরম সত্য উন্মোচিত হয় জনগণের সামনে। তাই হলো। ইবরাহীম খাঁকে নিয়ে এমন অবহেলা কেন? কারণই বা কী? অনেক প্রশ্নই মনের অজান্তে আবডালে উঁকি দিতে লাগলো। ভাবলাম, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর চিরস্মরণীয় বাণী- 'যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণীর জন্মা হয় না'-এই বাক্যের সারতা অনুধাবন মানেই হলো সমাজ-সংস্কৃতির অনিবার্য পতন।
আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ। প্রভাতের তরুণ অরুণিমাকে অতিক্রম করে মধ্যাহ্নে সূর্যের উজ্জ্বল প্রাখুর্য্যের ন্যায় তাঁর আবির্ভাব-টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরের বিরামদি গ্রামে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে। মৃত্যুবরণ করেন ৮২বছর বয়সে। ব্রিটিশ বিরোধী ডামাঢোলে বেড়ে ওঠা জীবনপর্বে মননে ধারণ করেছিলেন মুক্তির পথ। আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে অর্থ, সময় ও শ্রম অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। বিস্তর অবদান রেখেছেন সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজ সংস্কারে। গ্রামের খেটে খাওয়া দিনমজুরের ভাগ্য ফেরাতে দিনরাত ভেবেছেন। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতে কাজ করেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
মানবতার ফেরিওয়ালা মানুষটি অনেকক্ষেত্রেই এখন উপেক্ষিত। তাই তো মাঝে মধ্যে পত্রিকায় শিরোনাম হয়, তাকে নিয়ে আর আগের মত চর্চা হয় না। তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সমাজে আলো ছড়ালেও তাঁর কীর্তি ও লেখা আলোকসম্পাত হয়নি এখনও। এসব অমূল্য রচনাবলী সযত্নে রাখা হয়নি তাঁর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানেও। নিজের ঘরেই উপেক্ষিত তিনি। দায়সারাভাবে সীমিত পরিসরে জন্ম-মৃত্যু যাপিত হয় প্রতিবছর। সমাজপরিবর্তনের অগ্রপথিক ইবরাহীম খাঁ কেন চর্চা থেকে দূরে? তাকে কি তাহলে আমরা ভুলেতে বসেছি? সঙ্গত প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘোরপাক খায়- হীরের টুকরোটিকে আমরা তাহলে কোথায় রাখলাম?
সাহিত্যে তিনি মানবতাকে স্থান দিয়েছেন। রম্যরস ও কৌতুকে বিষয়-বৈচিত্র্য আশ্রিত জীবনীগ্রন্থ 'বাতায়নে' বলেছেন, 'সাহিত্যকে বড় লোকের ইমারতের সামগ্রী না করে আমি দীনহীন দরিদ্র জনতার দরবারে কিছু কিছু খবরাখবর দেবার কোশেশ করেছি।' ইবরাহীম খাঁর এ উক্তির যার্থার্থ্য প্রমাণ মেলে।
গ্রামের মেঠোপথকে তিনি আলোকিত করেছেন। সমাজের দ্যুতি হয়ে দূর করেছেন অন্ধকার। শিক্ষা, সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে আছে অনন্য ভূমিকা। মনে করতেন-শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই দেশের সম্পদ, দেশ পরিবর্তনের কারিগর। প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা। মানুষকে ভালোবাসতেন, ছুটে যেতেন অপরের কল্যাণে। দুঃখী ও অসহায় মানুষকে সেবা দিয়েছেন অকাতরে। যুগ সন্ধিক্ষণের নতুন পথের দিশারি, বাংলার আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র, মানুষের মণিকোঁঠায় ঠাঁই নেয়া টাঙ্গাইলের তথা বাংলাদেশের অন্যতম গৌরবময় মানুষ ইবরাহীম খাঁ।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ছিলেন বলে তাঁর নামের আগে 'প্রিন্সিপাল' শব্দটি দেদীপ্যমান। অপরের কল্যাণে অনসন্ধিৎসু মন ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতির প্রভূত কল্যাণে আত্মনিবেদিত এই প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেছিলেন পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সমাজের উপযোগিতার আজীবন সংগ্রামী মানুষ। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, জ্ঞানতাপস, সমাজ-সংস্কারক, রাজনীতিবিদ, আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী-প্রভৃতি গুণের সমাহারে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন, তবে ধর্মান্ধ ছিলেন না। ছিলেন পরোপকারী ও সংবেদনশীল। কথাবার্তায়, ভাষাব্যবহারে সবসময় গ্রামীণ-ঐতিহ্যগত শৈলী অনুসরণ করতেন।
