ঘুরতে পারেন সাভারের যে ৬ দর্শনীয় স্থানে

ju-shaheed-minar
জাবির শহীদ মিনার। ছবি: নাজনীন নাহার শেফা

রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরত্বে সাভার উপজেলা। দিনে গিয়ে দিনেই আসা যায়, এমন কোথাও ঘোরার পরিকল্পনা করলে চলে যেতে পারেন সাভারে। এই উপজেলাটিতে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান আছে, যা সারাদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সাভারের সবচেয়ে পরিচিত দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য খুবই বিখ্যাত। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ৭০০ একর (৬৯৭ দশমিক ৫৬ একর) জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, আর মাঠ পেরোলেই ক্যাফেটেরিয়া, সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ। অনেকটা গ্রিক নাট্যমঞ্চের স্থাপত্যকলার আদলে গড়া জাহাঙ্গীরনগরের মুক্তমঞ্চটি বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থান।

জায়গায় জায়গায় লেক, সবুজ গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন অনুষদ আর ভাস্কর্যের উপস্থিতি যেন এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বছরজুড়ে হিম উৎসব, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুনসহ বিভিন্ন বিশেষ দিন ঘিরে নানা ধরনের কর্মসূচি উদযাপনের মাধ্যমে ক্যাম্পাস রঙ্গিন করে রাখে। আর এখানকার বটতলা নামক স্থানে বেশকিছু ভাতের হোটেল আছে, যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ রকমের ভর্তা পাওয়া যায়। এই ভর্তার লোভেও অনেকেই ছুটে আসেন এখানে।

ঢাকার গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, শাহবাগ বা ধানমন্ডি—যেকোনো জায়গা থেকে সাভারের বাসে ওঠা যায়। মৌমিতা, ঠিকানা কিংবা ডি লিংক বাসে উঠলে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গেটে নামিয়ে দিবে।

savar-smritishoudh
সাভার স্মৃতিসৌধ। ছবি: ফাবিহা বিনতে হক

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাভারের নবীনগরে অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাভারের অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।

১৫০ ফুট উচ্চতার জাতীয় স্মৃতিসৌধটি ত্রিভুজাকৃতির। এই সৌধের শুরুতেই আছে কৃত্রিম হ্রদ আর বাগান। স্মৃতিসৌধ চত্বরে মাতৃভূমির জন্য প্রাণ দেওয়া অজ্ঞাতনামা শহীদের ১০টি গণসমাধি রয়েছে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আরও আছে উন্মুক্ত মঞ্চ, অভ্যর্থনা কক্ষ, মসজিদ, হেলিপ্যাড ও ক্যাফেটেরিয়া।

স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের মোট আয়তন ৮৪ একর, যার মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভটির ২৪ একরজুড়ে আছে বৃক্ষরাজি-শোভিত একটি সবুজ বলয়।

মৌমিতা, ওয়েলকাম, ঠিকানা বা ডি লিংক—যেকোনো বাসে উঠে নবীনগর নামলেই দেখতে পাবেন স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। কিছুদূর হাঁটলেই ভেতরে প্রবেশের মূল গেট পাওয়া যাবে।

aranyaloy-mini-park
অরণ্যালয় মিনি চিড়িয়াখানা। ছবি: নাজনীন নাহার শেফা

অরণ্যালয় মিনি চিড়িয়াখানা

মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানার মতো অরণ্যালয় মিনি চিড়িয়াখানা বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় ঢু মারতেই পারেন। সেনাবাহিনী পরিচালিত এই চিড়িয়াখানাটি বেশ ছিমছাম। প্রকৃতির কোলঘেঁষে বানানো এই চিড়িয়াখানায় আপনি দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ (চিত্রা, সাম্বার, মায়া), খরগোশ, গিনিপিগ, অজগর, ভাল্লুক। এ ছাড়াও আছে বেশ কয়েক জাতের পাখি আর বানর। লেকে ঘুরতে চাইলে সে ব্যবস্থাও আছে। আর ছোটদের জন্য আছে রাইডের ব্যবস্থা। মাত্র ২০ টাকা প্রবেশমূল্যে অল্প সময়ে উপভোগ করতে পারবেন এই অরণ্যালয় মিনি চিড়িয়াখানা।

golap-gram
গোলাপ গ্রাম। ছবি: নাজনীন নাহার শেফা

গোলাপ গ্রাম

ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে ঘুরে আসতে পারেন সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত সাদুল্লাপুর গ্রাম থেকে। যদিও এটি এখন গোলাপগ্রাম নামেই বেশি পরিচিত দর্শনার্থীদের কাছে৷ এই গ্রামের ৯০ ভাগ স্থানীয়দের পেশাই হলো গোলাপ চাষ। পুরো গ্রামেই জমির পর জমিজুড়ে ফুটে থাকে নানা রঙের গোলাপ ফুল। সেখানে গোলাপ ছাড়াও জারবেরা, গ্লাডিওলাস ফুলও চাষ করা হয়। চোখের সামনে শত শত গোলাপ ফুটে থাকতে দেখে মনে হবে আপনি হারিয়ে গেছেন ফুলের রাজ্যে।

