বাগদাদের দেওয়ালে রঙিন ম্যুরালে ঢেকেছে যুদ্ধের ক্ষত

বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা  ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: ডয়চে ভেলে/এএফপি
বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: ডয়চে ভেলে/এএফপি

দীর্ঘ যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে ইরাক। এখনো মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার আশা সুদূর পরাহত। তবে পরিবর্তনের আশায় হাত গুটিয়ে বসে না থেকে রাজধানী বাগদাদের এক শিল্পী পাড়ায় পাড়ায় রঙের ছোঁয়া আনছেন। সেই উদ্যোগ মানুষকে প্রেরণা জোগাচ্ছে।

অনেকে বলছেন, তার এই উদ্যোগে ঢেকে যাচ্ছে দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও অস্থিরতার ক্ষত।

বাগদাদের আল ফাদল এলাকায় যে কোনো এক ধরনের পরিবর্তন চলছে, তা শুধু রঙ ভরা বড় বালতি দেখেই টের পাওয়া যায়। আলি খলিফা ও তার 'বাটারফ্লাই এফেক্ট' নামের শিল্পীসংঘের উদ্যোগে মলিন দেওয়ালগুলো রঙিন হয়ে উঠছে।

বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা  ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত
বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত

রঙিন দেওয়াল চিত্র বা ম্যুরালের মাধ্যমে বাগদাদের অবহেলিত পাড়াগুলোতে প্রাণ সঞ্চার করাই তাদের লক্ষ্য। আলি বলেন, 'কাজের প্রশংসাই আমাকে প্রেরণা জোগায়৷ সৌভাগ্যবশত, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাইনি। এখানকার বয়স্ক ও তরুণদের জন্য এটা নতুন এক অভিজ্ঞতা। কিন্তু তারা আমাদের কাজ পছন্দ করছে বলেই মনে হচ্ছে।'

প্রশ্ন হলো, একটু রঙের ছোঁয়া কি পৃথিবীকে আরো ভালো জায়গা করে তুলতে পারে? আলির মতে, মানুষের ওপর শিল্পকলার প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। তিনি ও তার সতীর্থরা নিশ্চিত যে মানুষ যখন তাদের দেওয়ালে রঙ করতে বলেন, তখন সেটা আর শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা।

বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা  ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত
বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত

আলি খলিফা বলেন, 'এই দেওয়ালের প্রতিটি গর্ত, প্রতিটি চিড়ের পেছনে মর্মান্তিক কোনো স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু বুলেটের গর্তগুলোকে ফুলে পরিণত করে এক বার্তা পাঠানো হচ্ছে। খারাপ সময় পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগোনো সম্ভব।'

এরই মধ্যে এমন আরো ম্যুরালে আলির রঙিন জগত সবার নাগালে চলে এসেছে। মলিন শহরটি যে অনেক প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। শিল্পকলা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। যারা সেই শিল্প সৃষ্টি করছেন, শুধু তারাই নয় – শিল্পসৃষ্টির আশেপাশের মানুষও প্রেরণা পেতে পারেন।

বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা  ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত
বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত

এই শিল্পসংঘ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইরাকের রক্ষণশীল সমাজে প্রায় অদৃশ্য নারীরাও এভাবে নিজেদের ধ্যানধারণা তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন।

কাছের এক পার্কে আলি খলিফা আঁকা শেখাচ্ছেন। তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চান। তার বিশ্বাস, একটি পেন্সিল বা তুলির আঁচড় ঠিক প্রজাপতির পাখার সঞ্চালনের মতো জগতে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করতে পারে।

বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা  ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত
বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত

আলি খলিফা নিজের গোষ্ঠীর নামকরণের ব্যাখা দিতে গিয়ে বলেন, 'বাটারফ্লাই এফেক্ট এক বৈজ্ঞানিক পরিভাষা, এক তত্ত্ব। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি কাজ – তা সে যতই ছোট ও সরল হোক না কেন, সময়ের সমাপ্তি পর্যন্ত প্রভাব রাখে। ভালো কাজ করলে কিছু একটা বেড়ে উঠতে পারে। প্রভাব স্থায়ী হয়। সে কারণে আমরা এই নাম বেছে নিয়েছি।'

আল ফাদাল এলাকায় আলি ও তার দল কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের ম্যুরালের কাজ শেষ করেছেন৷ বাগদাদ শহরে আরো একটি পেইন্টিং যোগ হলো৷ কিন্তু শহরটিকে আরো রঙিন করে তোলার অভিযান চলতেই থাকবে৷ এখনো যে অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা  ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত
বাগদাদেদ দেওয়ালে আলি খলিফা ও বাটারফ্লাই এফেক্টের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত

এসবি

Comments

The Daily Star  | English

Yunus returns home completing 4-day Japan tour

A flight of Singapore Airlines, carrying the CA landed at Hazrat Shahjalal International Airport at 12:15am on Sunday

2h ago