অনুভবের যৎসামান্য- ১৬

অন্তহীন অপেক্ষা কিংবা...

স্যামুয়েল বেকেটের বিশ্বখ্যাত 'ওয়েটিং ফর গডো' নাটকে মানুষের এক অন্তহীন অপেক্ষার কথা বলা হয়েছিল। ভ্লাডিমির আর এস্ট্রাগন নামের দুই চরিত্র যেন পুরো মানবজাতির প্রতিনিধি হয়ে গডো নামের অচেনা-অনির্দিষ্ট একজনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

কারণ, তাদের ধারণা, গডো এলেই তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন-নৈরাশ্যপীড়িত-বিভীষিকাময় জীবনের অবসান ঘটবে এবং আবার তারা ফিরে পাবে আলোকোজ্জ্বল আনন্দময় জীবন। ওই দুজন এক বিরান প্রান্তরে গডোর জন্য অপেক্ষা করে, দুর্বহ সময় কাটাতে উদ্ভট সব কাজকর্ম করে, এবং দুদিনই শেষবেলায় গডো খবর পাঠান যে, আজ তিনি আসতে পারছেন না, আগামীকাল নিশ্চয়ই আসবেন। নাটকটিতে মাত্র দুটো দিনের ঘটনা দেখানো হয়েছে– অবশ্য ঘটনাপ্রবাহ বলতে তেমন কিছুই নেই এ নাটকে–  কিন্তু পাঠক-দর্শকরা অনুভব করেন, তারা অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করছে এবং গডো কোনোদিনই আসবেন না। 

অ্যাবসার্ড ধারার এই নাটক নিয়ে আমি বিস্তারিত লিখেছি, লিখেছি অ্যাবসার্ড নাট্য-আন্দোলন নিয়েও। এখানে তার পুনরুল্লেখ করবো না। যে-কথা বলার জন্য এই প্রসঙ্গের অবতারণা, সেটি বলি। আমার মনো অনেকবার প্রশ্ন জেগেছে -- বেকেট এই অদ্ভুত ধারণা পেলেন কোথায়? মানুষ যে নানা কারণে অপেক্ষা করে তা তো সত্যি, তিনি কি কেবল সেটিরই রূপায়ন করেছেন? নাকি হাজার বছরের বিবিধ মিথ থেকেও ধারণাটি গ্রহণ করেছেন? বিভিন্ন ধর্মে এবং মিথে কিন্তু এই ব্যাপারটি আছে। উদাহরণ দিচ্ছি।     

চীনের রাইটার্স ইউনিয়নের আমন্ত্রণে এক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং-এ গিয়েছিলাম ২০১৫ সালে। কেবল সেমিনার আর আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না সেই সম্মেলন। দুদিনের আনুষ্ঠানিক অধিবেশন শেষে চীন সরকারের পক্ষ থেকে পুরো প্রদেশ ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছিল আমাদের। তো, ইউনানের যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই বুদ্ধের মূর্তি দেখেছি। কোথাও কোথাও তো রীতিমতো চোখে পড়ার মতো দৃষ্টিনন্দন মূর্তি। যেমন হোংহে-মিলে নামক প্রিফেকচারের (আমাদের দেশে যেমন কয়েকটি জেলা মিলে একটি বিভাগ, ওদের ওখানে প্রিফেকচার) এক আদিবাসী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলো আমাদের।

'ঈ' নৃ-গোষ্ঠির অন্তর্ভূক্ত আশি জনগোষ্ঠির গ্রাম, নাম–  'খোয়ি'। যেতে যেতে দুজন গাইড সেই গ্রাম সম্বন্ধে আগাম বিবরণ দিয়ে যাচ্ছিলেন। বললেন, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই খোয়ি গ্রামের প্রতীকচিহ্ন দেখা যাবে পাহাড়ে। পাহাড়ে? হ্যাঁ, গ্রামে ঢোকার আগে ওই মূর্তি দেখা যায়। এবং একটুক্ষণ পর তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন সেদিকে তাকাবার জন্য। দেখলাম বিশালাকার বুদ্ধমূর্তি– গ্রামের আদমসুরত। কিন্তু এই বুদ্ধ তো আমাদের চেনা নয় ! বাংলাদেশে বা ভারতে বা নেপালে বা ভুটানে আমরা যে নিমিলিত চোখের গম্ভীর বুদ্ধমূর্তি দেখি, এটি মোটেই সেরকম নয়। এই বুদ্ধ রীতিমতো নাদুস-নুদুস, হাস্যোজ্জ্বল, ওঁরা বলছিলেন 'লাফিং বুদ্ধ' বা হাস্যোজ্জ্বল বুদ্ধ। এটা তাহলে কোন বুদ্ধ? আমাদের দ্বিভাষিক ছিল লুনা নামের একটা মেয়ে, তাকে জিজ্ঞেস করেও ব্যাপারটা জানা গেল না, সে এ বিষয়ে কিছু জানে না। তবে, পরে, তান হং নামের এক শিল্পী একটা ধারণা দিলেন -- আমাদের উপমহাদেশে যে বুদ্ধের মূর্তি দেখা যায়, তিনি গৌতম বুদ্ধ, চীনের এই বুদ্ধ গৌতম বুদ্ধ নন। ইনি হলেন মৈত্রেয় বুদ্ধ, যিনি এখনো আসেননি, ভবিষ্যতে আসবেন। কেন? ‌'টু কমপ্লিট এনলাইটমেন্ট'। মহাযান বৌদ্ধমত অনুসারে মৈত্রেয় বুদ্ধ হলেন বর্তমানের শাক্যমুনি (গৌতম) বুদ্ধের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার।
  
