বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ

আত্মপরিচয়ের সন্ধানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগ

বাঙালি চিন্তার সংকলন 'চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ' এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কথা বলছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ছবি: সংগৃহীত

আত্মপরিচয়ের সন্ধানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অসামান্য উদ্যোগ 'বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ'। এর প্রকাশনা উৎসবে প্রথম মনে পড়লো চলচ্চিত্রকার, গবেষক ও কবি সাজেদুল আউয়াল ভাইয়ের কথা। আপাদমস্তক চলচ্চিত্র চিন্তার মানুষ ছিলেন তিনি। নিজের বিষয়ে কি যে ভীষণ মগ্নতা, আর গভীরতর সিরিয়াসনেস! তার হাতেই সংকলিত হয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই মহৎ ও সুবৃহৎ প্রকাশনার ১০ খণ্ডের 'বাঙালির চলচ্চিত্র চিন্তা'।

যেদিন বাঙালির চিন্তার সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক মিটিং তিনি প্রায় বলতেন, কিভাবে এই কাজ শেষ করব? সায়ীদ স্যারকে কথা দিয়েছি দ্রুততম সময়ে বাঙালির চলচ্চিত্র চিন্তার কাজটি শেষ করব। তিনি যা সংগ্রহ করতেন তা খুব সুনিপুনভাবে করতেন। এবং সবসময় তার অভিপ্রায় ছিল এতো কষ্ট করে তিনি এগুলো চূড়ান্ত করছেন, তার সবগুলোই চলচ্চিত্র চিন্তায় রাখতে হবে। সায়ীদ স্যার তার আবেগ বুঝতেন, দেখতেন তার বিষয়প্রেম আর পরিশ্রম করার নিবিষ্ট ক্ষমতা। খুব স্থিরভাবে এমনসব লেখাকে এই প্রকাশনায় আশ্রয় দিতে হবে, যাতে সেগুলো সেরার সেরা লেখা হয়ে ওঠে। বলা ভালো সাজেদুল আউয়াল ভাই খুব আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন। সায়ীদ স্যারের সঙ্গে কথা শেষ করে আমার রুমে বসে বলতেন, দেখেন তো কত কষ্ট করে এসব সংগ্রহ করছি, পড়ছি, বাছাই করছি, আর স্যার বলছেন আরও শক্তহাতে বাছাই করতে হবে!

সাজেদুল আউয়াল ভাইকে স্মরণ করে এই সুবৃহৎ প্রকাশনার পেছনের স্মৃতিবিধূর হয়ে উঠছি। ২০০০ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যোগ দেই কেন্দ্র সমন্বয়কারী হিসেবে। সে বছরেই স্যার এই প্রকাশনার কাজের পরিকল্পনার একটা বাস্তবরূপ দিতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। প্রথম দিকে এই কাজের আগা মাথা কিছুই বুঝতাম না। প্রকল্পের তখনো বাস্তবতা কেমন হবে ঠাওর হয় নাই কারো। তবুও সায়ীদ স্যারের ইচ্ছা বাস্তবায়ন হতে শুরু হয়। কবি ও সংগঠক শওকত হোসেন যোগ দিলেন প্রকল্পের সংকলক ও সংগ্রাহক হিসেবে। শওকত হোসেন একজন তেজী, জেদি, একরোখা, লক্ষ্যভেদী, লড়াকু মানুষ। এর প্রথম ভিত তার পরিশ্রম আর জেদের কারণেই অনেকটা গতি পায়। একে একে বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক যুক্ত হতে থাকল।

সায়ীদ স্যার নানাভাবে চিন্তা করে  একদল উদ্যমি, পরিশ্রমী তারুণ্যকে যুক্ত করলেন। জাকির তালুকদার, আহমাদ মোস্তফা কামাল, চঞ্চল আশরাফ, আহমাদ মাযহার, আকিমুন রহমান, মুশফিকুর রহমান, সাখাওয়াৎ আনসারির সঙ্গে যুক্ত হলেন মইনুদ্দীন খালেদ, বিশ্বজিৎ ঘোষ, সৈয়দ আজিজুল হক, হারাধন গাঙ্গুলী, মো. মোফাখখারুল ইসলাম, প্রদীপ রায়, খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন প্রমুখ। হারাধন গাঙ্গুলি সুদূর নারায়ণগঞ্জ থেকে আসতেন।

