জি-২০’র স্থায়ী সদস্য হিসেবে যোগ দিলো আফ্রিকান ইউনিয়ন
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে জি-২০ এর শীর্ষ সম্মেলন।
আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার দিকে রাজকীয় আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনস্থল 'ভারত মান্দাপাতামে' বিশ্বনেতাদের স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
স্বাগত বক্তব্যের শুরুতেই মরক্কোর ভূমিকম্পের ঘটনায় হতাহতদের প্রতি শোক জানান নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, 'আমরা এই কঠিন সময়ে মরক্কোর পাশে আছি।'
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি জি-২০-এর স্থায়ী সদস্য হিসেবে আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধানকে তার আসন গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
মোদি বলেন, ভারতে ৬০টির বেশি শহরে ২০০টির বেশি বৈঠক হয়েছে জি-২০ নিয়ে। ভারতের প্রস্তাব ছিল আফ্রিকান ইউনিয়নকে যাতে জি-২০ এর সদস্যপদ দেওয়া হয়। পরে সবার সমর্থন নিয়ে আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট অধিবেশনে আসন গ্রহণ করেন।
উদ্বোধনী ভাষণে মোদি বলেন, দিল্লিতে আড়াই হাজার বছর পুরনো একটি স্তম্ভে লেখা রয়েছে মানবজাতির কল্যাণের কথা। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সেই বার্তা আরও বেশি করে বাস্তবায়িত করার জন্য উপস্থিত সবার কাছে আবেদন জানান তিনি। বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে যে বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছিল, যুদ্ধে সেই ক্ষত আরও বড় হয়েছে। আমরা যদি করোনাভাইরাসকে হারাতে পারি, তাহলে এই সংকটও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। এটা সবাই একসঙ্গে মিলে চলার সময়। 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' (সবার সাথে, সবাই নিয়ে উন্নয়ন) এই মন্ত্রই আমাদের পরিচালিত করবে।
সমস্যা যাই হোক না কেন, উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে বিভাজন হোক কিংবা পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব, খাদ্য ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্যা হোক বা সন্ত্রাস, বা সাইবার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি বা পানি সুরক্ষা- আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সব সমস্যার নিশ্চিত সমাধান খুঁজে বের করতে হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে শনিবার সকালে একে একে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তায়িপ এরদোয়ান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানমসহ বিশ্বনেতাদের সম্মেলন স্থলে স্বাগত জানান নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রগতি ময়দানের ভারত মান্দাপাম কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদি। আজ সকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন মোদি।
মোদির সঙ্গে বৈঠকের পরই এক্স হ্যান্ডেলে (টুইটার) পোস্ট করেন জো বাইডেন। তিনি লিখেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী, আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভালো লাগল। আজ এবং জি-২০ সম্মেলনজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক যাতে অটুট থাকে, দুই দেশ যাতে আরও বেশি কাছাকাছি আসে, বাঁধন আরও দৃঢ় হয়, সেটি আমরা নিশ্চিত করবো।'
সম্মেলনের প্রথম পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হলো 'ওয়ান আর্থ'। এরপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ স্কোলজ এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন নরেন্দ্র মোদি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হবে 'ওয়ান ফ্যামিলি'।
আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণে নৈশভোজে যোগ দেবেন রাষ্ট্রনেতারা। নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে। নৈশভোজে যোগ দিতে দিল্লি গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও, আমন্ত্রণ পাননি ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
এবারের জি-২০ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যোগ দেননি।
Comments