চমৎকৃত হয়েছিলাম, সন্দেহ নেই। স্বীকার করে নিচ্ছি যে, মৈত্রেয় বুদ্ধর ধারণা সম্বন্ধে আমার কিছুই জানা ছিল না। আমি একজন মাত্র বুদ্ধ সম্বন্ধেই কিঞ্চিৎ জানতাম, তিনি গৌতম বুদ্ধ, যাঁকে শাক্যমুনি বুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন ওঁরা। যেহেতু জানা ছিল না, সঙ্গত কারণেই এও জানতাম না যে, মহাযানপন্থী বৌদ্ধরা মনে করেন, এনলাইনমেন্ট সম্পন্ন হয়নি এবং সেটি সম্পন্ন করতেই মৈত্রেয় বুদ্ধর আগমন ঘটবে। জানা হলো এও যে, তাঁরা সেই আগমনের জন্য অপেক্ষা করে আছেন। তিনি এলেই জগতের সকল অন্ধকার দূরীভ'ত হবে, এনলাইনমেন্ট সম্পন্ন হবে।

মহামানবদের পুনরাগমনের কনসেপ্টটি আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। সেমেটিক ধর্মেও এই ধারণা আছে। হিন্দুধর্মেও অবতারের কনসেপ্ট আছে। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মেও যে আছে তা আমার জানা ছিল না।  

ইহুদি ধর্মে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে একজন 'মেসায়া' আসবেন যিনি জগতে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করবেন। এই ভবিষ্যদ্বাণী ইহুদিরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতো। মোজেস এবং ডেভিডের প্রয়াণের বহুকাল পরে জন নামক একজন এসেছিলেন, যিনি ফের ঈশ্বরের রাজত্বের কথা বলতে থাকেন। জর্ডান নদীতে স্নান করিয়ে জন যখন ব্যাপটিজমের মাধ্যমে মানুষকে পাপমুক্ত করছিলেন এবং ক্রমাগত মানুষকে তাদের অধঃপতন সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছিলেন, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে তিনি মেসায়া কি না। এই জিজ্ঞাসা থেকেই বোঝা যায় যে, তৎকালীন ইহুদি সম্প্রদায় সত্যিই একজন মেসায়ার জন্য অপেক্ষা করতেন। তো, জিজ্ঞাসার জবাবে জন বলেছিলেন যে তিনি মেসায়া নন, তবে অচিরেই এরকম আরেকজন আসবেন। যীশুখৃষ্টও জনের কাছে ব্যাপ্টাইজ হয়েছিলেন। জন তাকে মহাপুরুষ হিসেবেই চিহ্নিত করেছিলেন, কিন্তু যীশুই মেসায়া কি না সে ব্যাপারে জন কিছু বলেননি। জনের জীবন দীর্ঘায়িত হয়নি। তৎকালীন শাসকরা ভয় পেয়ে তাঁকে বন্দি করে এবং অবশেষে হত্যা করে। জনের অনুপস্থিতিতে যীশু তাঁর শান্তি এবং সম্প্রীতির বাণী প্রচার শুরু করেন।

খুব অল্প সময়েই তিনি যখন জনগণের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য এবং প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন, তখন ইহুদি ধর্মযাজকরা তাঁকে নানাভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতে থাকেন এবং একসময় তাকেও জিজ্ঞেস করা হয় যে, তিনি মেসায়া কি না। যীশু যথারীতি জানান, তিনি মেসায়া নন। যীশুকেও বাঁচতে দেয়া হয়নি। প্রচার শুরু করার মাত্র তিন বছরের মাথায় তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। যীশু ক্রশবিদ্ধ হবার আগে বলে গিয়েছিলেন যে তিনি আবার ফিরে আসবেন। খৃষ্টান সম্প্রদায় সেটি বিশ্বাসও করেন এবং যীশুর পুনরাগমনের অপেক্ষা করেন। 

