ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন ও উপকারিতা

ছবি: স্টার

দিনকে দিন জীবন হয়ে উঠছে যান্ত্রিক। শহুরে ইট, কাঠ, কংক্রিটে বন্দী হয়ে পড়ছে জীবন। এক মুঠো শুদ্ধ বাতাস নেওয়া যেন কঠিন। তাই ঘরকে প্রাণ দিতে ইনডোর প্ল্যান্ট কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

যেসব গাছ ঘরে রাখলে বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় না, মূলত সেগুলো ইনডোর প্লান্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গাছগুলো কেবল ঘরের সৌন্দর্যই বাড়ায় না বরং স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো।

ইনডোর প্লান্ট বাতাসকে বিশুদ্ধ করে

নাসার গবেষণায় দেখা গেছে যে ইনডোর প্লান্ট ক্ষতিকারক পদার্থ যেমন কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইডসহ আরও অনেক কিছু দূর করে। এগুলো মূলত মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অসুস্থতা ও অ্যালার্জির কারণ হিসেবে পরিচিত। ঘরে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট যুক্ত করা হলে বাতাসের গুণমান বাড়বে এবং বাতাস আরও পরিষ্কার হবে।

মানসিক চাপ কমায়

সবুজ রঙ দেহ ও মনে প্রশান্তি আনে। চারপাশে গাছপালা এক ধরণের মানসিক শান্তি আনে। তাছাড়া মনের চাপ কমাতে, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ইনডোর প্লান্ট।

গৃহসজ্জা

যদি গৃহের একঘেয়েমি সাজসজ্জা দূর করতে চান, সেক্ষেত্রে ইনডোর প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার। কারণ ইনডোর প্ল্যান্টের রঙ আর আকারে রয়েছে বৈচিত্র্য। বইয়ের শেলফের এক কোণায় ছোট ক্যাকটাস, কিংবা ঘরের কোনো ছোট অংশ ফাঁকা লাগলে বড় সাইজের একটা পাম গাছ ঘরের সৌন্দর্যই বদলে দেবে।

অর্থ সাশ্রয়

গাছপালা আপনার অর্থের একটি ছোট অংশ বাঁচাতে পারে। সাজসজ্জার বাইরেও ব্যবহারিকতা আছে এমন প্রচুর উদ্ভিদ রয়েছে। যেমন, রোদে পোড়া ও চুলের যত্নে ঘৃতকুমারী, রান্নার জন্য অরিগ্যানো, মশা তাড়ানোর জন্য সিট্রোনেলা, খাওয়ার জন্য টমেটো ইত্যাদি। এয়ার ফ্রেশনারের বদলে ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি বা পুদিনা লাগাতে পারেন ।

কয়েকটি জনপ্রিয় ইনডোর প্ল্যান্ট

মানি প্ল্যান্ট

এটি লাকি প্ল্যান্ট হিসেবেও পরিচিত। মানি প্ল্যান্ট বাতাস বিশুদ্ধকারক গাছ। এর বেশ কয়েকটি প্রজাতি পাওয়া যায়, যেমন স্নো হোয়াইট, পেরু, মার্বেল কুইন, নিয়ন ইত্যাদি। ঘরের টেবিলে, কর্নারে, ব্যালকনিতে বা ঝুলন্ত অবস্থায় একে রাখা যায়। ঘরের ব্যাকটেরিয়া জীবাণু শোষণ করে, বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন বাড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এর জুড়ি নেই ।

এরিকা পাম

খুব জনপ্রিয় ও পরিচিত ইনডোর প্ল্যান্ট এরিকা পাম। এলার্জি ও বায়ু দূষণের থেকে রক্ষা করে এই ইনডোর গাছটি। দরজার দুপাশে, জানালার পাশে, ব্যালকনিতে ঘরের কর্নারে খুব সুন্দর লাগে এই গাছ। উচ্চতায় ২ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।

