ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে ৬৪ জেলা ঘুরেছেন আয়াতুল্লাহ

সাতক্ষীরার জোড়া শিবমন্দিরে আয়াতুল্লাহ। ছবি: আয়াতুল্লাহর সৌজন্যে

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই মাথায় চেপে বসে দেশ ঘুরে দেখার চিন্তা। যেই চিন্তা সেই কাজ করতেই প্রথমে বেরিয়ে পড়েন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সেবার টাকার স্বল্পতায় পড়ে যান। না খেয়ে, রেলস্টেশনে রাত কাটিয়ে প্রথম ট্যুর শেষ করেন তিনি। সেই থেকে শুরু। তারপর গিয়েছেন নানা জায়গায়, ঘুরেছেন ৬৪ জেলা, দেখেছেন ঐতিহাসিক সব স্থাপনা।

বলছি মো. আয়াতুল্লাহর কথা, যিনি সারা দেশ শুধু ঘুরেই দেখেননি, বরং ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে ঘেঁটে দেখেছেন প্রতিটি জেলা। দেশের সাত মহান বীরশ্রেষ্ঠর মধ্যে ইতোমধ্যে ছয়জনের সমাধিতে যাওয়ার সুযোগও হয়েছে আয়াতুল্লাহর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দারাস বাড়ি মাদ্রাসা। ছবি: আয়াতুল্লাহর সৌজন্যে

ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখার বিষয়ে আয়াতুল্লাহ জানান, বিভিন্ন সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানুষের বিভিন্ন আচার-আচরণ, বিভিন্ন জেলার মানুষের একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে এবং শিখতে তার মন সবসময় উৎসুক ছিল। তিনি পুরো বাংলাদেশকে জানতে চেয়েছিলেন, দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় যেতে চেয়েছিলেন। দেখতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শত-শত পুরাতন ঐতিহাসিক স্থাপনা। মূলত এটাই ছিল তার মূল লক্ষ্য।

'আমরা জানি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিগণিত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রত্যেক জাতির জন্যই অমূল্য সম্পদ৷ এ সম্পদ আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। চাকচিক্য স্থানগুলো আমাকে ততটা টানে না, যতটা টানে ঐতিহাসিক-প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো', বলছিলেন আয়াতুল্লাহ।

রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী। ছবি: আয়াতুল্লাহর সৌজন্যে

তার সবচেয়ে পছন্দের ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় আছে—ষাট গম্বুজ মসজিদ, আমঝুপি নীলকুঠি, শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ, কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি, বেগম রোকেয়ার বাড়ি, কান্তজিউ মন্দির, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বাঘা মসজিদ, পুঠিয়া রাজবাড়ী, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, কুসুম্বা মসজিদ, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি (উত্তরা গণভবন), ছোট সোনা মসজিদ, নবরত্ন মন্দির, মহাস্থানগড়, বজরা শাহী মসজিদ, ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার, শশী লজ, লালবাগ দুর্গ, পানাম সিটি, ইদ্রাকপুর কেল্লা, বালিয়াটি প্রাসাদ, উয়ারী-বটেশ্বর ও মহেরা জমিদার বাড়ি।

'তা ছাড়াও বান্দরবান আমার কাছে স্বপ্নের মতো জায়গা। আমিয়াখুম ও নাফাখুম ঝর্নার সৌন্দর্য আমার আজীবন মনে থাকবে। পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় পাহাড় (সরকারিভাবে) তাজিংডং বিজয়ের স্মৃতি মানসপটে এখনো অমলিন। মৌলভীবাজার জেলায় প্রবেশ করা মাত্রই চায়ের ঘ্রাণে আমি বিমোহিত হয়েছিলাম। হামহাম জলপ্রপাতও এখনো যেন চোখে লেগে আছে', বলেন আয়াতুল্লাহ।

নীলফামারীর চিনি মসজিদ। ছবি: আয়াতুল্লাহর সৌজন্যে

ঐতিহাসিক এসব স্থাপনা আয়াতুল্লাহ শুধু ঘুরেই দেখেননি, বরং নানা বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

আয়াতুল্লাহ বলেন, 'যেকোনো জাতির বা দেশের শেকড়ের সন্ধান পাওয়া যায় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর মাধ্যমে। দুঃখের বিষয় জেলা শহরের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করা হলেও জেলা শহরের বাইরের স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। ফলে স্থাপনাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সারা দেশে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চিহ্নিত করা হলেও ৫০৯টি স্থাপনা সংরক্ষিত নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের আওতায় না আসায় নষ্ট বা দখল হয়ে যাচ্ছে।'

রাজবাড়ীর নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির। ছবি: আয়াতুল্লাহর সৌজন্যে

তিনি জানান, ওইসব স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের আওতায় আনার জন্য কয়েকটি জেলার প্রশাসনিক ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের অনুরোধও করেছেন।

আয়াতুল্লাহর ভাষ্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে হলে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। তাই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য দখল হওয়া অনেক স্থাপনাগুলো দখলমুক্ত করতে হবে, স্থাপনাগুলোর পাশে জাদুঘর নির্মাণ করতে হবে ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।

নাটোরের উত্তরা গণভবন। ছবি: আয়াতুল্লাহর সৌজন্যে

ঘুরতে ঘুরতে আয়াতুল্লাহ কখনো ঘুমিয়েছেন রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট কিংবা মসজিদে, আবার কখনো থেকেছেন রাস্তার পাশে তাঁবু করে। ৫০ টাকার হোটেলেও থেকেছেন। বান্দরবানে থেকেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে, দেখেছেন তাদের জুম ঘর, খেয়েছেন আধা-কাঁচা মুরগি রান্নাও। কখনো কখনো আবার আর্থিক টানাপোড়েনে কোনো রকমে হালকা কিছু খেয়ে দিন পার করতেও হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় বড় পাহাড়ে যাওয়ার জন্য আয়াতুল্লাহকে হাঁটতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

6h ago