গোলাপ গ্রামে যেতে চাইলে ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। বাসস্ট্যান্ড থেকে সাভারের বাসে উঠে যেতে হবে সাভার বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ডে ওভারব্রিজ পার হয়ে পূর্বদিকের বিরুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তায় যেতে হবে।

সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত হ্যালো বাইকে করে মাত্র ২০ টাকায় পৌঁছে যাবেন গোলাপ গ্রামে। অথবা সাভার চৌরঙ্গী মার্কেটের সামনে থেকে লেগুনা বা মিনি বাসে করে আকরান বাজার নেমে সেখান থেকে অটোরিকশায় করেও সাদুল্লাহপুর গ্রামে যাওয়া যায়।

nandan-park
নন্দন পার্ক। ছবি: সংগৃহীত

নন্দন পার্ক

২০০৩ সালে সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা হাইওয়ের বাড়ইপাড়া এলাকায় নন্দন পার্ক গড়ে তোলা হয়। সবুজে আচ্ছাদিত প্রায় ৩৩ একর আয়তনের এই পার্কে রয়েছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি রাইড, ফাইভ-ডি মুভি থিয়েটার, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট ও সুপরিসর কার পার্কিং সুবিধা। একসময় অ্যামিউজমেন্ট পার্ক হিসেবে নন্দন পার্কের বেশ সুখ্যাতি ছিল। এখনো সাভারের একটি জনপ্রিয় বিনোদনমূলক স্থান এই নন্দন পার্ক।

নন্দন পার্কের আকর্ষণীয় রাইডের মধ্যে জিপ রাইড, রক ক্লাইম্বিং, চ্যালেঞ্জ কোর্স, রোলার কোস্টার, অবস্ট্যাকল কোর্স, ওয়াটার কোস্টার উল্লেখযোগ্য। নন্দন পার্কের রাইডগুলোর টিকিটের মূল্য ২০ থেকে ৬০ টাকা।

পার্কে প্রবেশসহ দুই রাইডের জন্য আপনাকে গুণতে হবে ২৯৫ টাকা। আবার প্রবেশসহ ১০ রাইডের মূল্য ৪২৫ টাকা এবং প্রবেশসহ ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সব রাইডের টিকিটের মূল্য পড়বে ৫২০ টাকা। এ ছাড়াও আরও বেশকিছু ফ্যামিলি প্যাকেজও আছে।

fantasy-kingdom
ফ্যান্টাসি কিংডম থিম পার্ক। ছবি: সংগৃহীত

ফ্যান্টাসি কিংডম থিম পার্ক

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই থিম পার্কের নাম জানে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। সাভার জেলার আশুলিয়ার জামগড়ায় প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ফ্যান্টাসি কিংডম থিম পার্ক।

বিশ্বের জনপ্রিয় ও আধুনিক সব রাইড দিয়ে সাজানো এই বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশ করলে আপনি হারিয়ে যাবেন রোমাঞ্চকর জগতে। এখানে বিনোদনের জন্য রাইড হিসেবে আছে শান্তা মারিয়া, রোলার কোস্টার, ম্যাজিক কার্পেট, লেজি রিভার, লস্ট কিংডমসহ আরও বিভিন্ন জনপ্রিয় রাইড ও ওয়াটার কিংডম।

ফ্যান্টাসি কিংডম সারা বছরই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্কে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পার্কে অবস্থান করা যায়।

প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৪০০ টাকা এবং শিশুদের জন্যে তা ৩০০ টাকা ধরা হয়েছে।

ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে চালু আছে। যেমন: ৮ ধরনের রাইডসহ প্যাকেজ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে ৮০০ টাকা ও শিশুদের জন্যে ৬০০ টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Has IMF experiment delivered?

Two years after Bangladesh turned to the International Monetary Fund (IMF) for a $4.7 billion bailout to address its worsening macroeconomic pressures, the nation stands at a crossroads.

9h ago