স্পাইডার প্ল্যান্ট

স্পাইডার প্লান্ট ইনডোর প্লান্ট এর মাঝে অন্যতম। নাসা'র মতে এই গাছ ঘরের শতকরা ৯০ শতাংশ দূষিত বাতাস বিশুদ্ধ করে। সরু এই গাছটি সাধারণত ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার রঙ সবুজের মধ্যে সাদা ডোরাকাটা। তবে মাঝে মাঝে শুধু সবুজও হয়। গাছ থেকে বের হয় ছোট ডাল। ডালের মাথায় ফুটে সাদা সাদা ফুল। ফুল থেকে হয় ছোট চারা গাছ।

এলোভেরা

রূপচর্চা থেকে শুরু করে চুলের চর্চা পর্যন্ত প্রায় সব কিছুতেই এর জয়জয়কার। এমনকি ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতেও এলোভেরার অবদান আছে। এটি বাতাসে থাকা বেনজিন, ফরমালডিহাইড দূর করতে খুব কার্যকরী। তবে এলোভেরা সম্পর্কে একটি মজার তথ্য হচ্ছে যখন বাতাসে থাকা ক্ষতিকর কেমিকেলের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যায়, তখন এর পাতায় ছোট ছোট বাদামি দাগ পড়ে যায়। যার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার ঘরে থাকা বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বুঝে নিতে পারবেন।

স্নেক প্ল্যান্ট

পাতার আকৃতির জন্যই এই ধরনের নাম রাখা হয়েছে গাছটির। এটি এক ধরনের বাহারি গাছ। খুব অল্প আলো আর সামান্য পানি পেলেই এরা বেঁচে থাকতে পারে। এই গাছ যদি ঘরে রাখা যায়, তা হলে ঘরে অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না।

লাকি ব্যাম্বো

সোজা বাংলায় চাইনিজ বাঁশ গাছ, যা লাকি ব্যাম্বু নামেও পরিচিত। এটি ঘরের বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে। অনেকগুলো প্রজাতির মধ্যে চাইনিজ ব্যাম্বু নামে পরিচিত গাছগুলো ছোট আকারের হয়। এরা খুব সহজেই কম পরিশ্রম ও পরিচর্যাতে ঘরে রাখা যায়। একটি কাঁচের পাত্রে সামান্য পানিতেই অনেকদিন রাখা যায়। এর থেকে অনেক সিস্টার প্লান্ট এর জন্ম হয়।

পরিচর্যা

ঘরের যে কোনো স্থানেই ইনডোর প্লান্ট রাখা যায়। তবে গাছের জন্য বাতাস দরকার। সৌন্দর্যের পাশাপাশি খোলা বাতাস যেন পায় সেদিকটাও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সপ্তাহে বা ১৫ দিনে একবার রোদে দেওয়া প্রয়োজন হয়। প্লান্টে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, অতিরিক্ত পানি গাছকে মেরে ফেলে,তাই পানি দেবার আগে মাটি হাত দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। বছরে একবার জৈবসার মিলিয়ে মাটি পরিবর্তন করে দিলে গাছ ভালো থাকবে অনেকদিন। পাতায় ধুলো জমলে ভেজা নরম কাপড় দিয়ে পাতাগুলো মুছে দিতে হবে। মরা ডাল-পাতা কেটে দিতে হবে। মাটিকে আলতো খুঁচিয়ে নরম করে দিতে হবে। আর পারলে মাঝে মাঝে স্থান পরিবর্তন করে দিতে হবে। পাতায় ছত্রাকের আক্রমণ হলে গাছটি সরিয়ে ফেলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

কোথায় পাবেন ও দাম কেমন

এলাকার নার্সারিগুলোতে খোঁজ নিয়েই পাবেন বিভিন্ন ধরনের ইনডোর প্লান্ট। যদি অনেক গাছের সমাহার চান তাহলে ঢু মারতে পারেন দোয়েল চত্বর, আগারগাঁও, মিরপুর-২, উত্তরাতে। তাছাড়া ব্র্যাক নার্সারিতে বাহারি রঙের দেশি বিদেশি ইনডোর প্লান্টের সংগ্রহ পাবেন। ৩০ টাকা থেকে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে এই গাছের দাম।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

4h ago