মনে পড়ে প্রথমে প্রতি সপ্তাহে পরে ১৫ দিন পরপর পরে বাঙালি চিন্তার আসর বসতো কেন্দ্রে। বিকেল থেকে গভীর সন্ধ্যা পর্যন্ত। কি হতো সেই আসরে? প্রশ্ন উঠলো যেসব লেখা সংগৃহীত হবে, তা বাছাই হবে কিভাবে? অনেক চিন্তার পর একটা উপায় বের করলেন স্যার। সেটা হল যার যেটা বিষয়, সেই বিষয়ে যেসব ম্যাটার সংগৃহীত হবে, সেই বিষয়ের যিনি সম্পাদক, তিনি তা পড়বেন। সপ্তাহান্তে সেই পঠিত বিষয়ে সকল সম্পাদকের উপস্থিতিতে আলোচনা করবেন। সেখানেই ঠিক করা হবে কোন লেখা রাখা হবে, কোনটা নয়। ফায়দা দুটো এক. সম্পাদকরা বিষয় সম্পর্কে পড়তে পড়তে সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন। দুই. একজন সম্পাদক তার নির্দিষ্ট বিষয়ই পড়ছেন, কিন্তু আসরে বসে শুনছেন অন্যান্য বিষয়, সেটা একটা বাড়তি লাভ। স্যারের বক্তব্য হলো যিনি বাঙালির শিক্ষা চিন্তা নিয়ে পড়ছেন, তিনি বাঙালির ধর্ম-সংস্কৃতি-সংগীত-চলচ্চিত্র-সমাজ-রাজনীত ইত্যাদি বহুবিধ বিষয় সম্পর্কে না পড়ে, শুনে শুনেই জানতে পারছেন। আর আমরা যারা কোন কিছুই পড়ছি না, তারা সহজে সব বিষয় সম্পর্কেই ধারনা পাচ্ছি। বলা ভালো স্যারের এই 'পাঠমডেল' ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠল।

সম্পাদকদের মধ্যেও একটা নীরব প্রতিযোগিতা চলতে লাগল, কে কত গুছিয়ে নিজের বিষয়টি আসরে প্রকাশ করতে পারেন। এই আসরগুলো সত্যি সত্যিই এক অসাধারণ চিন্তামূলক আড্ডা আর বিতর্কের বৈঠক হয়ে গেল। সেইসব আসরে আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম আহমাদ মোস্তাফা কামাল, চঞ্চল আশরাফ, জাকির তালুকদার, সৈয়দ আজিজুল হক, বিশ্বজিৎ ঘোষ, মইনুদ্দীন খালেদ, আকিমুন রহমানসহ অন্যদের আলোচনা।

এই পড়ার আসর পরে আড্ডা আর বৈদগ্ধময় আলোচনার আসরে জমে উঠল। রাত বেড়ে যেত বলে পরে স্টিলের বড় থালায় কেন্দ্রের লোভনীয় নৈশখাবারও এক আকর্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়াল। একসময় দেখা গেল, এই যে শয়ে শয়ে পাতা পড়া হচ্ছে এর একটা ইনসেন্টিভ থাকা দরকার। ঠিক হলো প্রতি পাতা পড়ার জন্য দেয়া হবে পাঁচ (৫) টাকা সম্মানী। শওকত হোসেন আর আলাউদ্দীন সরকারের কাজ বেড়ে গেল। কোন সম্পাদক কোন বিষয়ে কত পাতা পড়ছেন, তার হিসাব রাখা, সম্মানী বুঝিয়ে দেয়া। এই যে পৃষ্ঠাপ্রতি পাঁচটাকা , এটা যোগাড় করতেই তখন ভীষণ টানাপড়েন। আদৌও এই প্রজেক্ট কত বড় হবে, কত সাবজেক্ট যুক্ত হবে, কোন বিষয় কত খণ্ড হবে, সেটা ঠিক পরিকল্পনা করে ওঠা তখনো সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব হয় নাই। এই আসর ভিন্নভাবে জমিয়ে রাখতেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। তিনি ভীষণ আড্ডাবাজ ও ঠোঁটকাটা মানুষ। বলতেন স্যার টাকা একটু বাড়ান। এই এক টাকায় তো হয় না। 

স্যায়ীদ স্যার হাসতে হাসতে বলতেন, 'খালেদ, টাকা টাকা কোরো না, কাজ কর, কাজই টাকা এনে দেবে।' খালেদ ভাই হয়তো হাসতে হাসতে পাল্টা কিছু বলতেন। এভাবে আড্ডায়, কথায়, খাবারে জমে উঠতে থাকল প্রকল্প। পরে আরও বেশ কিছু সম্পাদক যুক্ত হয়েছেন এই প্রকল্পে। সম্পাদকদের মধ্যে বাঙালির সঙ্গীত চিন্তার ড. করুণাময় গোস্বামী এই প্রকাশনা বাস্তবরূপ পাবার আগেই লোকান্তরিত হয়েছেন। তেজি-দরাজ গলার সুপুরুষ ইতিহাস চিন্তার মো. মোফাখখারুল ইসলাম এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে হাজির হলেন হুইলচেয়ারে বসে। আসলে সময়তো কম নয়। ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সাল-প্রায় চব্বিশ বছরের শ্রম। অনেক সময়, অনেক ঘটনা, অনেক পর্যায়, অনেক বাধা-বিপত্তি- অস্পষ্টতা-সংশয়, অনেক ধূলি ধূসরতা সরিয়ে এই সুবৃহৎ প্রকাশনা বই আকারে বাস্তবে রূপ পেলো।

