জব্দ তালিকায় ৭০ লাখ ডলারের ঘড়ি
সিঙ্গাপুরে ১০০ কোটি ডলার পাচারের ঘটনায় চালানো অভিযানে জব্দ সম্পদের মধ্যে আড়াই লাখ সিঙ্গাপুর ডলার মূল্যের হার্মিস বার্কিন ব্যাগ ও ৭০ লাখ ডলারের প্যাটেক ফিলিপ ঘড়িও আছে।
৩ শিল্পবিশেষজ্ঞ ও এ ধরনের ব্যবহৃত পণ্য পুনরায় বিক্রির ব্যবসা সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, নগদ অর্থ থাকলেও সহজে এই ধরনের বিলাসবহুল পণ্য কেনা যায় না।
সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ১৫ আগস্ট সিঙ্গাপুরে অর্থপাচার ও জালিয়াতির অভিযোগে চীন, তুরস্ক ও কম্বোডিয়ার পাসপোর্টধারী ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইসঙ্গে প্রায় ১০০ কোটি সিঙ্গাপুর ডলার (৭৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার) সমমূল্যের অর্থ, সম্পত্তি, বিলাসবহুল গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার ১০ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। গ্রেপ্তারের পরদিন তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, অর্থপাচার ও গ্রেপ্তার এড়াতে চাওয়ার মতো অভিযোগ আনা হয়। এই ১০ জনের সবাই চীনের ফুজিয়ানের বাসিন্দা।
এই ঘটনায় আরও ১২ জনকে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৮ জন পলাতক ও তাদেরকে ওয়ান্টেড লিস্টে রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানে ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল ব্যাগ ও ঘড়ি জব্দ করা হয়েছে।
বিলাসবহুল ঘড়ি বিক্রেতা ওয়াচ এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপক উইলিয়াম ট্যান সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, জব্দ করা পণ্যের ছবিতে বিপুল পরিমাণ বিলাসবহুল ঘড়ি দেখা গেছে। এগুলোর অনেকগুলোর মূল্যই আড়াই লাখ সিঙ্গাপুর ডলারের বেশি।
'ঘড়িগুলোর মধ্যে সুইস বিলাসবহুল ঘড়ি প্রস্তুতকারক প্যাটেক ফিলিপের স্কাই মুন ট্যুরবিলন মডেলটিও আছে বলে মনে হচ্ছে। বাজারে পুনরায় বিক্রি করলে এর দাম ৭০ লাখ সিঙ্গাপুর ডলারেরও বেশি হবে,' বলেন তিনি।
দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্লভ মডেলের এই ঘড়িটি চলতি বছরের শুরুতে নিলামে তুললে তা রেকর্ড ৫৮ লাখ মার্কিন ডলারে (৭৮ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার) বিক্রি হয়েছিল।
বিলাসবহুল ঘড়ি ও ব্যাগ বিক্রেতারা সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, আগ্রহী ক্রেতারা শুধু দোকানে গেলেই এসব পণ্য কিনতে পারবেন না। এমনকি, তাদের কাছে নগদ অর্থ থাকলেও না।
'জনপ্রিয় এই মডেলগুলোর জন্য ক্রেতাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়' উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, যখন কোনো মডেল পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তারাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হন, যারা এর আগেও নিয়মিত এই ধরনের পণ্য কিনে থাকেন।
জব্দ সম্পদের মধ্যে রিচার্ড মিল আরএম ০৭-০২ মডেলের একটি ঘড়ি আছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে, যার সঙ্গে একটি স্যাফায়ার রংয়ের ক্যাসও আছে। বাজারে পুনরায় বিক্রি করতে গেলে এই ঘড়িটির দাম হবে প্রায় ২০ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার।
ট্যান জানান, এই মডেলের ঘড়ি ব্যবহারের আকাঙ্ক্ষা অনেকেরই। ২০২১ সালে মার্কিন র্যাপার নিকি মিনাজের হাতে এই ঘড়িটি দেখা গিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, জব্দ ঘড়িগুলোর ছবিতে রোলেক্স ডেটোনা রেইনবো মডেলের ঘড়িও দেখা গেছে। পুনরায় বিক্রির ক্ষেত্রে এই মডেলের ঘড়ির মূল্য ৬ লাখ সিঙ্গাপুর ডলারেরও বেশি, যা ঘড়িটির খুচরা মূল্যের ৩ গুণেরও বেশি।
ট্যানের ভাষ্য, জব্দ সম্পদের ছবির মধ্যে একটি ছবিতে ৩২টি ঘড়ি দেখা গেছে, যেগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি সিঙ্গাপুর ডলারের মতো। আর অন্যান্য ব্র্যান্ডের ঘড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে চপার্ড, ভ্যান ক্লেফ অ্যান্ড আর্পেলস ও কার্টিয়ার।
জব্দ করা ব্যাগগুলোর দামও কয়েক লাখ সিঙ্গাপুর ডলার হবে বলে দ্য স্ট্রেইটস টাইমসকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
ছবিতে হার্মিস বার্কিন, চ্যানেল, ডিওর, লুই ভুইতোঁ ও প্রাডা ব্র্যান্ডের ব্যাগ দেখা গেছে। এগুলোর মধ্যে কিছু ব্যাগের দাম ১ লাখ সিঙ্গাপুর ডলারেরও বেশি।
ব্যবহৃত বিলাসবহুল ব্যাগ পুনরায় বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যবসায়ী জানান, জব্দ সম্পদের ছবিতে হার্মিস বার্কিনের একটি বিলাসবহুল ব্যাগও দেখা গেছে, যার দাম প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, যদি ব্যাগটিতে হিরা থাকে, তাহলে এর দাম আড়াই লাখ সিঙ্গাপুর ডলার বা এর দ্বিগুণও হতে পারে।
Comments