ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন কেন হয়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কী

হাইপারপিগমেন্টেশন
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের শরীরের স্বাভাবিক রং থাকে। সেই রঙের চেয়ে যদি ত্বকের কোনো অংশ একটু গাঢ়, একটু কালো বা বাদামি কিংবা ধূসর হয়ে যায় সেটাকেই হাইপারপিগমেন্টেশন বলে।

হাইপারপিগমেন্টেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।

হাইপারপিগমেন্টেশন কেন হয়

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, শরীরের যেকোনো জায়গায় হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে, অনেক কারণে হতে পারে।

শরীরের রং নির্ধারণ করে মেলানিন। যার শরীরে যত বেশি মেলানিন তার রঙ তত বেশি ডার্ক। মেলানিন হলো এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ, যা মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে তৈরি হয়। এই মেলানিনের পরিমাণ সারা শরীরে বাড়তে পারে, আবার নির্দিষ্ট কিছু অংশে বাড়তে পারে। যেমন- শরীরের যেখানে সূর্যের আলো বেশি পড়ে সেই স্থানের মেলানোসাইট কোষ থেকে বেশি মেলানিন তৈরি হয়। ফলে সেখানে শরীরের রং স্বাভাবিকের চেয়ে ডার্ক হয়ে যায়।

ত্বকে মেছতা, সান ট্যান, ছোট ছোট তিল এগুলো সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এক্সপোজারের কারণে হয়। বিভিন্ন ওষুধের প্রভাবে কিছু কিছু সময় হাইপারপিগমেন্টেশন হয়, যদিও তা স্বল্প সময়ের জন্য। ত্বকে ওষুধ ব্যবহারের প্রভাবে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ড্রাগ রিঅ্যাকশনের কারণে রং পরিবর্তন হতে পারে। আবার কিছু ওষুধ আছে বিভিন্ন রোগের জন্য খেতে দেওয়া হয়। যেমন- ব্রনের জন্য আইসোট্রেটিনোইন খাওয়ার কারণে সূর্যের আলোর প্রভাব ত্বকের উপর বেশি মাত্রায় পড়ে। সেই সময় ত্বক ডার্ক হয়ে যেতে পারে।

কারো শরীরে যদি দীর্ঘ সময় ধরে একজিমা থাকে, কখনো চলে যায় আবার ফিরে আসে, একজিমা ও অ্যালার্জির কারণে চুলকানি হয় সেখান থেকে হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে।

হাইপারপিগমেন্টেশনের ধরন ও লক্ষণ

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, শরীরের যেকোনো জায়গার ত্বকের রং পরিবর্তন হলে সবসময় সবাই উদ্বিগ্ন হয় না। সাধারণত মুখ কিংবা শরীরের উন্মুক্ত ও সংবেদনশীল অংশে হাইপারপিগমেন্টেশন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন-

১. মেলাসমা বা মেছতা একটি হাইপারপিগমেন্টেশন। মুখে মেছতা হলে কালো বা বাদামি ছোপ দেখা যায়।

২. হাইপারপিগমেন্টেশনের কারণে ছোট ছোট তিল হয় যেটাকে ফ্রিকেলস বলে।

৩.  প্রসাধনী ব্যবহার, ক্যামিকেল এক্সপোজার, ডাস্ট কিংবা যেকোনো কারণে ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জির স্থানে বেশ কিছুদিন চুলকানির ফলে ত্বকের ওই জায়গা ডার্ক হয়ে যেতে পারে।

৪. অনেক সময় ত্বকে আঘাত পেলে সেই জায়গা বেশ কিছুদিন কালো হয়ে যায়। সেটাও এক ধরনের হাইপারপিগমেন্টেশন, যেটাকে পোস্ট ইনফ্ল্যামেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন বলে। অর্থাৎ ত্বকে ইনফেকশন, প্রদাহের পর সেই স্থানটি শুকিয়ে যাওয়ার পরেও কালো দাগ হয়ে যায়।

৫. যাদের ওজন অনেক বেশি তাদের গলা কালো হয়ে যায়। সেটা এক ধরনের হাইপারপিগমেন্টেশন।

৬. সাধারণত শরীরের ভাঁজ করা অংশ যেমন- আন্ডার আর্মস, প্রাইভেট পার্টস, ঘাড় এই স্থানগুলোতে ত্বকের রং শরীরের স্বাভাবিক রঙের চেয়ে একটু ডার্ক হয়। শরীরে ভাঁজ পড়া অংশের ত্বকে ঘষা লাগার ফলে হাইপারপিগমেন্টেশন হয়।

