কীভাবে মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করে

ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে সোমবার কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেন্টাগনের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী মিসাইল বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে ইরানি মিসাইলগুলো ভূপাতিত করেছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা এই তথ্য জানান।
গত কয়েক দিন ধরে ইরানের সঙ্গে সংঘাতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করেছে, তার অধিকাংশই ইসরায়েলের অত্যাধুনিক ও বহুস্তরীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করেছে, তবে সবগুলো নয়।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কেন ঠেকানো কঠিন এ বিষয়ে প্রতিবেদন করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একবার কোনো ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়া হলে প্রতিরক্ষার জন্য খুব অল্প সময়—মাত্র কয়েক মিনিট থাকে ডিফেন্ডারের কাছে এর সুনির্দিষ্ট গতিপথ শনাক্ত করে এটিকে ভূপাতিত করার চেষ্টা করার জন্য।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বায়ুমণ্ডল ভেদ করে উপরে উঠে যায় এবং তারপর যখন পৃথিবীর দিকে নামতে থাকে তখন সেগুলোর গতি অনেক বেড়ে যায়।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্যাটেলাইটগুলোকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ফলে তৈরি হওয়া তাপ শনাক্ত করতে হয়। এরপর রাডারগুলোর কাজ হলো ক্ষেপণাস্ত্রটিকে খুঁজে বের করে এর সঠিক গতিপথ হিসাব করা।
এরপর যত দ্রুত সম্ভব একটি প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র যেটাকে ইন্টারসেপ্টর বলা হয় তা ছুড়তে হয়, যেন সময়মতো আসা মিসাইলটিকে গিয়ে আঘাত করতে পারে।
দূরপাল্লার ইন্টারসেপ্টরগুলো আকাশে কাজ করে যেখানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তাদের বেশিরভাগ সময় থাকে। একটি ক্ষেপণাস্ত্র থামানোর এটিই প্রথম সুযোগ তবে বায়ুমণ্ডলের এত উপরে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই।
ইন্টারসেপ্টর এবং শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র— উভয়ই শূন্যে ওঠার জন্য ব্যবহৃত তাদের বুস্টারগুলো ফেলে দেয়। এরপর শুধু দুটি ছোট অংশই থাকে যেগুলো একে অপরের দিকে তীব্র গতিতে ছুটে চলে।
ইন্টারসেপ্টরের লক্ষ্য হলো সরাসরি আঘাত করে ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড (যে অংশে বিস্ফোরক থাকে) ধ্বংস করা। লক্ষ্যবস্তু খুঁজে পেতে এতে থাকে সেন্সর, যা মিসাইলকে শনাক্ত করে আর ছোট ছোট থ্রাস্টার, যা ইন্টারসেপ্টরকে লক্ষ্যভেদে সাহায্য করে। কিন্তু ইন্টারসেপ্টর যখন এক মাইল দূর থেকে তার লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে তখন তার কাছে সমন্বয় করার জন্য মাত্র এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় থাকে।
এর কারণ হলো ইরানের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যখন আকাশে থাকে তখন সেগুলোর নিচের দিকটা প্রায় তিন ফুট চওড়া হয় এবং সেগুলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় দুই মাইল বেগে ছুটতে থাকে।
বায়ুমণ্ডলের ওপরে মিসাইল ইন্টারসেপ্টর কতটা সফল তা পরিষ্কার নয়। যদি কোনো মিসাইল বায়ুমণ্ডলে আবার প্রবেশ করতে সক্ষম হয়, তাহলে আঘাত করার আগ পর্যন্ত প্রায় এক মিনিটেরও কম সময় থাকে।
যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে কাজ করে, যেমন ইসরায়েলের অ্যারো টু বা যুক্তরাষ্ট্রের থাড সিস্টেম— সেগুলোকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাদের ইন্টারসেপ্টর ছুড়তে হয়।
যখন ক্ষেপণাস্ত্রটি মাটির কাছাকাছি চলে আসে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের 'প্যাট্রিয়ট' সিস্টেমের মতো স্বল্প-পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো সেটিকে থামানোর শেষ সুযোগ দেয়। তবে এই সিস্টেমগুলোর পাল্লা প্রায় ১২ মাইল এবং এগুলো শুধুমাত্র সীমিত এলাকা রক্ষা করতে পারে।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো প্রযুক্তিগতভাবে যতই উন্নত হোক না কেন, সেগুলো কিন্তু একেবারে নিখুঁত নয়।
ইসরায়েলের বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, তবুও এটি ইরানের ছোড়া সব ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারেনি। এর ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
আর ইসরায়েলের হাতে সীমিত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরোধী ইন্টারসেপ্টর রয়েছে। এই ইন্টারসেপ্টরগুলো ইরানের মিসাইলের বিরুদ্ধে কতদিন টিকে থাকবে—এই প্রশ্নই এই সংঘাতের ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারে।
Comments