মোড়ক উন্মোচন পর্বে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ গ্রন্থমালার অন্য সম্পাদকরা। ছবি: সংগৃহীত

সায়ীদ স্যার রেঁনেসার আকুতিভরা মানুষ। কেন্দ্রের প্রতিটি কাজে তার প্রতিফলন আছে। বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ প্রকল্প তার অন্যতম। এটা স্যারের বহুবছরের চিন্তার ফসল। গত ২৪ বছর ১৬টি বিষয়ে ২০৮ খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে ৭৪ হাজার পৃষ্ঠার বৃহৎ রচনা সংগ্রহ। প্রকল্পটিতে বহু মানুষ বহুভাবে যুক্ত হয়েছেন। বিশেষ করে  প্রকল্পের প্রথম দিকে ম্যাটার সংগ্রহ হবার পর চ্যালেঞ্জ দেখা দিল প্রুফ রিডিং ও বানান সমন্বয় বিষয়ের। দেশের সেরা প্রুফ রিডার তরুণ কুমার মহলানবিশ, সেলিম আলফাজ যুক্ত হলেন, তারপর একে একে এই প্রুফযজ্ঞে সম্পৃক্ত হলেন ফরহাদ খাঁ, আবদুস সাত্তার, ফরিদুল আলম প্রমুখ। এই প্রকল্প বাস্তবে রূপ নেবার আগে লোকান্তরিত হয়েছেন তরুণ কুমার মহলানবিশ।

বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত ষোলটি বিষয়। যেমন, ইতিহাস(১৮ খণ্ড), দর্শন(২০ খণ্ড), ধর্ম(২০ খণ্ড), শিল্প(১১ খণ্ড), সাহিত্য (৩৫ খণ্ড), বিজ্ঞান (০৮ খণ্ড), পরিবেশ (৫ খণ্ড), চলচ্চিত্র (১০ খণ্ড), সংগীত (১৩ খণ্ড), রাজনীতি (২৫ খণ্ড), ভাষা (১০ খণ্ড),  সংস্কৃতি (৪ খণ্ড),  নারী (৪ খণ্ড), সমাজ (০৮ খণ্ড), অর্থনীতি (৮ খণ্ড) এবং শিক্ষা (৯ খণ্ড)। ১৬টি বিষয়ের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন যথাক্রমে বাঙালির অর্থনীতিচিন্তা- হারাধন গাঙ্গুলী, ইতিহাসচিন্তা -মো. মোফাখখারুল ইসলাম, চলচ্চিত্রচিন্তা- সাজেদুল আউয়াল, দর্শনচিন্তা - প্রদীপ রায়, ধর্মচিন্তা - মোহাম্মদ আবদুল হাই ও চঞ্চল আশরাফ, নারীচিন্তা- আকিমুন রহমান, পরিবেশচিন্তা - মুশফিকুর রহমান, বিজ্ঞানচিন্তা - জাকির তালুকদার, ভাষাচিন্তা -সাখাওয়াৎ আনসারী, রাজনীতিচিন্তা -খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, শিক্ষাচিন্তা - শোয়াইব জিবরান, শিল্পচিন্তা- মইনুদ্দীন খালেদ, সংগীতচিন্তা -করুণাময় গোস্বামী, সংস্কৃতিচিন্তা -আহমাদ মোস্তফা কামাল, সমাজচিন্তা- শিপ্রা সরকার ও আহমাদ মাযহার, সাহিত্যচিন্তা -বিশ্বজিৎ ঘোষ, সৈয়দ আজিজুল হক , বদিউর রহমান, মাসুদুল হক , রাজীব সরকার। প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

প্রাথমিকভাবে পাঁচটি বিষয়ের (সংস্কৃতি, দর্শন, নারী, বিজ্ঞান ও ইতিহাস) চুয়ান্নটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এখন চলছে বাকি বইগুলো প্রকাশনার কাজ। বিপণন নীতিমালাও প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থমালার ২০৮ খণ্ড একত্রে অথবা বিষয়ভিত্তিক সেট সংগ্রহ করা যাবে। ১৬টি বিষয় নিয়ে সংকলনটির এখন প্রি-অর্ডার এর জন্য বুকিং হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে।  বিস্তারিত তথ্যের জন্য রয়েছে ওয়েবসাইট(https://bcrs.bskbd.org)।

দুই.

