শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিন আজ
মানুষের অধিকার আর মাতৃভূমির প্রতি নিবেদিত শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিন আজ। ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের সেরেস্তাদার।
ধীরেন্দ্রনাথের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। এরপর আইন পেশায় নিয়োজিত হন। তবে রাজনীতি ও আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আমৃত্যু দেশ ও মানুষের কল্যাণে ব্যস্ত ছিলেন।
১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে দেশভাগের পর নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে প্রথম ভাষা সৈনিক তিনি। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকে মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
অধিবেশনের শুরুতে পূর্ব বাংলা কংগ্রেসের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন, 'বাংলা একটি প্রাদেশিক ভাষা হলেও সমগ্র পাকিস্তানের মোট ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন, অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি বাঙালি। অথচ ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকার যে ভূমিকা পালন করেছে তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।' সেদিন তিনি এমন যুক্তি ও সাহসী কথা বলেছিলেন।
এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার এক প্রবন্ধে লিখেন, পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যে দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন তা পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তথা সামরিক জান্তা ভোলেনি, ভুলতে পারেনি। তার অকুতোভয় ভূমিকাই যে পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার বীজ বপন করেছিলেন তা পরবর্তী সময়ে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে, প্রমাণিত হয়েছে।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্বাধীনতা সংগ্রামেও অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ছাত্ররা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য পতাকা উত্তোলন করে। এরপর তিনি নিজ হাতে কুমিল্লার বাড়িতেও তুলেছিলেন পতাকা। এর কয়েকদিন পর তার রক্তে সিঞ্চিত হয় দেশের মাটি।
১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ বাসা থেকে রাতে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ৮৫ বছরের ধীরেন্দ্রনাথকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কী অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন সেই বিবরণ দিয়েছেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের নাপিত রমণীমোহন শীল। তার ভাষ্যমতে, যে অমানবিক নির্যাতন হয়েছে, তা দেখে কোনো বিবেকবান মানুষের চোখের পানি ধরে রাখতে পারবেন না। এমন নির্মমতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
Comments