৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে স্কাইডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা জানালেন আশিক

আশিক চৌধুরী
আশিক চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে স্কাইডাইভিং করে দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে উচ্চাকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত তার এই রোমাঞ্চকর অভিযান দেশের জন্য নিঃসন্দেহে গৌরবজনক।

তার এই বিশেষ অর্জন শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি বাংলাদেশে স্কাইডাইভিং বিষয়ে আগ্রহীদের জন্যও উৎসাহজনক। বাংলাদেশে এ ধরনের দুঃসাহসিক খেলাধুলার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করতে তার এই অর্জন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে স্টার লাইফস্টাইলের সঙ্গে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে আশিক চৌধুরীর কাছ থেকে জানা গেল নতুন আরও সব অভিযানের গল্প আর তার শ্বাসরুদ্ধকর স্কাইডাইভিং অভিজ্ঞতা।

৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে লাফ দেওয়ার জন্য অভিনন্দন। মাটিতে নামার আগে মাথায় আসা শেষ ভাবনা কী ছিল?

আশিক: দেশের পতাকা নিয়ে ডাইভে যাওয়ার কারণে যেন বাড়তি কিছু চ্যালেঞ্জ অনুভব করছিলাম। তাই যখনই মাটিতে নামলাম, আমার শেষ ভাবনাটা ছিল একেবারে নিখাদ স্বস্তির। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আকাশে থাকা অবস্থায়ও বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল, যা আমার পরিকল্পনায় ছিল না। এমনকি শেষমেশ যখন মাটিতে অবতরণ করেছি, সেসময়ও পরিকল্পিত স্থান থেকে প্রায় ২০০-৩০০ মিটার দূরে গিয়ে নেমেছি, একেবারে ধানখেতের মাঝখানে। তাই এই স্কাইডাইভিং যাত্রা শেষ হবার পর স্বস্তির অনুভূতিটাই সবচেয়ে বেশি হচ্ছিল।

স্কাইডাইভিং
আশিক চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

আপনার মূল ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে ২০০ মিটার দূরে নেমেছেন। এটা কেন হলো?

আশিক: আসলে আমরা যে উচ্চতা থেকে লাফ দিয়েছি, তা বাতাস কীভাবে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এর ওপর প্রভাব ফেলে। এতে করে অনেক গুণ বেশি কঠিন হয় প্যারাস্যুটের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা। সাধারণত অন্য স্কাইডাইভিংয়ের সময় আমাদের নিয়ন্ত্রণ এর চাইতে অনেক বেশি থাকে। এক্ষেত্রে প্যারাস্যুট খোলার আগেই আমরা ড্রপ জোনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। কিন্তু অধিক উচ্চতা এবং পতাকা নিয়ে লাফ দেওয়ার কারণে এবার কিছু বাড়তি জটিলতা যোগ হয়েছে। আমরা প্যারাস্যুট খোলার আগেও যেহেতু অবতরণের জায়গাটি ভালো করে দেখতে পারিনি, এতে করে গন্তব্যের চেয়ে অনেক দূরে নামতে হয়েছে।

স্কাইডাইভিং নিয়ে আগ্রহীদেরকে অনুপ্রাণিত করবেন কীভাবে? তাদের জন্য আপনার বার্তা কী?

আশিক: আশা করি, আমার এই নতুন রেকর্ড শুধু রোমাঞ্চপ্রিয়দের জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশের সবাইকে নিজেদের চেনাজানা জগত থেকে বেরিয়ে আসতে এবং দুর্দান্ত গতিতে নিজেদের স্বপ্ন ছুঁতে অনুপ্রাণিত করবে। আমার জানামতে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খুব বেশি মানুষ স্কাইডাইভিংয়ে যান না। আমি এই বিষয়টি কিছুটা হলেও বদলাতে চাই। তাই আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য আমি এ ধরনের রোমাঞ্চকর দৃষ্টান্তের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা রেখে যাচ্ছি।

বাংলাদেশে নতুন যারা স্কাইডাইভিংয়ে আসতে চাচ্ছেন, তাদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?

আশিক: প্রশিক্ষণের জন্য আমি অবশ্যই থাইল্যান্ডের কথা বলব। স্কাইডাইভিংপ্রেমীদের জন্য এশিয়া, এমনকি ইউরোপেও এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি জায়গা। এই দেশে স্কাইডাইভারদের প্রশিক্ষণের জন্য একইসঙ্গে কম খরচের জায়গা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। আশা করি, আমার প্রচেষ্টা এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্য আগ্রহীদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে একটি বিশেষ পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। এই দিনটির পরিকল্পনা নিয়ে একটু বিস্তারিত বলবেন?

আশিক: ৭০ জন অন্য অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে প্যারাস্যুটিংয়ের মধ্য দিয়ে একটি গিনেস রেকর্ড করার কথা ভাবছি। আমাদের সবার হাতেই থাকবে জাতীয় পতাকা। এই পরিকল্পনাতে আমিসহ মোট ৭১ জন আছি। এর বর্তমান রেকর্ড হচ্ছে ২৫ জন ডাইভারের, আমরা এই সংখ্যার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি রেকর্ডের চেষ্টায় আছি। কিন্তু এ কাজের জন্য অনেক বেশি পরিমাণে সমন্বয় দরকার, বিশেষ করে সামরিক ও বিমান বাহিনীর সঙ্গে। কারণ এত বিশাল একটি ইভেন্ট বাস্তবায়নের জন্য তাদের সহযোগিতা অবশ্যই দরকার হবে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus, Modi exchange Eid greetings

The interim government on Sunday shared both the letters on its Facebook page

1h ago