জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতা বাতিল করে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে হবে: মাহাথির
পৃথিবীর ৮০০ কোটি জনসংখ্যা অনেক বেশি উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ বলেছেন, সরকারগুলো জনবিস্ফোরণ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে।
তার ভাষ্য, অতিরিক্ত এই জনসংখ্যার বর্জ্যে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছি।
আজ শুক্রবার মালয়েশিয়ার লঙ্কাভিতে 'সোশ্যাল বিজনেস ডে ২০২৩' অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে কথাগুলো বলেন মাহাথির বিন মোহাম্মদ। গতকাল থেকে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনের এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় 'ওয়ার, পিস অ্যান্ড ইকোনমিকস—ফিউচার অব হিউমেন বিয়িংস' বা 'যুদ্ধ, শান্তি ও অর্থনীতি—মানব জাতির ভবিষ্যৎ'।
আয়োজনের শেষ দিনে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় এক চীন নীতির কথা বলে তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ হিসেবে গণ্য করত দেশটি। অতীতে পশ্চিমা প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের ফলে তা থেকে তারাই লাভবান হতো। তবে এ নিয়ে আগে বর্তমান সময়ের মতো যুদ্ধের উপক্রম লক্ষ্য করা যায়নি।
ফলে আমাদের সবারই এখন যুদ্ধ দেখতে প্রস্তুত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইউক্রেনের যুদ্ধ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রক্সি যুদ্ধের সর্বশেষ উদাহরণ উল্লেখ করে ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ আরও বলেন, চীন যদি একইভাবে যুদ্ধের উসকানির ফলে নিজেকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে, তাহলে তাতে দিনশেষে পশ্চিমা স্বার্থই রক্ষা পাবে।
জাতিসংঘে ৫ দেশের ভেটো ক্ষমতাকে 'অগণতান্ত্রিক' উল্লেখ করে এই মুহূর্তে নতুন 'গণতান্ত্রিক বৈশ্বিক সরকার' গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষা ও সংঘাতের অবসান ঘটানোর উপায় খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তার মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ এবং পারমানবিক বোমা ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
বক্তব্যে ড. ইউনূস 'জিরো-ওয়েস্ট' (বর্জ্য উৎপাদনকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা) উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, 'আমরা জিরো-ওয়েস্ট পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারলে পৃথিবীকে বাঁচানোর কোনো উপায় নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা ভিন্ন আচরণ, কাজ ও জীবনযাপন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। একটি চক্রাকার অর্থনীতি গড়ে তোলার মাধ্যমে জিরো-ওয়েস্ট নিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজটি শুরু করতে হবে।'
'এই সম্পর্কের মধ্যে গোলকধাঁধা দেখা দেওয়াতেই মানুষের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে গেছে, মানুষ এখন সমাপ্তির পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছে—যেখানে তার ইতিরেখা দেখা যাচ্ছে, বেশি দূরে নেই', যোগ করেন তিনি।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন ২৮ জুন। তিনি জন্মদিন পালন করেন না। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২৭-২৮ জুন ইউনূস সেন্টারের উদ্যোগে উদযাপন করা হয় 'সোশ্যাল বিজনেস ডে'। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন দেশে দিবসটির আয়োজন করা হয়। যে দেশে উদযাপন করা হয়, সে দেশের এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকে মূল আয়োজক। সহযোগিতা করে ইউনূস সেন্টার।
এবারের আয়োজক দেশ মালয়েশিয়ায় 'সোশ্যাল বিজনেস ডে'র মূল আয়োজনটি করছে 'আলবোখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি'। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ড. ইউনূস। এ বছর কোরবানির ঈদের কারণে জুনের পরিবর্তে ২৭-২৮ জুলাই দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। পৃথিবীর প্রায় ৩১ দেশ থেকে ছয় শর বেশি অতিথি এবারের আয়োজনের অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন কলামিস্ট ও অ্যাক্টিভিস্ট মেরিনা মাহাথির, নারায়ণ হৃদয়ালয়ের চেয়ারম্যান ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী লেমা বোউই, পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হোসে রামোস হোর্টা, ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী মেরিনা সিলভাসহ আরও অনেকে। এবারের রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল ২৫০ ডলার।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান ইউনুস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদ এবং আলবোখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক দাতো ড. আবদ আজিজ তাজউদ্দীন।
Comments