ইবরাহীম খাঁর বাড়ির নাম ছিলো 'দখিন হাওয়া'। সর্বসাধারণের আস্থার এই আশ্রয়স্থলে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন। সরল ভঙ্গিতে ইবরাহীম খাঁ জিঞ্জেস করতেন, 'কী করতে পারি আপনার জন্য?' সাহায্যপ্রার্থী লোকজন নিঃসঙ্কোচে মেয়ের বিয়ের টাকা, ছেলে-মেয়ের পরীক্ষার ফিস কিংবা মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য দান চাইতেন। সবার জন্য ব্যাকুল হয়ে কাজ করতেন তিনি। পরের তরে নিজেকে সপে দিয়েছেন আমৃত্যু। তাই তিনি হয়েছিলেন সবার 'বন্ধু'।
সাহিত্যে ইবরাহীম খাঁর অবদান অনস্বীকার্য। স্মৃতিকথা, শিক্ষা-সাহিত্য-ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধ, নাটক, ভ্রমণ কাহিনী, রসরচনা, গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস ও জীবনচরিত, শিশু সাহিত্য, পাঠ্যবই ও তরজমাসহ তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। এসব গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-কামাল পাশা, আনোয়ার পাশা, কাফেলা. বৌ বেগম, আল বোখারা, বাতায়ন, ইস্তাম্বুল যাত্রীর পথ, ইসলামের মর্মকথা, সোনার শিকল, ভাঙা কুলা, আরব জাতি প্রভৃতি। জীবন ও বোধের সমন্বয়ে রচিত তাঁর লেখাগুলো সগৌরব বাঙালি মানসলোক নির্মাণের আকাক্সক্ষা, চিন্তা-চেতনা, সংস্কার ও সমন্বয়বাদী মানোভাবের স্ফুরণ ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। জীবনের যে প্রয়োজনে তিনি ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে সচেষ্ট ছিলেন, সেই জীবনেরই সমৃদ্ধি সাধনাকে তিনি তাঁর সাহিত্য সাধনার উপলক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন।
উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, জীবনী, ভ্রমণকাহিনী, ছড়া ও শিশুতোষ রচনায় সমাজ পরিবর্তনের ইঙ্গিত আছে। চিরায়ত বাঙালির গ্রাম-বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি, মনোহরি গ্রাম্যজীবনের প্রাণোচ্ছল চিত্র ও স্বপ্ন দোলিত হয়েছে তাঁর রচনায়। সাহিত্যে তিনি মানবতাকে স্থান দিয়েছেন। রম্যরস ও কৌতুকে বিষয়-বৈচিত্র্য আশ্রিত জীবনীগ্রন্থ 'বাতায়নে' বলেছেন, 'সাহিত্যকে বড় লোকের ইমারতের সামগ্রী না করে আমি দীনহীন দরিদ্র জনতার দরবারে কিছু কিছু খবরাখবর দেবার কোশেশ করেছি।' ইবরাহীম খাঁর এ উক্তির যার্থার্থ্য প্রমাণ মেলে। তিনি কেবল উচ্চশ্রেণির ভাষাকে অবলম্বন করে সাহিত্য রচনা করেননি। আটপৌরে গ্রামীণ ভাষায়, আঞ্চলিক বাক রীতিতে, গণমানুষের মুখনিঃসৃত বাক্যালঙ্কারে তাদের সহজ সরল জীবন ও বোধবিশ্বাসকে সহজ উপলব্ধির উপযোগী করে তিনি প্রকাশ করেছেন। তাঁর লেখায় একাডেমিক শৈলীর পরিবর্তে ঘরোয়া রীতি, মজলিশী ঢং, চলতি আরবি-ফারসি মিশ্রিত ভাষা, আঞ্চলিক বুলির ব্যবহার, কৌতুক পরিভাষা প্রয়োগ প্রভৃতি বাক্সময় হয়ে ওঠেছে।
ইবরাহীম খাঁ সর্বদা আধুনিক। বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে তার দৃষ্টান্ত প্রচুর। 'বিলাতে পর্দা'-স্মৃতিচারণে তিনি লিখেছেন-'বিয়ের পর রেভারেন্ড জনস্টন একদিন আমাদের ইংরেজি অনার্স ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরকে তার বাড়িতে দাওয়াত করলেন। মেম সাহেবের সঙ্গে পরিচয় হলে তিনি বললেন, আমি বড্ড একা পড়ে গেছি। চাকরেরা আমার কথা বোঝে না, আমি তাদের কথা বুঝি না।
'সে তো অমন হওয়ার কথা। কিন্তু এর প্রতিকারের পথই বা কী?