৭. আঁটসাঁট পোশাক পরেন অনেকে। পোশাকের সঙ্গে ত্বকের ঘর্ষণে হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে।

হাইপারপিগমেন্টেশন চিকিৎসা

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, একেক ধরনের হাইপারপিগমেন্টেশনের চিকিৎসাও একেক রকম। সব জায়গায় সব চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।

আমাদের দেশে যত ধরণের হাইপারপিগমেন্টেশন পাওয়া যায় তার মধ্যে একটা বড় অংশই হচ্ছে মেলাসমা বা মেছতার সমস্যা। মেছতা দূর করার জন্য মুখে লাগানোর বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, খাওয়ার জন্য বিভিন্ন ওষুধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অর্থাৎ ভিটামিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। যাতে করে মেলানোসাইট থেকে কম মেলানিন উৎপন্ন হয়।

এ ছাড়া বর্তমানে নতুন অনেক ধরনের চিকিৎসা আছে। হাইপারপিগমেন্টেশন চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন লেজার, কেমিক্যাল পিল ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের চিকিৎসা মেছতার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যেতে হয়। মেছতার পিগমেন্টেশন যদি ত্বকের উপরের ও মধ্যম স্তরে জমা হয় তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো একটা অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। যদি ত্বকের গভীরে থাকে তাহলে চিকিৎসা করে শতভাগ সারিয়ে তোলা যায় না। সেক্ষেত্রে মেছতা আবার ফিরে আসে।

যাদের তিলের সমস্যা আছে , ছোট ছোট তিল দিয়ে মুখ ভরে যাচ্ছে তাদের এই ধরনের পিগমেন্টেশন দূর করার জন্য সিওটু লেজার, ইলেকট্রো সার্জারি করা যায়।

আবার যাদের সানট্যান বেশি বা মেছতার চিকিৎসায়ও পিকো লেজার, কিউ সুইচ লেজার করা হয়। লেজার কখনো সরাসরি আবার লেজার ফেসিয়াল ফর্মেও করা হয়। কেমিক্যাল পিলিং করা হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অনেক ইনজেকশন আছে, যা ত্বক উজ্জ্বল করে ও পিগমেন্টেশন কমায়। এটি মেসোথেরাপির মাধ্যমে করা হয়, অর্থাৎ ছোট ছোট ইনজেকশনের মাধ্যমে ত্বকের মধ্যে ডার্মিস লেভেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেওয়া হয়, যা মেলানিনের ফর্মেশন কমিয়ে ফেলে।

হাইপারপিগমেন্টেশনের চিকিৎসায় অনেক অ্যাক্টিভ উপাদান যেমন- সিরাম ও ক্রিম ফর্মের ভিটামিন সি, রেটিনল, নিয়াসিনামাইড, আলফা আরবুটিন ত্বকে লাগানোর জন্য দেওয়া হয়।

হাইড্রোকুইনোন, ট্রিটিনয়েন মেডিসিন বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানের জন্য এবং ভিন্ন ভিন্ন কারণ অনুযায়ী এগুলো দিতে হয়।

হাইপারপিগমেন্টেশন প্রতিরোধ

হাত, পা, মুখে অর্থাৎ শরীরের যেসব স্থান সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সরাসরি সংস্পর্শে আসে সেখানে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ফুল হাতা ও সুতির হালকা রঙের পোশাক পরতে হবে। বাইরে ছাতা ব্যবহার করতে হবে।

নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুই থেকে তিনবার ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর অন্তর।

মুখ ধুয়ে নেওয়ার সুযোগ না থাকলে টিস্যু বা কোনোকিছু দিয়ে মুছে নিয়ে লাগাতে হবে। সানস্ক্রিন অনেক বেশি পরিমাণে নিতে হবে, যাতে একটা লেয়ার তৈরি হয় ত্বকে। মুখ, গলা, চোখের চারপাশ, এমনকি ঠোঁটে, হাত-পায়েও লাগাতে হবে ত্বকের সুরক্ষার জন্য।

সানস্ক্রিন এসপিএফ ৫০ ব্যবহার করাই ভালো। তবে অনেক ক্ষেত্রে এসপিএফ ৩০ ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষ করে যাদের ব্রন আছে। ব্র্যান্ড দেখে নয়, অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী। এ ছাড়া সিরাম ও ক্রিম ফর্মে ভিটামিন সি, রেটিনলসহ বিভিন্ন অ্যাক্টিভ উপাদান চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Pakistan minister denies nuclear body meeting after offensive launched on India

Pakistan's military said earlier that the prime minister had called on the authority to meet. The information minister did not respond immediately to a request for comment.

1h ago