পোষা পাখির যত্ন
পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে, সুন্দর সময় কাটাতে কিংবা একাকীত্ব কাটাতে অনেকেই বিভিন্ন প্রাণী বাসায় পালন করে থাকে, যা একসময় পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে।
পোষা প্রাণীর মধ্যে পাখি অন্যতম। তবে এরা বেশ সংবেদনশীল। এজন্য যদি পাখির প্রতি মনে আসলেই ভালোবাসা থাকে ও পর্যাপ্ত যত্ন নেওয়ার মানসিকতা থাকে, তাহলেই পাখি পোষা উচিত।
পোষা পাখির যত্ন কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন 'প লাইফ কেয়ার' এর ভেটেনারি সার্জন ফাতিহা ইমনুর ইমা।
কেমন হবে পাখির খাঁচা
পাখির স্থান খাঁচায় না হলেও পোষা পাখিকে সাধারণত খাঁচায় রাখা হয়। খাঁচার পাখির অবস্থা খানিকটা নাজুক থাকে। কিছু পাখির জন্ম ও বেড়ে ওঠা খাঁচাতেই। রোদ, বাতাস, শীতে তাদের খাঁচাতেই রাখা হয়।
পাখির আকার, বয়স, সংখ্যা বুঝে খাঁচা দিতে হবে। পাখির খাঁচার অবস্থান হবে এমন জায়গায় যেখানে অতিরিক্ত রোদ, বৃষ্টি কিংবা বাতাস পাখিকে কষ্ট দিতে না পারে।
অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় খাঁচা না রেখে আলো-বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় খাঁচা রাখা উচিত। অতিরিক্ত রোদ কিংবা বৃষ্টির ছাট থেকে পাখিকে রক্ষা করতে খাঁচার চারপাশে সাময়িকভাবে প্লাস্টিকের আবরণ ব্যবহার করা যেতে পারে। খাঁচা সপ্তাহে একদিন ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
পোষা পাখির খাবার
পাখির খাবার পাত্র ও পানির পাত্র আলাদা নির্ধারণ করা উচিত। পাখিকে বাসি খাবার দেওয়া উচিত না। খাওয়া হলে পাত্রটি পরিষ্কার না করলে জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে।
পাখি সাধারণত দেশি খাবার খায়। পাখিকে শস্য দানার মিশ্রণ, যেমন গম, ভুট্টা, ধান, তিল, তিসি, কাউন, বাদাম, সূর্যমুখী ফুলের বিচি দেওয়া যেতে পারে।
দেশি বা বিদেশি সব ধরনের পাখিই ফল পছন্দ করে। পাখিকে পাকা পেঁপে, কলা, আপেলের টুকরা, জাম, লিচু ইত্যাদিও দেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া বাজারে পাখির জন্য প্যাকেটজাত খাবার কিনতে পাওয়া যায়, চাইলে সেগুলোও দেওয়া যেতে পারে। ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা পানি প্রতিদিন সকালে পাত্রে দিতে হবে। পানি নোংরা হওয়া মাত্রই আবার বদলে দেওয়া জরুরি। শুধু পরিষ্কার পানি দিলেই হবে না, সাথে পাত্রটিও যেন পরিষ্কার থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
পাখির গোসলের জন্য আলাদা পাত্রে দুপুরে দিলে সেটি গোসল শেষে সরিয়ে ফেলতে হবে।
পাখির শরীরচর্চা
প্রাকৃতিকভাবেই পাখির স্বভাব নয় খাঁচায় থাকা। খাঁচায় থাকার ফলে পাখিদের 'শরীরচর্চা' ঠিকমতো হয় না। খাঁচার পাখির জন্য শরীরচর্চার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন বেশ কিছুটা সময় তারা শারীরিক কসরত করতে পারে।
খাঁচার ভেতর ছোট মই, দোলনা, ঝুনঝুনি, প্লাস্টিকের বল রেখে দিলে পাখিরা এসব নিয়ে খেলাধুলা করলে তাদের শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
পাখিদের সময় দেওয়া
পাখিদেরও মন খারাপ হয়। বিষণ্ণ পাখি কিছু খায় না, অসুস্থ হয়ে যায়। সময় পেলে তাদের সঙ্গে খেলতে হবে। তার মানে এই নয় যে পাখির লেজ ধরে টানাটানি করা।
পাখির সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে, হাত দিয়ে খাবার দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় পাখি ঠোঁট দিয়ে ঠোকর দিতে পারে, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করলে, একটা সময় পাখি ঠোকর দেবে না। এমনকি টুকটাক নির্দেশনাও শোনে পাখি।
পোষা পাখিকে সঙ্গী দিন
অন্যান্য পোষা প্রাণীর সঙ্গী আপনি নিজে হলেও, পোষা পাখির নিজস্ব প্রজাতির সঙ্গী প্রয়োজন। খাঁচায় পাখি রাখলে জোড়ায় জোড়ায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। ডিম দিলে ডিমে তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
পোষা পাখির ভ্যাকসিন
পোষা পাখিকে তেমন কোনো ভ্যাকসিন দিতে হয় না। তবে শীত আসার আগে 'রাণীক্ষেতের' ভ্যাকসিন দিলে ভালো।
ম্যাকাও জাতীয় পাখির ক্ষেত্রে জন্মের ২১ দিনের মধ্যে 'পোলিওমো ভ্যাকসিন' দেওয়া উচিত।
খাঁচায় যদি একাধিক পাখি থাকে এবং কোনো পাখি অসুস্থ হলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে ফেলতে হবে।
Comments