ভূমিকম্পের পর ক্লাসে ফিরে দেখলেন একজন শিক্ষার্থীও বেঁচে নেই

আদাসেলের সেই স্কুলের পুরোনো ছবি। ছবি: সংগৃহীত

এক সপ্তাহ আগেও স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরাই তার সমস্ত চিন্তাজুড়ে ছিল। তাদের সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না সেটি কল্পনাও করতে পারেননি স্কুলশিক্ষক নেসরিন আবু এলফাদেল।

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি ছিলেন মারাকেশ শহরে। সে রাতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মরক্কোর মধ্য অঞ্চলের সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর কর্মস্থল আদাসেল গ্রামে ফিরে তিনি দেখেন, স্কুল ভবন ভেঙে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শিক্ষার্থীদের একজনও বেঁচে নেই।

গত ৮ সেপ্টেম্বর মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাকেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে।

ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে খুব কাছেই আদাসেল গ্রাম। আমাজিঘের ওই গ্রামে শিশুদের আরবি এবং ফরাসি শেখাতেন মিসেস নেসরিন এলফাদেল। ওই গ্রামের বাসিন্দারা তাদের নিজস্ব ভাষা 'তামজাইট' এ কথা বলে। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী ৩২ জন শিশু শিক্ষার্থী তার ক্লাসে ছিল।

'আরবি ও ফরাসি শেখা খুব কঠিন। কিন্তু আমার বাচ্চারা খুব মেধাবী ছিল। তারা দুটি ভাষাতেই প্রায় সাবলীল হয়ে উঠছিল,' বলেন তিনি।

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত স্কুল ভবন। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসিকে তিনি বলেন, 'ভূমিকম্পের পর আমি গ্রামে ফিরেই আমার বাচ্চাদের খোঁজ করলাম। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জানতে পারি তারা সবাই মারা গেছে।'

ক্লাসে হাজিরা খাতা হাতে নিয়ে ভেঙে পড়েছেন মিসেস এলফাদেল। একের পর এক শিক্ষার্থীর নাম লেখা। তালিকায় থাকা ৩২ জনের সবাই এখন শুধু একেকটি নাম হয়ে গেছে। তারা কেউই আর 'ইয়েস ম্যাম' বলে ক্লাসে উপস্থিতি জানান দেবে না।

মিসেস এলফাদেল বলেন, 'আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষার্থী ছিল খাদিজা। তার বয়স মাত্র ৬ বছর। শুনেছি, উদ্ধারকারীরা তার ভাই মোহাম্মদ এবং তার দুই বোন মেনা ও হানানের মরদেহের পাশ থেকে খাদিজার মরদেহ উদ্ধার করেছে। ভূমিকম্পের সময় তারা সবাই সম্ভবত বিছানায় ঘুমাচ্ছিল। ওরা ৪ ভাইবোনই আমার স্কুলে পড়েছে, আমার ক্লাস করেছে।

'খাদিজা ছিল খুব নম্র, স্মার্ট ও চটপটে। সে গান গাইতে পছন্দ করত। প্রায়ই আমার বাসায় আসত। আমার কাছে পড়তে, গল্প করতে পছন্দ করত,' বলেন তিনি।

এই শিক্ষক জানান, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে জীবনযাত্রার নানামুখী সংকট সত্ত্বেও এই শিশুরা ও তাদের পরিবার স্কুলে যাওয়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করতো। শিশুদের মধ্যে প্রবলভাবে শেখার আগ্রহ ছিল।

'আমাদের শেষ ক্লাস ছিল শুক্রবার রাতে, ভূমিকম্পের ঠিক ৫ ঘণ্টা আগে। আমরা মরক্কোর জাতীয় সঙ্গীত শিখছিলাম। সোমবার সকালে পুরো স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শোনানোর কথা ছিল,' বলেন তিনি।

অবর্ণনীয় এই কষ্টকর অভিজ্ঞতায় এখন ট্রমায় ভুগছেন মিসেস এলফাদেল। ছোট শিশুদের এই পরিণতি তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

'আমি ঘুমাতে পারছি না; আমি এখনও এই ধাক্কা সামলাতে পারছি না,' বলেন তিনি।

'আমাকে লোকজন বলতো, আমি ভাগ্যবান। এমন একটি স্কুলে পড়াতে পারছি। কিন্তু এখন আমি জানি না কীভাবে আমি জীবন কাটাবো,' বলেন তিনি।

তিনি আশা করছেন, কর্তৃপক্ষ আদাসেলের স্কুল ভবনটি পুনর্নির্মাণ করবে। আবারও সেখানে শিশুরা পড়তে আসবে।

মরক্কোর সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ভূমিকম্পে মোট ৫৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশিংক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Moody's downgrades Bangladesh's ratings to B2, changes outlook to negative

“The downgrade reflects heightened political risks and lower growth, which increases government liquidity risks, external vulnerabilities and banking sector risks, following the recent political and social unrest that led to a change in government,” said Moody’s.

4h ago