৩১ বার এভারেস্ট জয় করে নিজের রেকর্ড ভাঙলেন নেপালের ‘এভারেস্ট ম্যান’

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া এভারেস্টে ৩১তম বার পা রেখে নিজের গড়া রেকর্ড ভাঙলেন নেপালের পর্বতারোহী কামি রিতা শেরপা।
৫৫ বছর বয়সী এই শেরপা মঙ্গলবার এভারেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে নতুন এই ইতিহাস গড়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।
'এভারেস্ট ম্যান' হিসেবে পরিচিত কামি রিতা প্রথমবার ১৯৯৪ সালে একটি বাণিজ্যিক অভিযানে অংশ নিয়ে এভারেস্টে উঠেছিলেন। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই তিনি পর্বত জয়ের এই কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন।
নেপালের বৃহত্তম অভিযান সংগঠন সেভেন সামিট ট্রেকস এক বিবৃতিতে বলেছে, 'সর্বোচ্চ ৩১ বার এভারেস্ট জয়ের অসাধারণ কীর্তির জন্য কিংবদন্তি কামি রিতা শেরপাকে জানাই অভিনন্দন।'
তারা আরও যোগ করে, 'কামি রিতা শেরপাকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি কেবল নেপালের পর্বতারোহণের জাতীয় নায়কই নন, তিনি এভারেস্টের বৈশ্বিক প্রতীক হিসেবেও পরিচিত।'
২০২৪ সালে ২৯তম ও ৩০তম বারের সফল অভিযানের পর এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কামি রিতা বলেছিলেন, 'আমি কেবল আমার কাজটা করে যাচ্ছি। রেকর্ডের কথা ভাবি না।'
তিনি আরও বলেন, 'রেকর্ড একদিন না একদিন ভাঙবেই। আমি বেশি খুশি এই কারণে যে আমার এই আরোহণ নেপালকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে।'
সেভেন সামিট ট্রেকস জানিয়েছে, এবার তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দলের নেতা হিসেবে অভিযানে অংশ নেন এবং দলের শেষ সদস্যদেরও সফলভাবে শীর্ষে পৌঁছাতে নেতৃত্ব দেন।
যারা পর্বতারোহণকে কেবল ক্রীড়া নয়, জীবনদর্শনের এক নিরীক্ষা মনে করেন, কামি রিতা তাদের কাছে এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।
নেপালের সলুখুম্বু জেলার থামি গ্রামে জন্ম নেওয়া কামি রিতা বেড়ে উঠেছেন হিমালয়ের কোলে। শৈশব থেকেই তার পরিবার শেরপা গাইড হিসেবে কাজ করত, আর তিনিও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পেশাদার শেরপা হয়ে ওঠেন।
তার এই দীর্ঘ পর্বতারোহণ-জীবনে শুধু এভারেস্টই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য উচ্চতম পর্বত যেমন চো ইয়ু, লোৎসে, কাঞ্চনজঙ্ঘা ইত্যাদিতেও সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন।
১৫ দিনের মধ্যে ৪ বার এভারেস্ট জয়ে নতুন রেকর্ড

আরেক নেপালি পর্বতারোহী তাশি গ্যালজেন শেরপা মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪ বার এভারেস্ট জয়ের নজির গড়েছেন। ৮কে এক্সপেডিশনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি সর্বশেষ ২৩ মে পর্বত শীর্ষে পৌঁছান এবং মঙ্গলবার কাঠমান্ডু ফিরে আসেন।
তাশি গ্যালজেন বলেন, 'আমি গর্বিত। কাজটা খুবই কঠিন ছিল, কিন্তু সফল হয়েছি। আগে অনেক কিংবদন্তি বহুবার এভারেস্ট জয় করেছেন, কিন্তু এক মৌসুমেই ৪ বার জয় করার ঘটনা এটিই প্রথম।'
পর্বতারোহণ মৌসুম ও মৃত্যুহার

এবারের বসন্তকালীন পর্বতারোহণ মৌসুম শেষের দিকে। নেপালের পর্যটন বিভাগ জানায়, ইতোমধ্যে ৫০০'র বেশি পর্বতারোহী ও তাদের গাইডরা শীর্ষে পৌঁছেছেন। এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পথে এখন পর্যন্ত শুধু দুইজন পর্বতারোহীর (একজন ফিলিপিনো ও একজন ভারতীয়) মৃত্যু হয়েছে।
চলতি মৌসুমে নেপাল সরকার মোট এক হাজার ১০০র বেশি পর্বতারোহণ অনুমতি দিয়েছে, যার মধ্যে শুধু এভারেস্টের জন্যই ৪৫৮টি পারমিট ইস্যু হয়েছে। সরকার এতে ৫০ লাখ ডলারের বেশি রাজস্ব আয় করেছে।
নেপালের গৌরব ও বাণিজ্যিকীকরণ

নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার সেকশনের পরিচালক হিমাল গৌতম বলেন, 'কামি রিতার এই রেকর্ড শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং নেপালের পর্বতারোহণ খাতকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছে।'
প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে এডমুন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে শেরপার প্রথম এভারেস্ট জয়ের পর থেকে পর্বতারোহণ বিশ্বজুড়ে এক বাণিজ্যিক শিল্পে পরিণত হয়েছে।
গত বছর (২০২৪ সালে) আট শতাধিক পর্বতারোহী এভারেস্ট জয় করেছিলেন, যার মধ্যে ৭৪ জন ছিলেন উত্তর তিব্বতের দিক থেকে।
এছাড়া, চলতি মাসের শুরুতে ব্রিটিশ পর্বতারোহী কেনটন কুল এভারেস্ট জয় করেছেন ১৯তম বার, যা একজন অ-নেপালি হিসেবে সর্বোচ্চ।
Comments