ইসলাম ধর্মেও যীশুকে ঈসা (আ.) হিসেবে চিহ্নিত করে তার ফিরে আসার ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। তবে ইসলাম আরো একজনের আগমনের বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তিনি হলেন ইমাম মাহদী (আ.)। মুসলানরা বিশ্বাস করেন, ইমাম মাহদী (আ.) আসবেন অধঃপতিত মানবজাতিকে রক্ষা করতে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর মনোনীত এক কল্যাণকর-মঙ্গলময় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু ইহুদি ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণীকৃত মেসায়া তাহলে কে? জন এবং যীশু দুজনেই ইহুদি পরিবার থেকেই এসেছিলেন, কিন্তু তাদের কেউই যেহেতু মেসায়া নন, তাহলে তো মেসায়ার আবির্ভাব হলো না! অপেক্ষাটা রয়েই গেল। দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলোতে কোনা-না-কোনো মহামানব আগমনের বা পুনরাগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং ওইসব ধর্মের অনুসারীরা তা গভীরভাবে বিশ্বাসও করেন। বিশ্বাস করা মানে তো অপেক্ষা করাও। 

মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের দিকে তাকালেও দেখবেন, তারা জীবনের দুর্যোগপূর্ণ সময়গুলোতে কোনো মিরাকল বা অলৌকিকের জন্য অপেক্ষা করেন। আমি এমনও দেখেছি, ক্যান্সার-আক্রান্ত মুমূর্ষূ রোগী; ডাক্তাররা শেষ জবাব দিয়ে দিয়েছেন, সম্ভাব্য সময়ও বলে দিয়েছেন, তবু তার স্বজনেরা ভাবছেন–  কোনো একটা মিরাকল ঘটবে আর তাদের প্রিয়জন সুস্থ হয়ে উঠবেন। মানুষ সম্ভবত সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে তখনই যখন তারা বুঝতে পারে, তাদের জীবনের দুঃসময় কাটানোর জন্য তাদের আর কিছুই করার নেই, ইতিমধ্যেই সব চেষ্টা বিফল হয়ে গেছে। সেটা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি হোক, আর ঋণে জর্জরিত অভাব-দারিদ্র হোক কিংবা অন্য কোনো ধরনের দুর্যোগ হোক। কিন্তু তখনও সে আশা ছাড়ে না, অপেক্ষা করে কোনো এক অলৌকিক ঘটনার, যা তাকে এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি দেবে।
 
একটু আগে বিভিন্ন ধর্মে অপেক্ষার উদাহরণ দিয়েছি। ধর্ম আসলে যতটা না ব্যবহারিক তারচেয়ে বেশি আধ্যাত্মিক বা স্পিরিচুয়াল ব্যাপার। যদিও পৃথিবীর মানুষ এখন ব্যবহারিক দিকটি নিয়ে অতি ব্যস্ত, স্পিরিচুয়াল বিষয়গুলো নিয়ে খুব অল্পসংখ্যক মানুষ ছাড়া কেউই ভাবেন না। বৈষয়িক এবং বস্তুগত সংকট ছাড়াও মানুষ যে বহুমাত্রিক আত্মিক সংকটে জর্জরিত, বিভিন্ন ধর্মের প্রণেতারা এবং তাদের যোগ্য অনুসারী ও ব্যাখ্যাদাতারা তা ঠিকই বুঝেছিলেন। আমি কে, কোত্থেকে এসেছি, কেনই-বা এসেছি, এখানে আমার কাজ কী, মৃত্যুর পর কী হবে, আমার অস্তিত্ব কি চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে, নাকি অন্য কোনোরূপে প্রবহমান থাকবে, মৃত্যুর পর কি ভিন্ন কোনো জীবন আছে, থাকলে সেটি কীরকম, না থাকলে পৃথিবীতে আমার এই স্বল্পকালীন অবস্থানের মানেই বা কী- এইসব বিবিধ প্রশ্নে মানুষ জর্জরিত হয়েছে অজানা কাল থেকে। ধর্মগুলো সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে, কিছু-না-কিছু উত্তর দিয়েছেও। সব ধর্মের উত্তর একরকম নয়, আবার উত্তরগুলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্যও মনে হয়নি, তাই অনুসন্ধানও থামেনি মানুষের। 

