করোনাকালে জন্মানো শিশুরা যোগাযোগ দক্ষতায় পিছিয়ে: গবেষণা

ফাইল ছবি

কোভিড-১৯ মহামারির সময় এবং মহামারির আগে জন্ম নেওয়া ২ বছর বয়সী শিশুদের আচরণ ও বিকাশে একটি বিষয় ছাড়া সবকিছুতেই মিল আছে। মিল না থাকা বিষয়টি হচ্ছে যোগাযোগ দক্ষতা।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য অবজার্ভার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসের (আরসিএসআই) গবেষকদের পরিচালিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

আরসিএসআইয়ের সিনিয়র প্রভাষক সুসান বায়ার্ন ও শিশুরোগ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জোনাথন হুরিহানের নেতৃত্বে একদল গবেষক মহামারি চলাকালীন জন্ম নেওয়া শিশুদের জীবন, স্বাস্থ্য ও বিকাশের প্রভাব সম্পর্কে জানতে লকডাউনের প্রথম ৩ মাসে জন্ম নেওয়া শিশু ও মহামারির আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করেন। গবেষণায় ৩৫৪টি পরিবারের শিশুদের উপাত্ত ব্যবহার করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, ৬ মাসে গড়ে বাবা-মাসহ মাত্র ৩ জন বাচ্চাদের চুম্বন বা এমন আদর করেছে। অর্থাৎ শিশুরা খুব কম আত্মীয় বা পরিবারের বন্ধুদের সংস্পর্শে এসেছে। এ ছাড়া গড়ে ৪ জনের মধ্যে ১ জন শিশু তাদের প্রথম জন্মদিন পর্যন্তও সমবয়সী অন্য শিশুর দেখা পায়নি বলে জানা গেছে।

বায়ার্ন অবজার্ভারকে জানান, লকডাউনের সময় বাচ্চাদের লালন-পালন করতে কেমন লেগেছে জিজ্ঞেস করলে অভিভাবকরা একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতায় ভুগেছেন বলে জানায়। অবশ্য অনেকে আবার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ফুরসত পেয়েছে বলেও জানিয়েছেন। 

মহামারি চলাকালীন জন্ম নেওয়া শিশুরা ঘর থেকে বের না হওয়ায় খুব কম শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। ফলে তাদের যোগাযোগ দক্ষতা মহামারির আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।

তবে ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বিষয়ে বাচ্চাদের আচরণে কোন পার্থক্য নেই বলে জানিয়েছে শিশুদের অভিভাবকরা।

তবে বায়ার্নের মতে, ৫ বছর বয়সে স্কুলে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের সামগ্রিক আচরণের পরিবর্তন সম্পর্কে জানা যাবে না। তাই এই গবেষণাটি চলমান থাকবে।

তিনি বলেন, 'কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ এখন বিদায় নিয়েছে, শিশুরা বাইরে যেতে পারছে এবং অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা ও খেলাধুলা করছে। আশা করা যায়, ৫ বছর বয়সের মধ্যে তাদের যোগাযোগ দক্ষতার ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। কিন্তু সত্যিই তা হয় কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য গবেষণা করতে হবে।'

ওয়ালথাম ফরেস্টে বসবাসকারী অ্যালেক্স থমাস ৩ বছরের জ্যাকব এবং ৪ বছর বয়সী ম্যাডির মা। জ্যাকবের জন্ম ২০২০ সালের এপ্রিলে, মহামারির শুরুতে। তখন ম্যাডির বয়স ১৮ মাস। লকডাউনে নার্সারি বন্ধ হয়ে যায় তার। বাচ্চারা বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেনি, খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

থমাস লক্ষ্য করেন, ম্যাডির ভাষা বিকাশ হচ্ছে না। ২ বছর বয়সেও কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারছে না। তারপর তিনি একজন স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে যান। কিন্তু জুমের সেশনগুলো তেমন উপকারে আসেনি। এমনকি ২০২২ সালে যখন ম্যাডির বয়স ৪, তখনও সে কথা বলতে পারছিল না। তারপর থমাস স্পিচ থেরাপির জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৮০ ইউরো ব্যয় করেছেন।

জ্যাকব যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন সেও আলাদা কোনো শব্দ বলতে পারছিল না। সে সময়ে দাতব্য স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ইউকে পরিচালিত টটস টকিং নামে একটি ৮ সপ্তাহের কোর্স করার পর উপকার পান থমাস।

থমাস কোর্স থেকে বাচ্চাদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করলে উন্নতি হবে তার ধারণা পান। তারপর থেকে বাচ্চাদের সামনে তিনি কী করছেন, কী দেখছেন সব বিষয়ে ব্যাখ্যা করা শুরু করেন। বাচ্চারা কী দেখছে, কী ভাবছে সে সম্পর্কে কথা বলার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে থাকেন।

জ্যাকবের বয়স এখন ৩ বছর, তবে সে এখনও বয়স অনুযায়ী থেকে পিছিয়ে আছে। থমাসের মতে, মহামারির বিচ্ছিন্নতার কারণে জ্যাকবের যোগাযোগে ঘাটতি হয়েছে। জ্যাকবের অস্পষ্ট কথা অনেক কষ্টে বোঝা যায়।

এদিকে আইরিশ গবেষণায় বড় বাচ্চাদের অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্সে পাওয়া গেছে অন্য আরেকটি তথ্যও। ইংল্যান্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহামারিতে স্কুল বন্ধ হওয়ার আগের সময়ের তুলনায় বর্তমানে গণিত ও লেখালেখিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। পড়ার দক্ষতাও কমে গেছে বলে দেখা গেছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে ইংল্যান্ডে স্ট্যান্ডার্ড অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট (স্যাট) পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেখানে বর্তমান বছরের ফলাফল গত বছরের তুলনায় ভালো হলেও ২০১৯ সালের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কোভিডের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিন-পঞ্চমাংশেরও কম শিক্ষার্থী পড়া, লেখা ও গণিতে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করেছে। ফলাফল লকডাউনের আগে ৬৫ শতাংশ থেকে এই বছর ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী দেশটির সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না।

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

1h ago