অ্যাডভেঞ্চারের প্রস্তুতি

ঝর্ণার সন্ধানে একদল পর্যটক। ছবি: সংগৃহীত

দৈনন্দিন জীবনে গতানুগতিক কাজকর্মে একঘেয়েমি চলে আসা খুবই স্বাভাবিক। তাই এখন অনেকেই সুযোগ পেলেই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। অনেকেই আছেন যারা আরামে কয়েকটি দিন কাটাতে চান। আবার অনেকেই আছেন যারা একটু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়।

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষগুলো লোকালয়ের কোলাহল থেকে ছুটি নিয়ে নির্জনে নিজেকে আবিষ্কার করতে ছুটে যায় দুর্গম প্রকৃতির কাছে, বেছে নেন ট্রেকিংকে।

ট্রেকিং কী

'ট্রেকিং' হলো দুর্গম স্থানে প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করার জন্য পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করা। যেমন কোনো ঝর্ণার সন্ধানে দুর্গম পাহাড় বেয়ে ওঠা, বন-জঙ্গলের পথ ধরে এগিয়ে চলা, আবার কখনো বা কাদা মাখা ঢালু রাস্তা ধরে হাঁটা কিংবা ঝর্ণা ধারার পিচ্ছিল পথে হাঁটা। এক কথায় বলতে গেলে ট্রেকিং হলো তথাকথিত ঘুরতে যাবার বদলে দুঃসাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান।

ট্রেকিংয়ের ইচ্ছে থাকলে সাহস আর ইচ্ছার পাশাপাশি পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

শারীরিক প্রস্তুতি

শারীরিক সক্ষমতা ট্রেকিংয়ে যাওয়ার পূর্বশর্ত। শারীরিক অসুস্থতা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ট্রেকিংয়ের জন্য মনস্থির করলে অন্তত ১ মাস আগে থেকেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠা ও হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে শরীরকে জড়তামুক্ত করে নিতে হবে। পায়ের শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করা জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা থাকলে ট্রেকিংয়ে না যাওয়াই শ্রেয়। কারণ পুরোপুরি ফিট না হয়ে ট্রেকিংয়ে গেলে শুধু আপনি নিজে বিপদে পড়বেন না, বরং আপনাকে নিয়ে দলের অন্যান্য সদস্যদের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া যাদের হাই ফোবিয়া, শ্বাসকষ্ট, অ্যানিমিয়া, জয়েন্ট পেইন, লো প্রেশার এই ধরনের সমস্যা আছে তাদের পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে না যাওয়া ভালো।

ব্যাগ নির্বাচন

যেহেতু বেশ কিছুদিনের জন্য লোকালয় থেকে বেরিয়ে যাবেন, তাই নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র বহন করতে হবে নিজেকেই। ব্যাগ কেনার আগে লক্ষ্য করতে হবে ব্যাগে যেন অনেকগুলো ফিতা থাকে। তাহলে সহজেই ব্যাগের ওজন সারা শরীরে ভাগ করে দিতে পারবেন। ওজন কোমরে ছড়িয়ে দিতে পারলে কাঁধের উপরে চাপ কমে যায়, তাতে করে হাঁটতে সুবিধা হয়। বেশি চেম্বার বা পকেট থাকলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আলাদা আলাদা করে গুছিয়ে রাখতে সহজ হবে। ব্যাগের নিজস্ব ওজন যত হালকা, ততই স্বচ্ছন্দে হাঁটা যাবে।

জুতা নির্বাচন

ট্রেকিংয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় নিজের ব্যালেন্স ঠিক রেখে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া সবকিছু শেষ করা। আর এক্ষেত্রে আপনাকে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হবে আপনার হাঁটা চলার উপর। আর হাঁটা চলা ঠিক রাখতে সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো ভালো মানের ট্রেকিং উপযোগী একজোড়া জুতা। ট্রেকিং জুতায় গ্রিপ থাকা অত্যাবশ্যক। রাখতে পারেন বাড়তি জুতা। জুতার সঙ্গে মোজাও পরতে পারেন, তাতে করে ধুলোবালি, জোক থেকে রেহাই পাবেন।

শুকনো খাবার

দ্রুত শক্তিবর্ধক এবং সহজেই হজম হয় এমন শুকনো খাবার ব্যাগে রাখা ভালো। চিড়া-গুড়, মুড়ি, চকলেট, খেজুর, ওটসবার, ম্যাংগো বার, কুকিজ, বাদাম এগুলো খুব ভালো অপশন। খাবারের পানির সঙ্গে গ্লুকোজ বা স্যালাইন মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

ফার্স্ট এইড বক্স

ট্রেকিংয়ের সময় ছোট-খাটো দুর্ঘটনা যেন সামলে নেওয়া যায় বা কেউ হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়লে যেন তাৎক্ষনিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেজন্য ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, প্রয়োজনীয় ওষুধ, মশা নিরোধক ওডোমস, কাঁচি, ব্যান্ডেজ। ট্রেকিংয়ের রুটে জোঁকের আনাগোনা থাকলে সঙ্গে লবণ রাখতে হবে।

ট্রেকিং ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়

ট্রেকিং শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতার বিষয় না এটি একটি মানসিক শক্তিরও বিষয়। ট্রেকিং এ লম্বা সময় অভুক্ত থাকা, শারীরিক ক্লান্তি বা ব্যথা ইত্যাদির কারণে মেজাজ হারাতে পারেন। তাই ছোট খাটো বিষয় নিয়ে দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আচরণে সংযত থাকা বাঞ্ছনীয়।

যত্রতত্র প্লাস্টিক পণ্য, পলিথিন, প্যাকেট ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।  

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch a party by next Feb

Student leaders who spearheaded the July-August mass uprising are planning to launch a political party by early February 2025 and contest the next general election.

7h ago