‘না’ বলতে বাধা?
'না' ছোট একটি শব্দ। কিন্তু অনেক সময় প্রয়োজনে এই শব্দটি আমরা চাইলেও ব্যবহার করতে পারি না। অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়েছে, কাজটি সাধ্যের বাইরে বা অপ্রিয়, কিন্তু শুধু না বলতে পারার কারণে অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়েছে।
আমরা কেনো না বলতে পারি না
ছোটবেলার থেকেই ভদ্রতার তাগিদে 'না' বলার অভ্যাস হারিয়ে ফেলি। আমাদের মনের মধ্যে দ্বিধা কাজ করে। মনে মনে ভাবি যে, না বললে যদি অবাধ্যকতা প্রকাশ পায়। আমাদের ছোট থেকে 'না' বলা শেখানো হয় না। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে 'না' বলা কি কোনো শেখার জিনিস? হ্যাঁ! 'না' বলতে শিখতে হয়। শুধু 'না' বলতে পারার কারণে জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জীবনে একটা সময় পার করে আমরা হয়তো 'না' বলতে শিখি, তবে ততদিনে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো, কেন আমরা 'না' বলতে পারি না? কেন এত সহজ একটি শব্দ বলতে এত সমস্যা হয় আমাদের?
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, আমরা 'না' বলতে পারি না কারণ আমরা মনে করি, বর্তমানে আমরা হয়তো সময় বের করতে পারব না কোনো কাজের জন্য, তবে ভবিষ্যতে কাজটি করার মতো পর্যাপ্ত সময় পাব বা কাজটি আমার দ্বারা সম্ভব।
অনেক সময় ইতিবাচকতা থেকে 'না' বলা হয়ে ওঠে না। পারিবারিকভাবে আমাদেরকে শেখানো হয় কীভাবে মানুষের উপকারে আসা যায়। অনেক সময় উপকার করার মানসিকতা থেকে না চাইতেও কাজের দায়িত্ব নিয়ে নেই।
আরেক দল মনোবিজ্ঞানী বলেন, কোনোকিছু পাওয়ার প্রত্যাশা যদি থাকে সেগুলোকে 'না' বলার পেছনে আমাদের মস্তিষ্ক বেশ ভালোভাবে কাজ করে। আমরা হয়তো চাই না, তবুও আমাদের মস্তিষ্ক কোনো পুরষ্কার পাওয়ার অনুভূতি থেকে সিদ্ধান্ত নেয়। যেমন অফিসের অতিরিক্ত কাজ করতে দিলে সেখানে 'না' বলতে না পারা বা বন্ধুর অনুরোধে নিজের করা অ্যাসাইনমেন্ট থেকে কপি করতে দেওয়া বা করে দেওয়ার মতো কাজ আমরা হরহামেশাই করে থাকি।
অনেক সময় শুধু ভয় কিংবা সম্মানের জায়গা থেকেও কাউকে 'না' বলাটা সম্ভব হয় না। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে 'না' বলা সম্ভব?
'না' বলবেন কীভাবে?
কাউকে বা কোনোকিছুকে 'না' বলে দেওয়া কোনো খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়। তবে যে খুব একটা সহজ কাজ তাও নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক 'না' বলার কিছু সহজ কৌশল।
সময় নিন
কেউ কোনো অনুরোধ করলে নিজের মতামত দেওয়ার আগে সময় নেই। আবেগের বশে বা ভদ্রতার খাতিরে কাউকে হ্যাঁ বলার আগে চিন্তা করুন। কেউ খাবার টেবিলে খুব জোর করে আপনার পাতে অতিরিক্ত খাবার তুলে দিল কিন্তু ভদ্রতাবসত হয়তো আপনি জোর দিয়ে 'না' বলতে পারছেন না। আবার কেউ তার কাজটি আপনাকে করে দিতে বলছে, ভাবুন যে আসলেই আপনি পারবেন কি না। সময় নিয়ে চিন্তা করে যুক্তি দিয়ে তাকে বুঝিয়ে বলুন।
'না' বলুন সঠিকভাবে
'না' বলার বেশ কিছু উপায় আছে। এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যে চাইলেও সরাসরি না বলা যায় না। আবার কাজটিও আপনার জন্য অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করবে। সেক্ষেত্রে তাকে বলা যেতে পারে যে আপনি এই মুহূর্তে কাজটি করতে পারছেন না, তবে ভবিষ্যতে সেটা করার চেষ্টা করবেন। অথবা বলা যেতে পারে, আপনি তার কাজটি করতে আগ্রহী ছিলেন এবং আপনার খুব ভালো লাগছে যে, তিনি আপনার কাছ থেকে উপকৃত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনার কাছে এখন কাজটি করার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। এতে আপনিও নেতিবাচক হবেন না আর আপনার উপরে কোনো বাড়তি দায়িত্ব ও থাকলো না।
আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অনেক সময় বন্ধু বা আত্মীয়কে 'না' বলতে পারি না আমরা অনেকে। প্রাথমিকভাবে তাদের 'না' বলতে পারার ফলাফল দীর্ঘমেয়াদী এবং সেটি অবশ্যই ইতিবাচক ফলাফল নয়। তাই সম্পর্ককে সম্পর্কের জায়গায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন। সব ব্যাপারে আবেগী না হয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ শ্রেয়।
নিজেকে গুরুত্ব দিন
নিজের মনকে প্রাধান্য দিতে শিখুন। মনের মধ্যে অনেক সৃজনশীল ধারণা ও অনেক উত্তর পেয়ে যাবেন। নিজেকে সময় দিন। নিজের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটান। কাউকে 'না' বলার আগে নিজের ঘরে বসে 'না' বলা অনুশীলন করুন। নিজের কাজকে, নিজেকে প্রাধান্য দিন। এর মাধ্যমে অন্যকে সহজে না বলা যায়।
আলোচনার প্রারম্ভিকেই বলা হয়েছে 'না' বলা অনুশীলনের বিষয়। যখন 'না' সুফল পেতে শুরু করবেন তখন 'না' বলা সহজ হয়ে যাবে। সামান্য 'না'ই জীবনের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে। তবে সর্বদাই 'না' এর চর্চা করা উচিত নয়, নতুবা নিজের প্রয়োজনে না শুনতে হতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিনেটডটকম, ক্রিস্টেনহিউয়িট
Comments