ইতোমধ্যে করোনা এলো-গেলো। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উত্থানপতনের মধ্যে আমরা জড়িয়ে গেলাম। কিন্তু সায়ীদ স্যার অনড়। স্যারের ইচ্ছা যে কোন মূল্যে এগুলো আলোর মুখ দেখবে। প্রকাশনায় যাবার পথ কঠিন। প্রথমত, দরকার বিপুল অর্থ। দুই বাংলায় বহু লেখকের কপিরাইট বিষয়ক অনুমতি। পরম্পরায় সেসব বাধা পেরুনো গেলো। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নিজে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয় তাই সিদ্ধান্ত হলো খরচমূল্যে এই প্রকাশনা পাঠকদের হাতে পৌঁছানো। সকল বাধা পেরিয়ে গত ১৪ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে বাঙালির চিন্তামূলক রচনাসংগ্রহের পাঁচটি বিষয়ের চুয়ান্নটি খণ্ড প্রকাশিত হলো।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি নানাভাবে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। একসময় ভিড় ঠেলে সায়ীদ স্যারের কাছে হাজির হলাম। স্যার চুপি চুপি বললেন, আশংকায় ছিলাম এই প্রকাশনা দেখার আগেই অক্কা পাব। যাক, জীবদ্দশায় বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ প্রকাশ দেখে গেলাম। বলেই স্যারের হাসি। এইরকম রসিকতা আর আনন্দময়তার মধ্যেই জীবনকে দেখেছেন স্যার। জীবনের বড় বড় কাজগুলোকে এমন আনন্দের সঙ্গে সমাধা করেছেন।

এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সময়ের সঙ্গে আমার যেটুকু সম্পৃক্ত থাকা, সেটা আমার জন্য এক গৌরব ও আনন্দের। এর কতগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য আমাকে আপ্লুত করেছে। সেটা বলে লেখা শেষ করব:

১. বাঙালির চিন্তামূলক বিষয়ভিত্তিক রচনা একত্রিত করে প্রকাশনার এত বড় সম্ভার দুই বাংলায় সম্ভবত এটাই প্রথম (কেউ জানলে জানাবেন)।

২. এই প্রকল্পের চরিত্র এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক একদল বিশেষজ্ঞ তৈরি হয়েছেন। যেসব সম্পাদক এই কাজে জড়িত ছিলেন তারা বিষয়ভিত্তিক একেকজন রিসোর্স পারসনে পরিণত হয়েছেন। দেশের জ্ঞানান্দোলনে এটা একটা দারুণ ঘটনা।

এখন বাঙালির সংস্কৃতি চিন্তা, বিজ্ঞান চিন্তা, সমাজ চিন্তা প্রভৃতি বিষয়ভিত্তিক চিন্তা নিয়ে কথা বলার অথরটি তৈরি হয়েছে এসব সম্পাদকের। এই সম্পাদকদের একটা বড় অংশ বয়সে তরুণ। তারা অনেকদিন দেশকে সেবা দিতে পারবেন বলে ধারনা করি। 

৩. বাঙালিরা গত দুশবছরে যেসব বিষয়ে চিন্তা করেছেন, তার বহু পুরনো রচনা এখন হাতের কাছে এসে গেলো। প্রয়োজনে এসব রচনা খোঁজার জন্য আর গলদঘর্ম হতে হবে না। জ্ঞানভিত্তিক এসব সম্পদের সংগ্রহশালা আমাদের জাতীয় জীবনে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

৪. এই বিপুল প্রকাশনার সঙ্গে যেসব সম্পাদক জড়িত ছিলেন, তারা যৎসামান্য সম্মানি নিয়ে আনন্দের সঙ্গে, প্রায়-স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই কাজ করেছেন। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে এই কাজ উদাহরণ হিসেবে থাকবে।

৫. এর মধ্য দিয়ে সংগঠন হিসেবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তার সাংগঠনিক ক্ষমতার এক বিরাট শক্তি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ৪৫ বছর বয়সী প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা যেমন গৌরবের তেমনিই আস্থারও বটে।

দেশব্যাপী হাজার হাজার স্কুলে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে বছরের পর বছর বইপড়া কর্মসূচি চালিয়ে, দেশের সকল জেলায় মোবাইল লাইব্রেরির মাধ্যমে পাঠকের দোঁড়গোড়ায় বই পৌছিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যে নজির গড়েছে, বাঙালির চিন্তামূলক রচনাসংগ্রহ প্রকাশ করে তারই একটা বৃহত্তর সম্প্রসারণ ঘটালো তারা। দেশের নানান সঙ্কটের মধ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই ইতিবাচকতা আশাজাগানিয়া মাইলফলকও বটে।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

56m ago