রিওভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

রিওভাইরাস
ছবি: সংগৃহীত

দেশে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়েছে রিওভাইরাস। এটি বিরল প্রকৃতির একটি রোগ, যা এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কে প্রদাহ ঘটায়। রিওভাইরাস সম্পর্কে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

রিওভাইরাস কী

ডা. মুশতাক বলেন, Respiratory Enteric Orphan Virus সংক্ষেপে রিওভাইরাস নামে পরিচিত। এটিকে 'অরফান' বলা হয় এই কারণে যে, এটা রোগ সৃষ্টি করে না। কিন্তু অন্যান্য রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে ৫ জনের দেহে রিওভাইরাস শনাক্ত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। এটি খুবই বিরল, যা মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটায় বা মস্তিষ্কের সংক্রমণ ঘটায়। খেজুরের কাঁচা রস খেয়েছেন এবং নিপাস ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে এসেছেন এমন রোগীদের দেহে পরীক্ষা করে যখন নিপাহ ভাইরাস পাওয়া যায়নি, বিকল্প হিসেবে অন্য ভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষা করতে গেলে রিওভাইরাস শনাক্ত হয়।

নিপাহ ভাইরাসের প্রধান সমস্যা হচ্ছে এটি মস্তিষ্কে প্রদাহ ঘটায়। খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার কারণে নিপাহ ভাইরাসের পাশাপাশি দেশের মানুষ রিওভাইরাসেও আক্রান্ত হচ্ছে তা প্রথমবারের মত শনাক্ত হলো।

রিওভাইরাস কীভাবে ছড়ায়

ডা. মুশতাক বলেন, রিওভাইরাস অনেক আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছে, যা শ্বাসতন্ত্রের রোগের সঙ্গে এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ বা পেটের অসুস্থতার সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটা সচরাচরই পাওয়া যায় কিন্তু মস্তিষ্কের প্রদাহ পাওয়া গেছে খুব বিরল।

বাংলাদেশে যে রিওভাইরাস পাওয়া গেছে সেটা বাদুড় থেকে এসেছে। অর্থাৎ বাদুড়ের রিওভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে।

রিওভাইরাসের অনেকগুলো ধরন রয়েছে, যা বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সংক্রমিত প্রাণীর লালা, মল-মূত্রের মাধ্যমে দূষিত খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে অন্যের শরীরের প্রবেশ করতে পারে রিওভাইরাস।

শ্বাসতন্ত্রের সঙ্গে থাকা, বিভিন্ন রোগ, পেটের পীড়ার সঙ্গে থাকা রিওভাইরাসের সংক্রামকতা বা সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা নেই। মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটায় যে রিওভাইরাস, তার সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা আছে।

লক্ষণ

মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটায় যে রিওভাইরাস তাতে নিপাহ ভাইরাসের মতোই লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে লালা ঝরা, তীব্র মাথা ব্যথা, প্রচণ্ড জ্বর, আবোলতাবোল কথা বলা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটালে হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বর এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণে বমি, ডায়রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। আলাদাভাবে রিওভাইরাস পাওয়া যায় না, অন্যান্য রোগের সঙ্গে থাকে।

মস্তিষ্কের প্রদাহ একটি গুরুতর অসুস্থতা। রিওভাইরাস মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটায় আর যে কেউ এতে আক্রান্ত হতে পারেন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এটা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ডা. মুশতাক বলেন, রিওভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় সরাসরি অ্যান্টিভাইরাল কোনো ওষুধ নেই, লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে রোগীকে। রিওভাইরাস যদি গুরুতর সংক্রমণ ঘটায় বিশেষ করে এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কে প্রদাহ হয় তাহলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে, অক্সিজেন থেরাপি বা প্রয়োজনে লাইফ সাপোর্ট দিতে হবে।

শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের কোনো সমস্যায় সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে রোগীকে। ভাইরাসের চরিত্রই হচ্ছে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যেতে পারে বা খারাপও হয়ে যেতে পারে। রিওভাইরাসের মৃদু সংক্রমণ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, তবে গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

যেহেতু বাদুড় থেকে রিওভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া গেছে, সেহেতু নিপাহ ভাইরাসের পাশাপাশি রিওভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না, গাছের নিচের পড়ে থাকা ফল, ফাটা বা আধা খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না। যেকোনো ফল, সবজি খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares 3 new days for nat’l observance

The interim government yesterday declared August 5 as “July Mass Uprising Day” to commemorate the student-led protests that toppled the Sheikh Hasina regime that day last year.

5h ago