ধর্মের বাণীগুলোকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করার জন্যই সঠিকভাবে এর অর্থ বুঝে ওঠা যায় না। কারণ, ধর্মই বলুন আর মিথই বলুন, স্পষ্ট করে তেমন কিছু বলা হয় না সেগুলোতে। অনেক কথা, অনেক গল্পই প্রহেলিকাময়। মানে, একাধিক অর্থ হতে পারে এমনসব গল্প প্রচুর পাবেন মিথগুলোতে। এবং সেগুলো বলাও হয়েছে ইঙ্গিত ও ইশারায়। গৌতম বুদ্ধ বা মোজেসের পর এতকাল চলে গেল, তবু না এলেন মৈত্রেয় বুদ্ধ, না এলেন মেসায়া। এনলাইটমেন্টও তাই সম্পন্ন হলো না, মানুষের মুক্তিও এলো না। আসবে কীভাবে? তাঁরা তো সশরীরে আসবেন না, আসবেন মানুষের হৃদয়ে। যেসব মানুষের হৃদয় প্রেমে পরিপূর্ণ, বিশুদ্ধ এবং সরল, তাদের হৃদয়েই জাগ্রত হবেন তারা। এই ব্যাপারটিই আমরা বুঝে উঠতে পারি না। যা ইঙ্গিতময় এবং প্রতীকী, তাকে আক্ষরিক ধরে নিয়ে বসে থাকি। ফলে মানুষের প্রতীক্ষা আর ফুরায় না। 
 
হৃদয়কে বিশুদ্ধ করার উপায় কী, তা আমার জানা নেই। তবে নানা ধর্মের নানা মিথের থেকে শিক্ষা নিয়ে দু-একটা কথা বলা যেতে পারে। ধরুন, কাউকে আপনি প্রচন্ড ঘৃণা করেন, যৌক্তিক কারণেই করেন, দেখুন তো মন থেকে কোনোভাবে ঘৃণাটা দূর করতে পারেন কি না। ব্যাপারটা অত্যন্ত কঠিন। চাইলেই তো পারা যায় না। ঘৃণা না করার জন্য আগে তো তাকে ক্ষমা করতে হবে। ধরুন আপনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন, এবং মন থেকে ঘৃণাটা দূর করে ফেললেন। দেখুন তো, এখন আপনার যে অনুভূতি সেটি ঘৃণা থাকা অবস্থার অনুভূতির সঙ্গে মেলে কি না! মিলবে না। দেখবেন, আপনার হৃদয় অনেকখানি প্রশান্ত হয়ে উঠেছে। একইভাবে আপনি ক্রোধ নিবারণ করতে পারেন, লোভ সংবরণ করতে পারেন ইত্যাদি। দেখবেন, আপনি আর আগের মতো নেই। আপনার চিন্তা এখন অনেক বেশি গভীর, সুদূরপ্রসারী আর কল্যাণকামী হয়ে উঠেছে। আর তখনই আপনার অন্তর্লোক উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, অবসান হবে অন্তহীন অপেক্ষার। আপনি বেছে নিতে পারেন যেকোনোটিই– অন্তহীন অপেক্ষা অথবা অন্তরে আলোর উদ্ভাসন।  

যাহোক, আমি উপদেশ দেওয়ার কেউ না, সেজন্য লিখছিও না। আসলে নিজেই বুঝতে চাইছি, আমাদের পূর্বসুরীগণ যা বলে গেছেন, তার সারৎসার কী? শুরুতে বেকেটের নাটকের কথা বলেছিলাম। নাটকের শেষে ভ্লাডিমির এবং এস্ট্রাগন এবং পাঠক-দর্শকরাও যখন বুঝে যায়, গডো আদৌ আসবেন না, তাদের অপেক্ষারও শেষ হবে না, তবু তারা বারবার এখানে আসবে, অপেক্ষা করতেই থাকবে। তখন ভ্লাডিমির একটা কথা বলে, আপনমনে: 'আমরা আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট রক্ষা করেছি, পৃথিবীতে কজন লোকই বা এ-কথা বলতে পারে?' হ্যাঁ, গডো বলেছিলেন, আসবেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন, অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, আমরা অপেক্ষা করেছি, আমরা আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট রক্ষা করেছি। 

ধর্ম এবং মিথ আমাদের এই কথা বলতে চায় যে, আমরা বিনা কারণে এ পৃথিবীতে আসিনি। কোনো এক বা একাধিক কাজ বা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে। বলাইবাহুল্য যে, সবার কাজ এক নয়। কার যে কী কাজ, তা নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়। এবং সেই কাজ বা অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন না করতে পারলেও অন্তত চেষ্টা যদি করে যায় কেউ, তাহলে অন্তত নিজেকেই বলতে পারবে– আমি চেষ্টা করেছি, আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট রক্ষা করেছি, এইটুকু আমার করার ছিল, আর কীই-বা করতে পারতাম আমি! জগতের অধিকাংশ মানুষ যাওয়ার সময় 'কিছুই করা হলো না' ধরনের অনুতাপ-হাহাকার-আফসোস নিয়ে চলে যায়, আর সেজন্যই অ্যাপয়েন্টমেন্ট রক্ষার এই সান্ত্বনাটুকু নিয়ে যেতে পারাও কিন্তু কম কথা নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

6h ago