'তোমরা যদি মাঝে মাঝে আস, তবে তোমাদের সাথে কথা বলে চিত্তের গ্লানি খানিকটা কমাতে পারি।'
'তা খুব আসতে পারি। কোন সময় আসব?'
'রেভারেন্ড জনস্টন যখন বাড়িতে থাকেন, সেই সময়টায় এস।'
ইনি আমাদের চেয়ে বয়সে বড়, বিদ্যায় বড়, সম্বন্ধে মাতৃস্থানীয়া, অথচ ইনিও বলছেন-স্বামী যখন বাড়ি থাকেন, সেই সময় এস।
চল্লিশ বছর পর এবার ইডেন কলেজের অধ্যাপিকা মিসেস আখতার ইমামের সঙ্গে বিলাতের পর্দার কথা আলোচনা হল। তিনি তাঁর ছোট মেয়ে নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে বোর্ডের অফিসে এসেছিলেন। তাঁকে বললাম, 'আপনার বড় মেয়ে কই?' তিনি বললেন, 'তাকে নিয়ে আপনার বাড়ি যাব, এখানে তাকে আনব না।' এরপর নিজেই কৈফিয়তের সুরে বললেন, বিলাতে তিন বছর থাকার ফলে এই ধারণা হৃদয়ে আরও বদ্ধমূল করে ফিরলাম যে মেয়েদের শালীনতা রক্ষা করে চলতেই হবে। এ শুধু ধর্মে চায় না, এ চায় সমাজ, এ চায় সংস্কৃতি, এ চায় সুরুচি।'
শিকড় সন্ধানী সাহিত্যিক ইবরাহীম খা উচ্চারণ করেছেন অসহায়দের মনের বাসনা। তিনি লিখেছেন, 'আমি বিদেশে আসার আগে অনেকের আবদার থাকে কোনো কিছু আনার। একমাত্র কাজের মেয়েটি বলেছিল, দাদু, তুমি ঠিকঠাক ফিরে এসো। আজ তাই বেইজিং-এর প্রান্তরে এসে ভাবছি যার দরকার বেশি সে চায় না, যে আমার কাছের নয়, সেই আপনের মত ভালোবাসে।' তাঁর এসব লেখায় মূলত বিধৃত হয়েছে বৈষম্যহীন মনোভাবের কথা।
সমাজের কল্যাণই ছিল ইব্রাহীম খাঁর ব্রত। দুস্থ ও অসহায় মানুষের সমন্বয়ে গড়া সমাজের সাবির্ক মঙ্গল চিন্তায় তাঁর চিত্তে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, তা থেকেই তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে লিখেছিলেন, 'সমাজ মরতে বসেছে। তাকে বাঁচাতে হলে চাই সঞ্জীবনী সুধা।' সামাজিক জাগরণ, সমাজ সংস্কার, মানব কল্যাণ ও জাগৃতির কাজে ইবরাহীম খাঁ সাহিত্যকে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তাই তো তাঁর সাহিত্য চর্চা কেবল আর্ট নয়, জীবনের বাণীও।
বর্তমান সমাজেও ইবরাহীম খাঁ প্রাসঙ্গিক। ঘুণে ধরা সমাজের কারণ বলতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন, 'ক্রমে সমাজ স্বাধীন চিন্তার দ্বার অবরুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার পতন, সাংস্কৃতিক পতন, শক্তির পতন-ই এই পশ্চাৎপদতার জন্য দায়ী। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও ইবরাহীম খাঁ কলম ধরেছেন। শিশু শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি শিক্ষার হালচাল ও করণীয় বিষয়ে তাঁর সুচিন্তিত মত আজও সমসাময়িক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ' কোন ক্রটির জন্য দায়িত্ব যার, ক্রটি সংশোধনীর দায়িত্বও তারই নেওয়া উচিত। আমাদের দেশের শিক্ষার ত্রুটির দায়িত্ব কারো নয়, কাজেই সে ত্রুটি দূর করার দায়িত্বও কারো নয়, দায়িত্ব এড়ানোর এই যে সর্বব্যাপী প্রচেষ্টা, ব্যারামের প্রধান কারণ এখানেই।'
উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকের ভূমিকাকে তিনি বড় করে দেখেছেন। ১৯৪৭ সালে কুমিল্লার এক অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনি বলেন, 'সময়ে অসময়ে সকারণে অকারণে নিজ সাময়িক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ছাত্রদের ডেকে ডেকে আমরা শিক্ষরাই তাদের চিত্তে বিভ্রম জন্মেয়েছি। ছেলেরা যে পড়াশুনায় আগের তুলনায় কম করতে চায় তার এক বড় কারণ আমার মনে হয় এই যে, তারা ক্রমে শিক্ষকদের পড়ানোর প্রেরণা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।'
রাজনীতিতে ইবরাহীম খাঁ অংশগ্রহণ করেছিলেন। বড় বড় পদেও অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মতের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের বনীবনা না হওয়ায় তিনি পরবর্তীকালে সেখানে টিকতে পারেননি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। একবার করটিয়া অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। ইবরাহীম খাঁ ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করে সেই টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিলিয়ে দেন। এরকম অসংখ্য নজির তিনি স্থাপন করে গেছেন।
প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ পূর্ব ও পশ্চিম উভয় বাংলায়ই বেশ জনপ্রিয়। তাঁর রচনাগুলো আজও পড়–য়া পাঠক খুঁজে ফেরে। কিন্তু অধিকাংশ বই দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় পাঠক তা সংগ্রহ করতে পারছেন না। বাংলা একাডেমি ১৯৯৪ সালে ইবরাহীম খাঁ রচনাবলী প্রকাশ করে। ১ ও ২ খণ্ডে রচনার মধ্যেই তা সীমিত হয়েছে। আরও রচনা সংকলন করার কথা থাকলেও আজ অবধি আলোর মুখ দেখেনি। অথচ সুধী সমাজ গঠনে ইবরাহীম খাঁ পাঠ খুব প্রয়োজন। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, জাতীয় গ্রন্থ সংস্থা, বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে।
মূল্যবোধ ও আদর্শ বিচ্যুত সমাজে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ চর্চা সময়ের দাবি। ন্যায় ও আদর্শের এই গুরু বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাঁর জীবন- কর্ম অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মাধ্যমে স্বকীয় সংস্কৃতির খোঁজ পাব আমরা সহজেই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমান প্রজন্ম তাঁকে ভুলতে বসেছে। ' সোনার হরফে লেখা নাম'-গল্পের মূল চরিত্র বড় মিয়া সমাজহিতৈষী, অপরের কল্যাণে নিবেদিত। ইবরাহীম খাঁ তাঁকে চিত্রিত করেছেন সমাজের কল্যাণকামী মানুষ, জনদরদী হিসেবে। অপরের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে বড় মিয়া মানুষের মাঝে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠেছেন। বড় মিয়া তাই সমাজের পরোপকারী বন্ধু।
অপরের হিতার্থে জীবন উৎসগ করে বড় মিয়া সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাই বড় মিয়ার নাম সুবিধাবঞ্চিত ও দুঃখী মানুষের হৃদয়ে সোনার হরফে লেখা থাকবে বলে গল্পকার মত দিয়েছেন। এই বড় মিয়া প্রকৃতার্থে আমাদের আলোচ্য মনীষী। কিন্তু বড় মনের মানুষটিকে আমাদের মনের আঙিনায় সোনার হরফে রাখতে পেরেছি কি? এ প্রশ্নের সদুত্তরের মধ্য দিয়েই আমাদের মূল্যবোধের সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার সম্ভব বলে মনে করি।
Comments